Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / National / মাত্র ১৩ গ্রাহকের কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক

মাত্র ১৩ গ্রাহকের কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক মাত্র ১৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি। এসব প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের মোট ঋণের প্রায় ৩৫ শতাংশ নিয়েছে। এর মধ্যে প্রভাব ও প্রতিপত্তির কারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন ঋণ পরিশোধ করছে না, তেমনি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও বড় অঙ্কের ঋণের টাকা আটকে রেখে সোনালী ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা দুর্বল করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই ১৩ গ্রাহকের কাছে সোনালী ব্যাংকের ২৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। তালিকায় রয়েছে বহুল আলোচিত হলমার্ক এবং থার্মেক্স গ্রুপ, পাশাপাশি বেসরকারি খাতের টি অ্যান্ড ব্রাদার্স গ্রুপ এবং ব্র্যাক। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো হলো খাদ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফ), বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ, সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেড, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি)। ), বাংলাদেশ চিনি। এবং ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি) এবং ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এসব প্রতিষ্ঠানের নেওয়া ঋণের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা খেলাপি অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। কেলেঙ্কারি ও অনিয়মের মাধ্যমে নেওয়া বড় ঋণ আদায়ের আশা কম।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের শীর্ষ সরকারি সোনালী ব্যাংক এখন বড়দের ঋণ দিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এই ঋণ সঠিকভাবে যাচাই করা হয় না. ফলে বড় অঙ্কের ঋণ অনাদায়ী হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৭৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। এর মধ্যে মাত্র ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ ২৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।

এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৪৭২ কোটি ৫৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। ঋণের অবশিষ্ট পরিমাণ ব্যাংক থেকে বিশেষ ছাড় এবং বিভিন্ন কৌশলে পুনঃনির্ধারণ করা হয়, যা মূলত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অপরিশোধিত পরিমাণ। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সোনালী ব্যাংকে পুনঃতফসিল করার সময় যে এককালীন বকেয়া পরিশোধ করার কথা ছিল তা আদায় করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজকার পত্রিকাকে বলেন, “ব্যাংকগুলো সাধারণত বড় গ্রাহকদের ঋণ দিতে বেশি আগ্রহী হয়। এটি ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য ভালো লক্ষণ নয়। কোনো গ্রাহক দেউলিয়া হয়ে গেলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়, যা ব্যাংকের জন্য অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে। ঋণ থাকলে কয়েকটি কোম্পানিকে দেওয়ায় দেশের ভালো উদ্যোক্তারা ঋণ পান না, এটা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, হলমার্ক গ্রুপের কাছে সোনালী ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ ১৭১৩ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের ২ দশমিক ০২ শতাংশ। থার্মেক্স গ্রুপের কাছে ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ ,৩৮২ ,৩২২ ,২০০ কোটি টাকা। এটি মোট ঋণ অবস্থানের ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সোনালী ব্যাংকের টি অ্যান্ড ব্রাদার্স গ্রুপকে দেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৪৯০ কোটি ২৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে ব্যাংকটির পাওনা ৩৫৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ৪ হাজার ৮৩৭ কোটি ১৩ লাখ, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে ৮৪৫ কোটি ৭৩ লাখ, সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেডকে ৪৯৫ কোটি ৮২ লাখ, ব্র্যাককে ৫৯৭ কোটি ৭২ লাখ, বিসিআইসি, বিএডিসিকে ৩ হাজার ৬১৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ৯ হাজার ২৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, ব্যাংকের পাওনা ৯৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা।

বিএসএফআইসিকে সোনালী ব্যাংকের দেওয়া ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৯৫০ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ ছাড়া টিসিবির কাছে ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১২৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: আরিফুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, “পণ্য কেনার সময় সোনালী ব্যাংক থেকে লোন হিসেবে টাকা নিয়েছিলাম। পণ্য বিক্রি করে সরকারি ভর্তুকির টাকা পেয়ে ব্যাংকে পরিশোধ করি। এক্ষেত্রে বকেয়া আছে। একটি ঋণ হিসাবে এটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী পরিশোধ করা হয়।

এসব ঋণের একটি অংশ বিতরণের সময় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন আতাউর রহমান প্রধান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঋণ দেওয়ার চেয়ে যাচাই-বাছাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ত্রুটি থাকলে তা পুনরুদ্ধার করা কঠিন। একটি উদাহরণ হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারি। এ ঋণ আদায়ে কোনো উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। তবে সংগ্রহের নানা উদ্যোগ বরাবরই ছিল, এখনও আছে।

সোনালী ব্যাংকের বর্তমান এমডি আফজাল করিম এসব ঋণ সম্পর্কে বলেন, “সোনালী ব্যাংক ঋণ বিতরণ ও সংগ্রহের ক্ষেত্রে নিজস্ব নীতি অনুসরণ করে। তবে বড় গ্রুপ ও সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ঋণ সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ আদায়ে ঘাটতি রয়েছে। বিবেচনায় নিতে হবে। আমাদের খেলাপির হার প্রায় ১৫ শতাংশ। খেলাপি কমানোর জন্য বিশেষ চুক্তি করা হয়েছে, যদিও আই এমএফ শর্তের তুলনায় অনেক বেশি। আশা করা হচ্ছে যে হল-মার্ক এবং অন্যান্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নতি হবে। ভবিষ্যতে ঋণ।

About Rasel Khalifa

Check Also

জাহ্নবী কাপুরের ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)

মন্দিরের সিঁড়ির একপাশে অসংখ্য ভাঙা নারিকেল। তার পাশে থেকে হামাগুড়ি দিয়ে উপরে উঠছেন বলিউড অভিনেত্রী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *