Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / National / স্বামীকে কিডনি দিয়ে সেই সায়মা: এখন বাঁচলে দুজনে বাঁচব, মরলে দুজনে মরব

স্বামীকে কিডনি দিয়ে সেই সায়মা: এখন বাঁচলে দুজনে বাঁচব, মরলে দুজনে মরব

জহিরুল হক ওরফে জুনায়েদ নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার হিরণপুর বাজার এলাকার বাসিন্দা। বয়স ৩৯। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাথা ঘোরা ও উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। একপর্যায়ে জহিরুল চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। পরীক্ষায় জানা যায় তার দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কিডনি পাওয়া যায়নি। এরপর এগিয়ে আসেন তার স্ত্রী সায়মা জাহান ওরফে পলি। স্ত্রীর দেওয়া কিডনি নিয়ে এখন সুস্থ হয়েছেন জহিরুল হক। এই দম্পতি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের পাঁচ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।

জহিরুল হক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার স্ত্রী সায়মা জাহান নেত্রকোনা সরকারি কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

জানা গেছে, ছয় বছর আগে সায়মার সঙ্গে জহিরুল হকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা ঢাকায় থাকতেন। গত বছরের ২৭ মে ছুটি নিয়ে বাসায় আসেন জহিরুল। ওই দিন উচ্চ রক্তচাপসহ নানা সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বজনরা তাকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার কিডনি রোগ ধরা পড়ে। এরপর তিনি ময়মনসিংহ ও ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে।

স্বজনরা জানান, এক মাস আগে জহিরুল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ঢাকায় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে বিভিন্ন পরীক্ষা করতে বলেন। পরীক্ষায় জানা যায় তার দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। রোগীকে বাঁচাতে অন্তত একটি কিডনি প্রয়োজন। এরপর বিভিন্ন কিডনি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কিডনি কোথাও পাওয়া যায়নি। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জহিরুল ও স্ত্রী সায়মার কিডনি মিলেছে। তিনি তার স্বামীর জীবন বাঁচাতে তার একটি কিডনি দেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। জহিরুল হাসপাতালের সপ্তম তলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত শনিবার সায়মা জাহানকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

জহিরুলের ছোট ভাই আশিকুল হক পুলিশের এসআই। বললেন, ভাবী এখন কিছুটা সুস্থ। চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। ভাইয়ের অবস্থাও ভালো।

ভাবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ভাই হয়ে যা করতে পারিনি তা করেছেন ভাবী। তাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই। আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করি দুজনেই যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন। আপনিও দোয়া করবেন।

জহিরুলের স্ত্রী সায়মা জাহান বলেন, স্বামীকে নিজের কিডনি দিতে পেরে আমি গর্বিত। তিনি (স্বামী) কখনো বলেননি, আমি নিজের ইচ্ছায় কিডনি দিয়েছি। তিনি সুস্থতার দিকে যাচ্ছেন, এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে। এখন বাঁচলে দুজনে বাঁচব, মরলে দুজনে মরব।

পূর্বধলার নারান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস ব্যাপারী জানান, সায়মা তার স্বামীকে কিডনি দিয়ে এলাকায় প্রশংসায় ভাসছেন। এটি সত্যিই একটি বিরল উদাহরণ।

About Rasel Khalifa

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপকে লিজ দিচ্ছে। তবে প্রধান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *