Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Entertainment / যুক্তরাষ্টে যাওয়া হলো না, বিমানবন্দরে গিয়ে জানলাম ও আর নেই: চিত্রনায়িকা ববিতা

যুক্তরাষ্টে যাওয়া হলো না, বিমানবন্দরে গিয়ে জানলাম ও আর নেই: চিত্রনায়িকা ববিতা

২০০৪ সালে আমার বন্দিনী ছবির নায়ক ওয়াহেদ কাদির আমাকে ফোন করেন। ১৯৭৬ সালে আমার বিপরীতে এই ছবিতে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের নজর কেড়েছিলেন তিনি। ছবিটি মুক্তির আগেই ওয়াহিদ তার জন্মভূমি আফগানিস্তানে ফিরে আসেন। এরপর অনেকদিন তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না। তবে হটাৎ তার কল পেয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম।

অনেক কষ্টে সে আমার নাম্বার জোগাড় করেছিলো। অনেক কথায় বার্তার পর সে আমাকে বন্দিনী ছবির কথা বললেন। তিনি বলেন, ছবিটি তিনি দেখেননি। তিনি আমাকে অনুরোধ করলেন কোনোভাবে তাকে ছবিটি দেখানোর ব্যবস্থা করতে। পরে আমি অনেক কষ্ট করে ডিভিক্যাম ফরম্যাটে ছবি নিয়ে তাকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।

ওয়াহিদ জানান, ওই সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকবেন। আমারও সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা। ভাবলাম ওখানে গিয়ে ছবিটা তার হাতে তুলে দেব, মিটিং হয়ে যাবে। আমি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য ঢাকা বিমানবন্দরে গিয়ে তাকে ফোন করে জানাই যে আমি আসছি। কেউ ফোন রিসিভ করে বলল, উনি নেই, কিছুক্ষণ আগে মারা গেছেন। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার খুব মন খারাপ হলো। অনেক শখ থাকা সত্ত্বেও ওয়াহিদ তার একমাত্র ছবি দেখতে পারেননি। হায়রে ভাগ্য।

এরপর ছবিটি ও ওয়াহিদকে নিয়ে ববিতা বলেন,‘ইশারায় শিস্ দিয়ে আমাকে ডেকো না…’ এই জনপ্রিয় গানটির কথা এখনো হয়তো অনেকের কানে গুনগুনিয়ে বেজে ওঠে, শুনে আক্রান্ত হন নস্টালজিয়ায়। এটি প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশাম নির্মিত ‘বন্দিনী’ ছবির একটি গান। ছবিটি অবশ্য এহতেশাম তার পুত্র মুশতাককে দিয়ে পরিচালনা করান। ছয় ফুট লম্বা ২২ বছরের সুদর্শন আফগান যুবক বাংলাদেশে এসেছেন রাষ্ট্রদূত বাবা-মায়ের সঙ্গে।

বাংলাদেশে আসার পর মডেলিং শুরু করেন এই তরুণ। ছবিটি নির্মাণ করবেন পরিচালক এহতেশামপুত্র মোশতাক। ছবির নাম ‘বন্দিনী’। এই ছবির জন্য, আমি এমন একজনকে খুঁজছিলাম যে মনে হবে আমেরিকায় ফিরে এসেছি। প্রথম দেখাতেই পরিচালকের কথা মনে পড়ে যায় আফগান যুবক ওয়াহিদের। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ওয়াহিদ ধূমকেতুর মতো এসে আবার একইভাবে হারিয়ে গেলেন। বন্দিনী সিনেমার পর ওয়াহিদ আর অভিনয় করেননি। ১৯৫৪ সালে কাবুলে জন্মগ্রহণকারী ওয়াহিদ কাদির তার রাষ্ট্রদূত পিতার কল্যাণে শৈশব থেকেই পরিবারের সাথে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। পশতু, ইংরেজি, ফারসি, ফরাসি, জার্মান এবং হিন্দি ছাড়াও তিনি বাংলা ভাষা শিখেছিলেন।

১৯৮০ সালে, ওয়াহিদ যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হন। সেখানে একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। সিকিউরিটি কোম্পানির গার্ড হিসেবে ওয়াহিদ তার শ্রম ও মেধার স্বাক্ষি রাখেন। ১১ বছর পর, ১৯৯১ সালে, তিনি অন্য একটি নিরাপত্তা সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে, তিনি তার নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবসা শুরু করেন। ২০০১ সালে, ওয়াহিদ ব্যবসায় ধস নামলে গুরুতর আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হন।

মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়ে। স্ত্রী ও তিন ছেলেকে ভরণ-পোষণ করতে হিমশিম খেতেন তিনি। এক পর্যায়ে কাদির সংসার চালানোর জন্য তার স্ত্রী রোনা এবং বড় ছেলে ম্যাথিউ ক্লেইন চাকরি নেন। পরে ওয়াহিদ নিজেই নতুন কোম্পানি শুরু করেন। প্রয়োজনের সময় ওয়াহিদের ধনী পরিবার তার পাশে দাঁড়ায়নি। ২০০২ সালে, ওয়াহিদ কাদিরের মা আফগানিস্তানে তাদের বৃহৎ পারিবারিক সম্পত্তি তিন মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেন এবং তার ছোট ছেলেকে ব্যবসা শুরু করার জন্য টাকা দেন। কিন্তু নৃশংসভাবে বঞ্চিত বড় ছেলে ওয়াহিদ! এ ঘটনায় ওয়াহিদ খুবই মর্মাহত।

অন্য কথায়, অর্থাভাবে ওয়াহিদ তার বিশাল সুইমিংপুলওয়ালা বাড়ি ছেড়ে দিয়ে পরিবার নিয়ে ছোট্ট দুই রুমের অ্যাপার্টমেন্টে উঠেন। বিষণ্নতায় ডুবে ওয়াহিদ একসময় জীবন বিসর্জন দেয়। তিনি অবিশ্বাস্য গর্বের সাথে তার বাবা-মাকে তার শেষ চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন- ‘আমি কারো মাথা ব্যথার কারণ হতে চাই না। আমার দেহটি তোমরা পুড়িয়ে দিও।

About Nasimul Islam

Check Also

অবশেষে তারেক রহমানের সঙ্গে মৌসুমীর সেই আলোচিত ছবি নিয়ে মুখ খুললেন ওমর সানী

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের সঙ্গে ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *