Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Exclusive / এমরানকে নিয়ে ব্যারিস্টার সুমনের করা বক্তব্য দু’দিন পরেই মিলে গেল

এমরানকে নিয়ে ব্যারিস্টার সুমনের করা বক্তব্য দু’দিন পরেই মিলে গেল

সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়া গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি ড. ইউনূস প্রসঙ্গে দেয়া এমরানের বক্তব্যকে বড় কোন পরিকল্পনার অংশ বলে মন্তব্য করেন। দুদিন পরই ‘সেই পরিকল্পনার’ কিছুটা সামনে আসে।

ব্যারিস্টার সুমন গত ৬ সেপ্টেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেন। এমরান আহমেদ ভূঁইয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতির জীবনে যখন কোনো সংকটময় মুহূর্ত আসে তখনই কিন্তু সুবিধাবাদী মানুষের জন্ম হয়। ডিএজি এমরান সাহেব হঠাৎ করে বললেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব ভালো মানুষ। তার সঙ্গে বিচারিক ঝামেলা করা হচ্ছে এবং উনি তার বিরুদ্ধে কোন সাইন করবেন না।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ”রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী হয়ে, সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েও এই এমরান সাহেবকে আমি বহু দুর্নীতিবাজের পক্ষে শুনানি করতে দেখেছি। ওই সময় কোনদিন তার বিবেক জাগ্রত হয়নি। হঠাৎ করে উনার বিবেক জাগ্রত হয়ে বললেন যে, ইউনূস সাহেব ভালো মানুষ। উনি ব্যক্তিগত মতামত দিতেই পারেন কিন্তু সংবাদমাধ্যমকে ডেকে এনে বললেন যে, আমি এটা সাইন করিনি। এর মানে, আপনি নিশ্চিত থাকেন এই ভদ্রলোকের বড় রকমের কোন প্ল্যান আছে। বড় কোন প্ল্যানের অংশ হিসেবে তিনি এই কাজ করছেন।”

ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্যের দুদিন পর শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) এমরান আহমেদ ভূঁইয়া সপরিবারে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে হাজির হন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি এ কাজ করেন।

যে মার্কিন দূতাবাসের সামনে দিয়ে সর্বসাধারণের চলাচল সময়ই নিয়ন্ত্রিত থাকে, সেখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সপরিবারে এমরান কিভাবে ঢুকলেন? তবে কি নাটকের প্লট সাজানো ছিলো আগে থেকেই? এমন প্রশ্ন সামনে আসে।

জানা গেছে, নাটকটির প্লট আগে থেকেই সাজানো ছিল। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে এমরানকে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পরপরই নাটকের মঞ্চায়ন শুরু হয়।

শুক্রবার সকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জনস্বার্থে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বলেন, তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। নিয়ম হলো, সরকারি চাকরিতে থাকলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে প্রেসের সঙ্গে কথা বলতে হয়। তিনি সেই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। এছাড়াও তিনি সরকারি পদে থেকে সরকার সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলেছেন।

এরপর আসে নাটকের ক্লাইম্যাক্স। ঢাকার বারিধারায় মার্কিন দূতাবাসের চারপাশে সব সময় কড়া নিরাপত্তা থাকে। এমনকি সাধারণ মানুষের চলাচলও সেখানে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অথচ একাধিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, পরিবার ও তল্পিতল্পাসহ দূতাবাসে ঢুকে পড়েছেন এমরান। তিনি নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দূতাবাসে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। অথচ ড. ইউনূসের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেয়া কিংবা বিবৃতি দেয়া বহু বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী এবং সাধারণ মানুষ কোনো ধরণের ভয়ভীতি এবং শঙ্কা ছাড়াই দেশে অবাধে চলাচল করছেন।

গেলো ৪ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক ড. ইউনূসের শ্রমিক ঠকানোর মামলার বিষয়ে সপ্রণোদিত হয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন তখনকার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, আমি মনে করি ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার সম্মানহানি করা হচ্ছে এবং এটা বিচারিক হয়রানি।

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়েই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ইমরান। হাইকোর্ট ছুটিতে থাকায় ওই দিন আদালতে তার কোনো কাজ ছিল না। শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল, কিন্তু এমরান কি সেদিন মিডিয়ার সামনে এসেছিলেন শুধুমাত্র বিতর্ক সৃষ্টির জন্য নাকি কোনো দলের স্বার্থ বাঁচাতে নাটক করেছেন?

৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ইমরান গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার আগে কোনো অনুমতি নিয়েছেন। ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দেওয়ার জন্যও তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে খুশি করতে ইমরান এ বক্তব্য দিয়েছেন।

ওইদিন চার ঘণ্টার নাটকীয়তার পর মার্কিন দূতাবাস থেকে বেরিয়ে এমরান তার লালমাটিয়ার বাসায় যান।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মুক্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার পরিবার মার্কিন দূতাবাসে অবস্থান করে এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে প্রমাণ করেন যে, ইমরান আসলে কারো স্বার্থ বাঁচাতে একটি নাটকে এই চরিত্রে কাজ করছেন।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, এমরান আহম্মদের এই পদক্ষেপের সঙ্গে বিশেষ মহল জড়িত থাকতে পারে। তারা অনেক সময় এইসব কাজ করায়। এটি একটি নীলনকশার অংশ। এমরান অ্যাটর্নি জেনারেল হলেও সেখানে ঢুকতে পারতেন না, যদি এটা নীলনকশার অংশ না হতো। তাকে ভিতরে ঢুকতে দেয়া হতো না।

এদিকে এক ভিডিও বার্তায় ড. ইউনূস প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি থেকে ঋণ নিয়ে কেউ বড় লোক হয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো ব্যক্তিরা ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসায় এত বড় হয়ে উঠেছেন যে তারা হিলারি ক্লিনটনের মতো লোকদের নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থ ব্যয় করছেন। বাংলাদেশে থেকে বাংলাদেশি মানুষের টাকা তিনি হিলারি ক্লিংটনের নির্বাচনি প্রচারণায় দিচ্ছেন। কিন্তু এটার ফলও পাচ্ছেন তিনি। ১৭৫ বিশ্বনেতা বলেছেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিত করতে হবে।

About bisso Jit

Check Also

চুলের মুঠি ধরে নারী চিকিৎসককে রোগীর মারধর (ভিডিও সহ)

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসককে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *