বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে আর কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই।
সোমবার (২ অক্টোবর) মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, খালেদা জিয়ার ছোট ভাই বিদেশে চিকিৎসার জন্য আবেদন করেছিলেন। চিঠি পাওয়ার পর আইনি জটিলতায় থাকায় আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয় থেকে যে মতামত এসেছে তা সম্ভবত তাদের পক্ষে আসেনি। আর আইন মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের বলা হয়েছে অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমার মনে হয় এখন আর কিছু করার নেই।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেদিন থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন। পরে হাইকোর্ট সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দু/র্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আরও সাত বছরের সাজা হয়।
২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রাদুর্ভাবের পরে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। এরপর প্রতি ছয় মাস অন্তর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। অবশেষে ১২ সেপ্টেম্বর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়।
কারাগার থেকে গুলশানে বাসায় ফেরার পর কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন। একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছেন তিনি।
৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া হৃদরোগ ও লিভার সিরোসিসে ভুগছেন। এছাড়া তার বাত, ডায়াবেটিস, দাঁতের ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে। এরই মধ্যে তিনি বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রামে তার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। তার একটিতে রিং পরানো হয়।
প্রায় দুই মাস আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপারসন। সেখানেও তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সিসিইউতে।তখন তিনি এখনও হাসপাতালেই আছেন।
শারীরিক অবস্থার কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ভাই আবেদন করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মতামতের জন্য তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই দুই দলের নেতাদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দিতে পারে বলে গুঞ্জন ছিল। এসব গুজবের মধ্যে গতকাল আইন মন্ত্রণালয় তাদের মতামত দিয়েছে। সেখানে তারা খালেদার আবেদনে সাড়া দেননি।
সোমবার এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খালেদার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আর কিছু করার নেই।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদকের রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দেয়নি মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, অপরাধ ও শাস্তি এটা কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। আমাদের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সেখানেও আমাদের কোনো কর্তৃত্ব নেই। আইন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া মতামত আপনাদের জানিয়েছি। এর বাইরে আমাদের কিছু করার নেই।
ভিসা নীতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ভিসা নীতিমালা সংক্রান্ত কোনো তালিকা সরকারের কাছে আসেনি।
এ সময় সমাবেশ করতে বিএনপিকে আইন মেনে চলার পরামর্শ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।