Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Exclusive / জিবন বাঁচাতে সিজার টেবিল থেকে পালিয়ে থানায় হাজির আমেলা

জিবন বাঁচাতে সিজার টেবিল থেকে পালিয়ে থানায় হাজির আমেলা

বাবা আমিনুল ইসলাম প্রযুক্তির সাহায্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্ল্যান করেছেন যে মেয়ে সন্তানকে জন্মের সাথে সাথেই মেরে ফেলবেন। অপরদিকে মা আমেলা বেগম তার অনাগত সন্তানকে বাঁচাতে থানায় হাজির হন।

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চর বাঘমারা এলাকার আমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আমেলা বেগমের (২৫) মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ১৩ বছরের দাম্পত্য জীবনে দুই মেয়ে ফাতেমা (১১) ও কুলসুম (৯) জন্ম নেয়।

এবার মা আমেলা খাতুন আলট্রাসনোগ্রাফি করে জানতে পারেন এই সন্তানটিও মেয়ে।
আমেলা বেগম কান্নাকাটি করে অভিযোগ করেন, মেয়ে সন্তান জেনে তার ওপর নানা নির্যাতন করা হয়। স্বামী ও পরিবারের লোকজন তাকে নানাভাবে হ/ত্যার হু/মকি দিয়ে আসছিল।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রসব বেদনা শুরু হলে আমেলাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।

সিজারের প্রস্তুতি চলছিল। এ সময় আমেলা আবারও আমিনুলের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। সন্তান ও তার জীবন ঝুঁকির আশঙ্কায় ক্লিনিক থেকে সরাসরি রৌমারী থানায় যান। ওসির কাছে তার জীবন ও অনাগত মেয়ের জীবন হুমকির মুখে বলে সাহায্য চান।

পরে পুলিশের সহায়তায় আমেলা শেরপুরের একটি ক্লিনিকে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। উপজেলা সদরের নিরাময় হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুর রহমান জানান, সোমবার সকালে প্রসব ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসেন আমেলা। রোগীর পানি ভাঙছিলো। তাকে ভর্তি করার পর সিজারিয়ানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। এ সময় স্বামীসহ কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন আসেন।

কন্যাসন্তান ইস্যুতে তাদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। আমরা তাদের পারিবারিক বিষয়গুলো নিজেরাই মিটিয়ে নিতে বলি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও ফোন করতে বলি। এরই মধ্যে সবার চোখ এড়িয়ে আমেলা অসুস্থ অবস্থায় থানায় যান। পরে পুলিশ এসে বিষয়টি সমাধান করে।

তিনি আরও বলেন, থানাসহ বিভিন্ন পক্ষকে জানিয়ে বিষয়টি সমাধান করতে ৯ ঘণ্টা সময় লেগেছে। ফলে গর্ভের সন্তানর হৃদস্পন্দন কমে যাচ্ছিল। যেহেতু আমাদের  NICU নেই, তাই আমরা প্রসব পরবর্তী ঝুঁকি এড়াতে অন্য হাসপাতালে রেফার করি। সর্বশেষ জানা গেছে, শেরপুরের একটি ক্লিনিকে তার খিঁচুনি শুরু হয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রূপকুমার সরকার জানান, সোমবার বিকেলে আমেলা থানায় আসেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে তার স্বামী  মেয়ে সন্তানের জন্ম হবে জেনে তাকে এবং অনাগত সন্তানকে হ/ত্যা করার চেষ্টা করছে। ভীত আমেলা তার সন্তান এবং তার নিজের জীবনের নিরাপত্তা চায়।

এরপর ওসি আমেলাকে আশ্বস্ত করে হাসপাতালে ফেরত পাঠান। আর তার স্বামীকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কাউন্সিলিংয়ের পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানের কোনো ক্ষতি হয় এমন কাজ করতে নিষেধ করা হয়।

আমিনুল ইসলাম বলেন, শুরুতে বিষয়টি বুঝতে পারিনি। ওসি স্যার পরে বুঝলাম। বাচ্চা হওয়ায় মায়া এখন খুশি। আমি আমার স্ত্রীকে আর কিছু বলবো না।

ভুক্তভোগী আমেলা বেগম জানান, তিনি ও তার মেয়ে এখন নিরাপদে আছেন। ধীরে ধীরে মানসিক ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করছেন তিনি।

About Nasimul Islam

Check Also

চুলের মুঠি ধরে নারী চিকিৎসককে রোগীর মারধর (ভিডিও সহ)

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসককে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *