রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ও কঠোর শর্তে যশোরের বেনাপোল বন্দরে কয়েক মাস ধরে ভারত থেকে চাল, গম ও পেঁয়াজের মতো তিনটি প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য আমদানি বন্ধ রয়েছে। যেকোনো সময় চিনি আমদানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের আমদানি কমে যাওয়ায় দেশের বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, দাম বাড়ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে।
চলতি বছরের ২০ জুলাই ভারত সিদ্ধ ও রান্না না করা চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। পরবর্তীতে ১৯ আগস্ট পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেশটি। রপ্তানি মূল্য ২৬ আগস্ট থেকে প্রতি মেট্রিক টন ১৫০ থেকে ৩৫০ ডলারে বেড়েছে।
চলতি মাসের যেকোনো দিন চিনি রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে পারে দেশটি। চলমান এসব বাধার কারণে আমদানিকারকরা চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আমদানি করতে পারছেন না। সরবরাহ ঘাটতি ও সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে এসব পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকালে বেনাপোল বন্দর এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে বাজারে স্বর্ণা চাল কেজি প্রতি ৫০ টাকা যা ৬ মাস আগে ছিল ৪৭ টাকা, মিনিকেট ৫৭ টাকা যা আগে ছিল ৫৪ টাকা, কাজল লতা ৫২ টাকা। আগে যা ছিল ৫০ টাকা, বাসমতি ৭৪ টাকা। যা আগে ছিল ৭০ টাকা আর চাল ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাধারণ ক্রেতাদের মতে, ভারত থেকে নিত্যপণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে। চিনি, পেঁয়াজ ও গমের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। এভাবে চলতে পারে না।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য গত বছরের ২২ থেকে ২৩ তারিখ নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও ডাল আমদানিতে বার্ষিক কোটা চেয়েছে বাংলাদেশ। কোটা পাওয়া গেলে যখন-তখন বাংলাদেশে এসব পণ্য রফতানি বন্ধ বা মূল্য বৃদ্ধির কবলে পড়বে না। দ্রব্যমূল্য আরও সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এবং খাদ্য ঘাটতি কমবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তবে দীর্ঘদিন পরও এ চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৬৯ হাজার ৪৪৩ মেট্রিক টন চাল, ৮৫ হাজার ৭০২ মেট্রিক টন গম, ১৫ হাজার ২৯৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এবং মাত্র ২৫০০ মেট্রিক টন চিনি আমদানি হয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে চাল, চিনি, পেঁয়াজ ও গম আমদানি হচ্ছে না।
দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ৩.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন, কিন্তু উৎপাদিত হয় মাত্র ২৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন। চাহিদা মেটাতে ৭ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, দেশে গমের উৎপাদন ১১ টন এবং চাহিদা ৫ টন। চাহিদা মেটাতে প্রায় ৪০ টন আমদানি করতে হয়। ৭ মাস আগে গমের দাম ছিল ২৮ টাকা, এখন বেড়েছে ৫৭ টাকা কেজি। এছাড়া ১৮ থেকে ২০ লাখ টন চিনির চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১ লাখ টন। ৮০ টাকার চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা পর্যন্ত। দীর্ঘদিন খাদ্যপণ্য আমদানি বন্ধ থাকলে আগামী বছর বাজারে দাম আরও বাড়বে এবং খাদ্য সংকটে পড়তে হবে।
বেনাপোল স্থলবন্দর সংক্রমণ প্রতিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার জানান, সাত মাস ধরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে চাল, গম ও চিনি আমদানি করা হচ্ছে না। পেঁয়াজের স্বাভাবিক আমদানি বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। ৮ মাস আগে একবার চিনি আমদানি হয়েছিল। এরপর থেকে আর আসেনি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বিপুল জানান, বার্ষিক কোটা চুক্তির আওতায় ভারতে ৪.৫ মিলিয়ন টন গম, ২.২ মিলিয়ন টন চাল, ৭ মিলিয়ন টন পেঁয়াজ, ১.৫ মিলিয়ন টন চিনি ১.৫ মিলিয়ন টন আদা ডাল ৩০ হাজার টন ও ১০ হাজার টন রসুনের অনুরোধ করা হয়েছে। এর আগে ভারত প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটানকে কোটা সুবিধার আওতায় পণ্য আমদানির সুযোগ দিয়েছিল। ভারতের সাথে দৈনিক পণ্য কোটা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্তমানে আমাদের দেশের যেকোনো খাদ্য সংকট সমাধান করা সম্ভব। তারা আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু।আশা করছি বাণিজ্য সহজ করতে তারা পাশে থাকবে।