হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজি হক দেশে ব্যবসা বন্ধ করে স্থায়ীভাবে দেশ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার সকালে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘আজ দুপুরে আমি একটি সৌদিয়া ফ্লাইটে জেদ্দার উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করব। যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন তিনি। তবে তিনি রোববার দেশ ত্যাগ করেছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তমিজি হক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। অ্যাডাম তামিজি, একজন দ্বৈত নাগরিক, তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ৩ দিন ধরে লাইভে গিয়ে বেশ কয়েকটি পোস্ট করেছেন।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও তার চাচাকে জড়িয়ে আদম তমিজি হকের বেশ কয়েকটি ফেসবুক স্ট্যাটাস টঙ্গী-গাজীপুরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
তমিজি হকের অভিযোগ-গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও তার চাচা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান মতির লুটপাটের কারণে ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রতিষ্ঠান হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বেকায়দায় পড়েছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবৈধ হস্তক্ষেপ, লুটপাট ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন।
তিনি বলেন, তারা (আ.লীগের প্রভাবশালী নেতারা) আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুট করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শনিবার টঙ্গীর হক বিস্কুট কারখানায় তার সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি কারখানায় যাননি।
শনিবার মধ্যরাতে ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আর বাকি কিছু নেই, শ্রমিক, ব্যাংকস এবং সরবরাহকারীদের টাকা জাহিদ আহসান রাসেলের কাছে আছে। উনার থেকে বুঝে নিবেন। আমি সৌদি যাচ্ছি। তারপর আমার জন্মভূমি ইউকে চলে যাচ্ছি। বাদশাহী দীর্ঘজীবী হোক।’
ডাকাতির বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ আদম তমিজি হক শনিবার সন্ধ্যায় ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘আমার ফ্যামিলির যদি কিছু হয়, আপনারা দয়া করে খুঁজবেন কারা করছে। আর আমি এই কথাটা বলে রাখব, আওয়ামী লীগের মতো নিকৃষ্ট দলকে আপনারা ভোট দিবেন না। বাই; বাই; বাংলাদেশ, আপনারা অনেক সুখে থাকবেন আওয়ামী লীগকে নিয়ে। এ দেশের জন্য আমি প্রযোজ্য নাগরিক না, আমি ব্রিটিশ, আই বর্ন ইন ইংল্যান্ড, আই রিটার্ন টু মাই কান্ট্রি।’
শুক্রবার রাতে বিদেশে অবস্থানকালে আদম তমিজি হক ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘শুভ বিকেল, আমার কারখানা থেকে অবৈধভাবে মালামাল নেওয়া হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের বাবা ভালো মানুষ ছিলেন, তিনি আমার বাবার বন্ধু। প্রতিমন্ত্রী রাসেল, তার মামা মতিউর রহমান মতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরু আমার প্রতিষ্ঠান থেকে অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নিত। তারা এ পর্যন্ত আমার এক হাজার কোটি টাকা লুট করেছে।
অন্য একটি স্ট্যাটাসে আদম তমিজি লিখেছেন, ‘প্রিয় নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী), আমি এবং আমার দ্বিতীয় স্ত্রী দুবাই থেকে ঢাকা যাচ্ছি। পরিবারের বাকি সদস্যরা আজ রাতে রওনা হয়ে সকালে পৌঁছাবেন। আমরা এমপি রাসেল ও তার চাচার ভয়ংকর থাবা থেকে জীবিকা বাঁচাতে আসছি।’
আদম তমিজি হক ঢাকা মহানগর উত্তর তাঁতী লীগের প্রধান উপদেষ্টা ও মানব বাংলাদেশ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। এই সংস্থাটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আর্থ-সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আদম তমিজি হকের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘বুধবার রাত ১০টার দিকে হক কারখানার ভেতরে সংগঠনের মহাব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমানকে মা”রধর করা হয়। মা”রধরের সময় তার একটি আঙুল কেটে যায়। আমি যেহেতু রাজনীতি করি, খবর পেয়ে সেখানে যাই। পুলিশও সেখানে যায়। আহত অবস্থায় মুশফিককে উদ্ধার করে স্ত্রী মলি রহমানের হেফাজতে দেওয়া হয়। তবে ভয়ে তারা কোনো অভিযোগ করেননি।
এদিকে ফোন রিসিভ না করায় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের বক্তব্য নেওয়া যায়নি। আদম তমিজি হকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনিও কল রিসিভ করেননি।