মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রঘোষিত নতুন ভিসা নীতির উদ্দেশ্য বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে কারও পক্ষ নেওয়া নয়। এই ভিসা নীতির উদ্দেশ্য বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা।
সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র মিলার এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র গত ২৪ মে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না দেশটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২২ শে সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেছে যে এই ঘোষণার প্রায় চার মাস পর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করবে। গত শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মিলার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
মিলারকে গতকাল মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, গত সপ্তাহে ঘোষণা করার পর যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য জড়িতদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা শুরু করেছে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাইরে থেকে নির্বাচন বানচালের কোনো পদক্ষেপের ক্ষেত্রে যারা এ ধরনের উদ্যোগ নেবে, তাদের নিষিদ্ধ করবে বাংলাদেশের জনগণ। পরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না বলে আশ্বস্ত করেছে। এ প্রসঙ্গে মিলারকে প্রশ্ন করা হয়, এটা কি সত্যি? এই বিষয়ে মিলারের প্রতিক্রিয়া কি?
জবাবে মিলার বলেন, ‘আমি বলব, যেমনটা আমরা আগেই বলেছি, গত মে মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন এই নতুন নীতি ঘোষণা করেছিলেন, আমরা সে সময় বলেছিলাম যে এটি বাংলাদেশের নির্বাচনে পক্ষ নেওয়ার উদ্দেশ্য নয়। এর উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা বা সমর্থন করা। আমি বলব যে আমরা গত শুক্রবার যখন নতুন ভিসা বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছি, আমরা উল্লেখ করেছি যে তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করেছে।
আরেকটি প্রশ্নে, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল তার চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিতে এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। কারণ তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি বন্দী, তিনি হাসপাতালে ভর্তি। তার বয়স ৭৮ বছর। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মিলারকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির বিষয়ে মন্তব্য করতে বলা হয়েছিল।
জবাবে মিলার বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কোনো মন্তব্য নেই।
ব্রিফিংয়ে আরেকজন মিলারের কাছে প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ২৪ সেপ্টেম্বর নতুন ভিসা নীতিতে গণমাধ্যম ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে উল্লেখ করেন, যা ব্যাপক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা গণমাধ্যমে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন সাবেক সম্পাদক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার পরিপন্থী।
প্রশ্নকর্তা মিলারের কাছে জানতে চান, যদি এই নিষেধাজ্ঞা গণমাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানের গুরুত্বকে ক্ষুন্ন করবে বলে তিনি মনে করেন কি না।
জবাবে মিলার বলেন, ভিসা-সংক্রান্ত রেকর্ড গোপনীয় হওয়ায় সুনির্দিষ্ট সদস্য বা ব্যক্তি—কার জন্য এই নীতি প্রযোজ্য হবে, তার ঘোষণা তাঁরা দেননি। তবে তাঁরা এই বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এই নীতি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল ও রাজনৈতিক বিরোধীদের জন্য প্রযোজ্য হবে।