Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / opinion / ভিসানীতির পর শুরু হয়েছে তদন্ত, কেন সচিব আর রাজনীতিবিদদের সন্তানরাই বিদেশে পড়তে যান

ভিসানীতির পর শুরু হয়েছে তদন্ত, কেন সচিব আর রাজনীতিবিদদের সন্তানরাই বিদেশে পড়তে যান

বিদেশে অবস্থানরত ২৯ সচিবের ৪৩ সন্তানের খবর (ঢাকা পোস্ট, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩)  একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। মিডিয়ার এই প্রতিবেদন নিয়ে কয়েকদিন ধরে চলছে তুমুল আলোচনা, সমালোচনা চলছে। একটি সরকারি সংস্থা এ বিষয়ে তদন্ত করেছে। অনুসন্ধানের ভিত্তিতে বিভিন্ন গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ঘোষণার পর এ তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮ সচিবের ২৫ সন্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, বাকি ১৮ জন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং ভারতে রয়েছে। তাদের কেউ লেখাপড়া করছে আবার কেউ পড়ালেখা শেষ করে স্থায়ী হয়েছে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, সচিবদের ছেলেমেয়েদের বিদেশে যাওয়া বা বিদেশে পড়ালেখার কী দোষ? সহজ উত্তর, না। এমনকি আইনি অপরাধও নয়। কিন্তু বিবেকের প্রশ্ন আছে। সচিবরা তাদের বক্তব্যে দেশের উচ্চশিক্ষার ভূয়সী প্রশংসা করে বক্তব্য দেন। কিন্তু তাদের সন্তানরা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ায় না। যদিও এর হার খুবই কম। সচিবদের ছেলেমেয়েরা যখন ইউরোপ-আমেরিকায় পড়াশোনা করে, তখন দেশের সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে, দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার ওপর কি তাদের আস্থা নেই?

এমন খবর যখন দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়, তখন প্রশ্ন আসতে পারে, শুধু সচিবদের সন্তানই কি বিদেশে? যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য বা উন্নত দেশে আর কারো সন্তান নেই?

সচিব পদমর্যাদার নিচের অনেক কর্মকর্তা আছেন যাদের সন্তানরা বিদেশে পড়াশোনা করে। শুধু প্রশাসন ক্যাডার নয়; অন্যান্য ক্যাডারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সন্তানরাও উন্নত দেশে পড়াশোনা করে সেটেল্ড। এটাও সত্য যে তাদের কেউ কেউ সাধারণ পরিবারের সন্তানদের মতো বৃত্তি নিয়েছে। কিন্তু গুঞ্জন আছে, উল্লেখযোগ্য অংশ বাবার টাকায় বিদেশে চলে গেছে!

সচিবদের ছেলেমেয়েরা যখন ইউরোপ-আমেরিকায় পড়াশোনা করে, তখন দেশের সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে, দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার ওপর কি তাদের আস্থা নেই?

শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তান নয়। রাজনীতিবিদদের সন্তানরাও কম যায় না! ইংলিশ প্রোব ম্যাগাজিন রাজনীতিবিদদের সন্তানদের অবস্থান সম্পর্কে অক্টোবর ২০১০ সালে ‘সন্স অ্যান্ড ডটারস অফ পলিটিক্যাল প্যারেন্টস’ (সন্স অ্যান্ড ডটারস অফ পলিটিক্যাল প্যারেন্টস) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তদন্তে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ২৪টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে তদন্ত করা হয়।

তৎকালীন তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতাদের সন্তানদের খোঁজখবর নিতে রাজনৈতিক নেতা বা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তদন্ত কমিটি। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩৪ নেতা, বিএনপির ৩২ নেতা, জাতীয় পার্টির ৫ নেতা, জামায়াতে ইসলামীর ৬ নেতা, জাপা নেতা ২ জন, জাসদ (আইএনইউ) ৩ নেতা, ওয়ার্কার্স পার্টির ২ নেতা, ৩ নেতা। সিপিবির, গণফোরামের ২ নেতা, এলডিপির ২ নেতা। নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য দলের ১৪ নেতা।

১০৫ জন রাজনৈতিক নেতাকে ডাকা হয়েছিল তাদের সন্তান্দের বিষয়ে জানতে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, আওয়ামী লীগের ৩৪ নেতার মধ্যে ২৪ জনের সন্তান বিদেশে পড়াশোনা করছেন। বিএনপির ৩২ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ২৬। জামায়াতে ইসলামীর ছয় নেতার মধ্যে ৫ জনের সন্তান বিদেশে পড়াশোনা করছে। জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৫ জনের মধ্যে ৪ জন। অন্য দলের ২৭ নেতার মধ্যে ১৫ জন ছেলেমেয়ে বিদেশে পড়াশোনা করছে। এই জরিপে দেখা গেছে, ৭৪ শতাংশ রাজনৈতিক নেতার সন্তান বিদেশে পড়াশোনা করছে।

ওই প্রতিবেদনের পর বিদেশে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের নিয়ে অন্য কোনো গণমাধ্যম বা সংস্থা প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি বলে জানা গেছে। তাই এটিকে সর্বশেষ প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

নিজেরা রাজনীতি করলেও অধিকাংশ রাজনীতিবিদ তাদের সন্তানদের রাজনীতিতে আনেন না। ফলে তাদের সন্তানদের রাজনৈতিক শিকার হওয়ার ঝুঁকি নেই। নেতারা অন্যের সন্তান অর্থাৎ কর্মীদের নিয়ে ‘রাজনীতি’ করেন।

প্রতিবেদনটি এখনও প্রাসঙ্গিক কারণ সেই সময়ে রিপোর্ট করা বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ এখনও বেঁচে আছেন। বলা হয়ে থাকে যে, রাজনীতিবিদদের বেশির ভাগ ছেলেমেয়েরা যারা তখন বিদেশে পড়াশোনা করেছিল তারা সেসব দেশে অর্থাৎ আমেরিকা ও কানাডার মতো উন্নত দেশে বসতি স্থাপন করেছিল।

জনশ্রুতি আছে যে সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েরা যারা বিদেশে পড়তে যায় তারা সেখানে কাজ করে টিউশন ফিসহ যাবতীয় খরচের টাকা জোগাড় করে। অন্যদিকে রাজনৈতিক পরিবারের সন্তানদের কাজ করতে হয় না। দেশ তাদের শিক্ষা ও জীবনযাত্রার খরচ বহন করে। এসব পরিবারের সন্তানদের সঙ্গে একসময় বেগমরাও চলে যান বিদেশে। গড়ে তোলা হয় বসতি। তাই উন্নত দেশের কোনো কোনো জায়গা বেগমপাড়া হিসেবেও ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে।

কান টানলে মাথা যেমন আসে তেমনি একটা জিনিস আরেকটা প্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। বছর দুয়েক আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছিলেন, কানাডায় বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ ও আমলাদের বাড়ির তথ্য পেয়েছেন তারা। এক অনুষ্ঠানে হঠাৎ করেই এমন বিস্ফোরক তথ্য দেন তিনি। মন্ত্রীর এমন কথায় টনক নড়ে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকও।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয় কানাডায় কোন বাংলাদেশিদের বাড়ি আছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য দুদকের কাছে আসেনি। এ বিষয়ে দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কারো সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা অন দ্য রেকর্ড বলেন, আমি হাত পোড়াতে চাই না, তদন্তে এগোতে চাই না।

About Babu

Check Also

বাঁধন নৌকার লোক বলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হইতো: পিনাকি

ছাত্র আন্দোলনে তারকাদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তিনি আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *