বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে গতকাল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই।
আইনমন্ত্রী বলেন, আইনের ৪০১ ধারার কোনো দরখাস্ত একবার যদি নিষ্পত্তি হয়ে যায়, নিষ্পত্তি করা আবেদনটি পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই। আমরা ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ উপধারা ব্যাখ্যা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমাদের মতামত পাঠিয়েছি। সেখানে আমরা মতামত দিয়েছি যে ধারা ৪০১ এর অধীনে নিষ্পত্তি করা আবেদনটি একটি অতীত এবং ক্লোজ ট্রানজেকশন, এটি খোলার অন্য কোন উপায় নেই।
তবে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলছেন, খালেদা জিয়া এখন যে অবস্থায় আছেন সেই অবস্থায় রেখে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। আইনে সেই সুযোগ রয়েছে।
তিনি জার্মান ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলেকে বলেন, আইনমন্ত্রী বলছেন যে আবেদনটি নিষ্পত্তি হয়েছে, আইনে আর কিছু করার নেই, তাই আমার প্রশ্ন কোন আইনে তার মুক্তির মেয়াদ আরও আটবার বাড়ানো হয়েছে? এটি বন্ধ হলে ছয় মাসের মধ্যে তার মুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যেত।
ধারা ৪০১ এর আইনমন্ত্রীর দেওয়া ব্যাখ্যার সাথে একমত না হয়ে এই আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, আসলে ধারা ৪০১ বলে যে সরকার শর্ত সাপেক্ষে বা নিঃশর্তভাবে কারও সাজা মওকুফ বা স্থগিত করতে পারে। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত ও শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এখন তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। অথবা বলা যায় প্রয়োজনে তিনি চিকিৎসা নিতে পারেন। এ জন্য তাকে আবার কারাগারে গিয়ে আগের আদেশ বাতিলের আবেদন করতে হবে না। তাহলে সরকার যদি এতবার তার সাজার মেয়াদ বাড়াল? আর হ্যাঁ, বিদেশে চিকিৎসা শেষে এক মাসের মধ্যে দেশে ফিরবেন এমন শর্ত দেওয়া যেতে পারে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়।২৫ মার্চ ২০২০-এ তাকে ছয় মাসের জন্য নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এবং তাকে কারাগারের বাইরে নিজ বাড়িতে রাখা হচ্ছে। এ পর্যন্ত তার প্যারোলের মেয়াদ আটবার বাড়ানো হয়েছে।
বিএনপি আদালতে যাবে না
বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার ব্যাপারে সরকারের শীর্ষস্থানীয়দের মনোভাব বলছে, আদালতে গিয়ে কোনো লাভ হবে না। উল্টোটা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই এ মুহূর্তে আদালতে কোনো আবেদন করা হবে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এটা রাজনৈতিক প্র/তিহিংসা ছাড়া আর কিছুই নয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সরকার শুরু থেকেই খালেদা জিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে আটকে রেখেছে। তারা চায় খালেদা সারাজীবন এভাবে অসুস্থ থাকুক এবং এভাবেই তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়। তারা আসলে খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়া এবং আবেদন করতে ব/লে নাটক করা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ। কিন্তু এটা করে তারা রক্ষা পাবে না।
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য আদালতে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।