ফরিদপুর জেলার সদরপুরে অর্ধবয়সি এক কলেজছাত্রী ভাতিজিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে পালিয়ে বিয়ে করেছে দুই সন্তানের জনক চাচা। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলে ভাতিজারা ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত চাচাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। বর্তমানে তিনি ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সোমবার (২ অক্টোবর) সকালে ওই এলাকায় গিয়ে স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, ওবায়দুর ও স্বর্ণা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজি। ওবায়দুরের বাবা এবং স্বর্ণার দাদা আপন ভাই। তাদের এমন সম্পর্ক হবে কেউ কখনো ধারণাও করতে পারেনি। এটি সমাজে একটি ঘৃণ্য কাজ এবং সমাজ কখনই মেনে নেবে না।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কাজিরডাঙ্গী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত চাচা কাজী ওবায়দুর রহমান (৪০) ওই গ্রামের মৃত ইমদাদ কাজীর ছোট ছেলে এবং তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে।
জানা যায়, ভাতিজি স্বর্ণার সঙ্গে গত ৪ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে চাচা ওবায়দুর কাজীর। অনার্স পড়াশুনার সুবাদে দুই বছর আগে ফরিদপুর শহরের একটি মেসে থাকতে শুরু করেন স্বর্ণা আক্তার। এ উপলক্ষে ওবায়দুর স্বর্ণাকে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যেতেন। এরপর থেকে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। এক পর্যায়ে তিন মাস আগে ওবায়দুরকে নিয়ে পালিয়ে ঢাকায় চলে যায় সে। এরপর মেয়ের পরিবারের সন্দেহ হলে স্বর্ণার বাবা কাজী সেলিম বাদী হয়ে ওবায়দুরকে একমাত্র আসামি করে ২৪ জুলাই ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। তারপর তারা বলে যে তারা বিয়ে করেছে।
এ ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার দুপুরে সেলিম কাজীর ছেলে নিশাত (১৮) ও তার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে ইমন কৃষি কাজ করার সময় ওবায়দুরের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তার দুই পা ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে জখম করা হয়।
শনিবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওবায়দুর কাজী জানান, আমার দুঃসম্পর্কীয় এক আত্মীয়ের মেয়ের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আমরা দু’জনে বিয়েও করেছি। বর্তমানে আমরা সংসার করছি। কিন্তু বৃহস্পতিবার আমার স্ত্রীর দুই ভাই আমার উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়েছে।
স্বর্ণার বাবা সেলিম কাজী বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি ওবায়দুর এমন কাজ করবে। বাড়িতে প্রায়ই কথা বলতে দেখে তারা কখনোই ভাবেনি যে তারা সম্পর্কে জড়াচ্ছে। এটা কিভাবে সন্দেহ করা যায়। কারণ সে চাচা এবং বিবাহিত। সে (ওবায়দুর) আমার মেয়ের ও আমাদের ক্ষতি করেছে।আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না।লোকেরা অনেক কথা বলছে। আমার ছেলের বন্ধুরা তাকে খারাপ বলছে।হ য়তো কথাগুলো সহ্য করতে পারেনি তাই। যে কারণে ওবায়দুরকে মারধর করেছে। এটাই আমাদের অপরাধ।
তিনি বলেন, ভাতিজির সঙ্গে চাচার কেমন প্রেম করছেন? এখন শুনলাম তারা বিয়ে করেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
এ প্রসঙ্গে স্বর্ণার মা বলেন, স্বর্ণা আমার খুব আদরের মেয়ে। কত কষ্টে তাকে বড় করেছি। আমরা কিভাবে বিশ্বাস করব যে একজন চাচা তার ভাগ্নীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করবেন। সে (ওবায়দুর) আমার কলিজা ছিঁড়ে ফেলেছে। আমার ছেলে আমাকে বলত, মা আপুকে নিয়ে আমাদের কত স্বপ্ন ছিলো। এখন আপুইতো আমাদের চিনে না। আমার ছেলে হয়তো এগুলো সহ্য করতে পারেনি, ওর বোনকে এভাবে নিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ওবায়দুরকে মারধর করার পর ওর (ওবায়দুর) ভাগ্নে চরচাঁদপুর গ্রামের হেদায়েত, শোয়েব, ইব্রাহিম, সিরাজ সহ কয়েকজন প্রকাশ্যে চাপাতি নিয়ে আমাদের বাড়ির চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। আমার ছেলেকে ওরা যেখানে পাবে সেখানেই নাকি মেরে ফেলবে। এখন আমি আমার ছেলেকেও হারাতে চাই না, মেয়েতো হারিয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের এক স্বজন জানান, স্বর্ণাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওবায়দুর। তাদের বয়সের পার্থক্য ২০ বছর।