Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / নির্বাচনের আগে ভিসা নিষেধাজ্ঞা, ভিন্ন এক তথ্য এলো সামনে, তবে কী কৌশল নিল যুক্তরাষ্ট্র

নির্বাচনের আগে ভিসা নিষেধাজ্ঞা, ভিন্ন এক তথ্য এলো সামনে, তবে কী কৌশল নিল যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে আসন্ন নতুন বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে। আসন্ন নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন বলেছে যে মার্কিন প্রশাসন “নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক” নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উপর চাপের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়ায় বাংলাদেশ ও পশ্চিমাদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।

রোববার (১ অক্টোবর) ব্রিটেনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে। প্রতিবেদনটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদক বেঞ্জামিন পারকিন দ্বারা প্রস্তুত করা হয়েছিল। তিনি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে লেখেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন। তিনি তার রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালিয়েছেন, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাকে খর্ব করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এগুলো (সম্ভাব্য) জানুয়ারির নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করারই প্রচেষ্টা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত মাসে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করতে অনির্দিষ্ট সংখ্যক বাংলাদেশির উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ব্রিটেনও ‘অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচন নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার সরকারকে চাপ দিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার পশ্চিমাদের (এমন) তীব্র সমালোচনার বিরোধিতা করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ভিসা নীতি ওয়াশিংটনের ‘বিশেষ ক্ষমতা’। তবে গত মাসে ঢাকায় ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ‘বিল্ড আপ’ নির্বাচনের সমালোচনাকে ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দেন। তিনি একে ইরাক এবং অন্য জায়গায় পশ্চিমা হস্তক্ষেপের সাথে তুলনা করে বলেছিলেন, ‘ইরাকের দিকে দেখুন, মিথ্যা প্রচারণার নামে (সেখানে) কি করলেন?’ তিনি বলেন, পশ্চিমাদের কেউ কেউ বাংলাদেশে ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি’ করতে চায়।

ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পর, মোমেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন যে, তিনি বিশ্ব নেতাদের বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে “তথ্যগুলি সঠিকভাবে পরীক্ষা করার জন্য” অনুরোধ করছেন।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন তিনি বলেছিলেন, “দুর্ভাগ্যবশত, মানুষের কাছে এখন তেমন সময় নেই। মানুষের পড়ার অভ্যাসও নেই।

তা সত্ত্বেও তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে সম্পর্ক ‘খুব ভালো’ বলেও মন্তব্য করেন।

(এভাবে) সম্পর্কের যে কোনো ধরনের উত্তেজনা আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শেখ হাসিনা ১৭ কোটি মানুষের দেশটিকে উন্নয়নের সাফল্য হিসেবে প্রচার করতে চেয়েছেন, মূলত দেশটির বিশাল পোশাক খাতকে নিয়ে যা কিনা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে রপ্তানির উপর নির্ভর করে। ভারত এবং চীনের সাথেও তিনি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।

কয়েক দশক ধরে, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি প্রায়শই শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মধ্যে রক্তক্ষয়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিণত হয়েছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ কম ছিল, সেগুলোর বিরুদ্ধে নির্বাচনি কারচুপির অভিযোগ ছিল।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বলেছে যে, ‘যেখানেই আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারকে ক্ষুণ্ন করে এমন কর্মকাণ্ড দেখি, সেখানেই উদ্বেগ’কে প্রতিফলিত করে এই ভিসা পেনাল্টি।

তারা আরও বলেন, তারা বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনভাবে নিজেদের নেতৃত্ব নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করেন।

এর আগে ২০২১ সালে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলি বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) লক্ষ্য করে। এই পুলিশ ইউনিটের বিরুদ্ধে নিখোঁজ ব্যক্তি ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক উইলসন সেন্টারের সিনিয়র সহযোগী মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, নির্বাচনের জন্য ওয়াশিংটনের চাপ স্বৈরাচারী সরকারের বিকল্প হিসেবে গণতন্ত্রের প্রচারের মাধ্যমে চীনের প্রভাব সীমিত করার একটি আঞ্চলিক কৌশলের অংশ।

তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশকে তার মূল্যবোধ-ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি টেস্ট কেস বানিয়েছে। এটা একটা বড় ধরনের জুয়া… যদি ঢাকা অনুভব করতে থাকে যে, সে ক্রমবর্ধমানভাবে ওয়াশিংটন দ্বারা বাক্সবন্দী হচ্ছে, তবে সে চীনের কাছাকাছি যেতে প্রলুব্ধ হতে পারে।

কুগেলম্যান বলেন, ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার জন্য একটি অস্তিত্বের সমস্যা হতে পারে, যিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকেও শাসন করেছেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপির সিনিয়র নেতারা আইনি মামলার শিকার হয়েছেন, দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে হয়তো তারা প্রতিহিংসার রাজনীতির প্রচণ্ড প্রচারণার শিকার হবে। . . .অনেকটা এই শাসক দল বিরোধীদের সাথে যা করেছে তার মতো। আওয়ামী লীগ নেতারা যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে বদ্ধপরিকর হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি তাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।’

About bisso Jit

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *