আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আগামী নির্বাচন নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, ‘আবারও তারা (সরকার) বলতে শুরু করেছে আমরা নির্বাচন করব, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করবো, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করে একই কথা বলেছেন। এসব মিথ্যা কথা বলে, প্রতারণা করে, খালি মাঠে যাকে বলি ওয়াক ওভার নিয়ে আবারও সরকার গঠন করতে চায়। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে এটা করতে বাধা এসেছে। বলেছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন চলবে না, এবার একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ওই নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে হবে না, সম্ভব না। কথা একটাই- এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।’
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে কালভার্ট রোডেম ‘গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে’ সংহতি সমাবেশে ফখরুল এসব কথা বলেন।
নুরুল হক নূরের নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদ (একাশ) এ সমাবেশের আয়োজন করে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্ত্বেও হাজার হাজার নেতাকর্মী এতে অংশ নেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আজ এক ভয়াবহ সংকটের সম্মুখীন হয়েছি। দেশে এমন একটি সরকার, যারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও ছলচাতুরি করে দুটি নির্বাচনে কোনো ভোটারের উপস্থিতি ছাড়াই নিজেদের জয়ী ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করে আছে। ২০২৪ সালে যে নির্বাচনে তারা আবারও একই কায়দায় নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তার কথায় নির্বাচনে গিয়েছিলাম। তিনি জাতির সামনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যারা নির্বাচনে আসবে, তাদের সমান সুযোগ দেওয়া হবে, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হবে, তফসিল ঘোষণার পর কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না, নির্বাচন হবে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণসহ পৃথিবী দেখেছে সেই নির্বাচন ভোটের আগের রাতে হয়ে গেছে।’
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) বলেছেন, খেলা হবে। কী খেলবেন, কার সঙ্গে খেলবেন? তার সঙ্গে যারা খেলে তাদের সবাইকে জেলে পাঠাচ্ছেন তিনি। পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে বিরোধী দল, বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সাড়ে চার লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে, হাজার হাজার মানুষকে বিনা বিচারে হ”ত্যা করেছে। সংবাদপত্রে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে যত মামলা এসেছে- যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরবের বিরুদ্ধে ৪৫০টি মামলা, যুবদলের বর্তমান সভাপতি সালাহ উদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ৩০০টি মামলা, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ১৫০টি মামলা, সব নেতার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এবং কর্মীরা। এএমনকি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা, আমার বিরুদ্ধে আছে ৯৮টি মামলা, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সব নেতাদের বিরুদ্ধে একই রকম মামলা। এত বছর এই মামলাগুলো ফেলে রেখেছিল। এই মামলাগুলো এত বছর পেছনে পড়ে ছিল। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে অতিদ্রুত এ মামলাগুলো নিষ্পত্তি করে সাজা দিতে বিশেষ সেল তৈরি করা হয়েছে। তারা নির্দেশ দিয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারকদের দ্রুত মামলাগুলোর বিচার শেষ কর। দুই মাসের মধ্যে শেষ কর। পুলিশকে বলেছে, যেগুলো চার্জশিট হয়নি, সেগুলোর অতিদ্রুত চার্জশিট কর। এটার নাম হচ্ছে তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একযোগে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ঐক্য গঠন করেছি। আমি সরকারকে স্পষ্টভাবে বলেছি, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, চাটুকার নির্বাচন কমিশনকে বিলুপ্ত করতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তাদের মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে।
তারা খালেদা জিয়াকে হ”ত্যার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, দেশের নেত্রীকে হত্যার চিকিৎসা না দিয়ে তারা এমন কথা বলছে যা বলা যায় না, অশোভন ও অপ্রীতিকর। আপনি যে তার মৃত্যু চান, তাকে হত্যা করতে চান -এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে আপনার বক্তব্যে। বাঁচানোর মালিক আল্লাহ। পরিষ্কার করে বলতে চাই, এবার আপনাকেও গুনতে হবে। আপনি কতদিন টিকে থাকবেন এই ক্ষমতায়। জনগণ আপনাকে টেনে হিঁচড়ে নামাবে।’
গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরের সভাপতিত্বে ও ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেনের সঞ্চালনায় সংহতি সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, রিপাবলিকান পার্টির কেএম আবু হানিফ, গণঅধিকার পরিষদের মুহাম্মদ রাশেদ খান, আবু হানিফ, শাকিলউজ্জামান, হানিফ খান সজিব, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, ফাতেমা তাসনিম, আব্দুজ জাহের, অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, আব্দুর রহমান, নিজাম উদ্দিন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আবদুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের আরিফুল হক প্রমুখ।