মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচিত বৈঠকটি কেন সফল হয়নি? এ নিয়ে ঢাকা ও ওয়াশিংটনে চলছে নানা আলোচনা। বলা হয়, শেখ হাসিনা আমেরিকানদের কিছু বিষয়ে একমত ছিলেন না। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে তার মতামত সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জ্যাক সুলিভান একা নন, এফবিআই কর্মকর্তাসহ আরও তিনজন বৈঠকে ছিলেন। বৈঠকটি প্রথমে গোপন রাখা হয়েছিল। সাত দিন পর হোয়াইট হাউস এটি প্রকাশ করে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কৌশলগত যোগাযোগ সমন্বয়কারী জন কিরবি নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এমন বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বৈঠকে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন তার মধ্যে অন্যতম।
তবে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। শুক্রবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বৈঠকের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমে সাড়া পড়েগিয়েছিল যে সমঝোতা হয়ে গেছে। দেশের একটি সংবাদ মাধ্যম অবশ্য প্রথম বৈঠকের ছবি প্রকাশ করেছে। ঘন্টাব্যাপী বৈঠকের বিষয়গুলি অজানা থেকে যায়। পত্রিকাটি বিভিন্ন সূত্রে বৈঠকের কিছু খবর জানতে পেরেছে। বৈঠকের শুরুটা ছিল অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ। আলোচনার মাঝখানে একটি বিষয় ভেঙে যায়। তবে প্রধানত চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এক. বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিরোধী দল বলছে, তারা নির্বাচনকালীন তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অংশ নেবে না। পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে। জ্যাক সুলিভান তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব জানতে চান। তখন বলা হয়, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে তার সায় নেই। নির্বাচন হতে হবে সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধানের বাইরে গিয়ে তার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়।
দুই. কারাবন্দি বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা আশ”ঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর দাবি উঠেছে তার দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে। এ বিষয়ে সরকারের মতামত কী? এ বিষয়ে তাকে নিয়মের বিপরীতে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নত হাসপাতালে সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়া হচ্ছে। সাধারনত কোন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে এ ধরনের সেবা প্রদান করা হয় না। তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে। আলোচনার একপর্যায়ে আবারও বিষয়টি সামনে আসায় তিনি তা বিবেচনা করবেন বলে জানানো হয়।
তিন. নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের প্রসঙ্গটি বেশ কয়েকবার আলোচিত হয়েছে। কেন তার বিরুদ্ধে এত মামলা রয়েছে তা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়। কেন তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে? বিশ্ব নেতারা তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ বিষয়ে এখনো কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জ্যাক সুলিভান। তখন জানানো হয় তার সঙ্গে আইনের বাইরে কিছু করা হচ্ছে না। নির্যা”তন বা হয়রানির প্রশ্ন উঠছে কেন? জ্যাক সুলিভান মার্কিন সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায় অধ্যাপক ইউনূস যেন দমন-পীড়নের শিকার না হন।
চার নম্বর খুবই সংবেদনশীল। নানা কারণে আলোচনা ভিন্ন মোড় নেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র দাবি করেছে, আলোচনার সময় হঠাৎ করেই ‘নেগোসিয়েশন’ শব্দটি উঠে এসেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। আইন চলবে তার নিজস্ব গতিতে। এখানেই আলোচনা থেমে যায়। বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি, জলবায়ু ও রোহি”ঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।