Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / রাজপথে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও, ভারত থেকে ফিরে চুপ জি এম কাদের

রাজপথে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও, ভারত থেকে ফিরে চুপ জি এম কাদের

সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)ও রাজপথে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। বিএনপির আন্দোলন ও বিদেশিদের তৎপরতায় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যাবে এমন ধারণার প্রতিফলন না ঘটিয়েই পিছু হটে দলটি। সরকারের সঙ্গে থাকার জন্য প্রায় সব সংসদ সদস্য ও দলের সিনিয়র নেতাদের চাপ রয়েছে। ভারত থেকে ফিরেই নীরব রয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংসদে বিরোধী দল যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ শক্তিশালী দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। দলের ওপর ভারতের প্রভাবের কারণে দেশের অবস্থান অনুযায়ী জাপা সরকারের পাশে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর কর্মকাণ্ডে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে দলটির অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না।

জাপার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও অশান্ত। গত ১৯ আগস্ট বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। তিন দিন পর রওশনের অনুসারীরা তাকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। পরে বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া বলে দাবি করা হয়। তবে তা ছড়ানোর পেছনে ‘সরকারি সংস্থার ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত দুই নেতার জড়িত থাকার কারণে জাপানে অস্থিরতা কমেনি।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নেমেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। আওয়ামী লীগও তাদের পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে শরিকদের সঙ্গে। জাপাও নির্বাচনের আগে আলোচনায় থাকতে রাজপথে নামতে চেয়েছিল। গত ৫ আগস্ট দলের যৌথ সভায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সুষ্ঠু নির্বাচন, সুশাসনসহ ১০ দফা দাবি নিয়ে লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়। দুই দিন পর জিএম কাদের বলেন, ‘আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিস্তারিত জানানো হবে।’

রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে রাস্তায় থাকার চেয়ে সংসদে কথা বলা ভালো। অধিবেশন শুরু হয়েছে। সেখানে দ্রব্যমূল্য, সুশাসন, দুর্নীতি নিয়ে কথা বলছে জাতীয় পার্টি। সড়কে সভা-সমাবেশ করে বক্তৃতা করার চেয়ে সংসদে কথা বলা বেশি কার্যকর।

সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে জাপা সরে এসেছে কিনা– প্রশ্নে মুজিবুল হক বলেন, ‘বিএনপি সরকার পতনের এক দফা নিয়ে আন্দোলন করেছে। জাতীয় পার্টির এমন এক দফা নেই। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। তারপর অবস্থান জানাব।

চলতি মাসের শেষ দিকে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং এমপিদের যৌথ সভা হতে পারে। আগের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পরবর্তী বৈঠকে ঠিক হবে আগামী নির্বাচনে কোন দিকে যাবে, কার সঙ্গে জোট করবে জাপা।

দলটির চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘ওই অবস্থা আর নেই। এখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতির বদল না হলে ২০১৮ সালের মতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করবে জাতীয় পার্টি। আর বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে ২০১৪ সালের মতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচন করবে।

সংরক্ষিত আসনের চারজনসহ জাপার এমপি সংখ্যা ২৭। তাদের সবাই সরকারের পক্ষে। তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করতে চান। তারা মনে করেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত। এই মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে রাস্তায় নামলে জাপার ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হবে। বিএনপির তা সামাল দেওয়ার সক্ষমতা থাকলেও জাপার নেই। আগামী নির্বাচনেও ভরাডুবি হবে। ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হলে জাপা কোথাও জিততে পারবে না। সরকারি দলকে মোকাবিলার শক্তি না থাকায় অস্তিত্ব সংকট তৈরি হবে।

গত মাসে যৌথ সভায় তারা এই মতামত জানিয়েছেন বলে জাপা সূত্র জানায়। এমপি নন, এমন কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বিকল্প পথ খোলা রাখার পরামর্শ দিলেও তা হালে পানি পায়নি। জি এম কাদের তাদের মতামত মূল্যায়নের কথা বললে জাপা মহাসচিব সভায় বলেছিলেন, ‘শুধু আদর্শ দিয়ে দল চলে না। সংসদে বেশি সংখ্যক এমপিও থাকতে হবে। নইলে দল থাকবে না।

জিএম কাদের ভারত সফরের আগে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে দাবি করে সরকারের সমালোচনা করে আসছিল আওয়ামী লীগ। গত ২৩ আগস্ট দেশে ফেরার পর দুই সপ্তাহ চুপচাপ ছিলেন তিনি। বিবৃতি দিলেও বৈঠকে আসছেন না। তিনি ৩০ আগস্ট সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেও তার ভারত সফর সম্পর্কে কিছু বলেননি।

জাপা সূত্রে জানা গেছে, তিন দিনের সফরে জিএম কাদের ভারতের সাবেক হাইকমিশনার ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ছাড়া উচ্চ পর্যায়ের কারও সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। তিনি দেশের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেননি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ড.

জিএম কাদেরের মতো তার উপদেষ্টা মাশরুর মাওলা বলেন, “ভারত নির্বাচন নিয়ে কোনো বার্তা দেয়নি। দেশটি বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। নির্বাচনের আগে-পরে যেন কোনো সহিংসতা না হয়। যুক্তরাষ্ট্রও একই কথা বলছে। ক্ষমতাসীন নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা না করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। সেখানে প্রয়োজনীয় কথা বলা হয়েছে।’ তবে তিনি বিস্তারিত জানাননি।

জাপার একাধিক কো-চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, জিএম কাদেরের ভারত সফরের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের কথা সিনিয়র নেতাদের জানানো হয় না। জিএম কাদের ও মাশরুর মওলা বৈঠক করেছেন। মাঝে মাঝে মহাসচিব আছেন। বাকিদের ডাকা হয় না।

রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, জাপা যে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে, তা দূর হয়ে যাবে। রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের মিলিতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন কঠিন হবে, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা একমত হয়েছেন। তা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।’

জাপা সূত্রে জানা গেছে, দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশায় থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ও সমঝোতার দিকে তাকিয়ে ছিলেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। বাবলুর মৃত্যুর পর এর দেখাশোনা করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বর্তমান মহাসচিব। সরকারের কোনো আপত্তি ছাড়াই সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। দলের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তাদের দুজনের। তাই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নাটকীয় পরিবর্তন না হলে জাপা আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে।

ভারতে যাওয়ার আগে জিএম কাদের ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দুটি বৈঠক করেন। গত দুই সপ্তাহে সরকারের সমালোচনায় জাতীয় পার্টিকে তেমন কঠোর হতে দেখা যায়নি। দলটির সূত্র জানায়, জিএম কাদেরের অনুমান, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সমঝোতায় আসবে। দুই বৃহৎ শক্তির অবস্থান দেখে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জাপা। দুই দেশ রাজি না হলে দলটি ভারত ও আওয়ামী লীগের পাশে থাকবে।

About Babu

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *