Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / নায়ক সালমান শাহ’র প্রয়ানের দিন যা যা ঘটেছিল

নায়ক সালমান শাহ’র প্রয়ানের দিন যা যা ঘটেছিল

ঢাকাই সিনেমার অকাল প্রয়াত নায়ক সালমান শাহের ২৭তম মৃ”ত্যুবার্ষিকী আজ। দেশের মানুষ এখনো ভুলতে পারেনি এই অভিনেতাকে।

২০২০ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকায় জনপ্রিয় অভিনেতা সালমান শাহের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি করে। সংস্থাটির দাবি, সালমানকে হ”ত্যা করা হয়নি, অভিনেত্রী শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে পারিবারিক বিরোধের কারণে তিনি আত্মহনন করেন।

২০২০ সালে একটি সংবাদ সম্মেলনে, PBI সালমানের আত্মহননের ৫ টি কারণ তুলে ধরে।
সেগুলো হল অভিনেত্রী শাবনূরের সাথে তার অত্যধিক ঘনিষ্ঠতা, তার স্ত্রী সামিরার সাথে দাম্পত্য কলহ, অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হওয়ার কারণে একাধিক আত্মহননের চেষ্টা, মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা, যা জটিল সম্পর্কের বেড়াজাল তৈরি করে অভিমানে রূপ নেয় এবং সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতা।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে ছবির মাধ্যমে সালমান শাহের মৃ’ত্যুর ঘটনা তুলে ধরে পিবিআই।

পিবিআইয়ের সচিত্র প্রতিবেদনের লিখিত অংশ তুলে ধরা হলো-

এতে দেখা যায়, ঘটনার শুরুতে ডাবিং থিয়েটারে সালমান ও শাবনূরকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে দেখে রেগে যান স্ত্রী সামিরা। ঘটনার আগের দিন রাত সাড়ে ১১টায় সালমানের মুঠোফোনে অভিনেত্রী শাবনূরের ফোন আসে।

এ সময় কথা বলতে বলতে বাথরুমে প্রবেশ করেন সালমান শাহ। বাথরুমে গিয়ে সালমান শাহ চিৎকার করে বলছিলেন যে, তাকে যেন আর ফোন না দেওয়া হয়।

এরপর রাত ১২টার দিকে শাবনূরের মোবাইলে আবার ফোন আসে। এ সময় সামিরা রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে নিচতলার লবিতে যায়।

লবিতে সালমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবুল হুসেন খান সামিরাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করেন। সামিরা কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফেরেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাবনূরের মোবাইলে আবার কল আসে।

শাবনূরের কল দেখে সালমান শাহ রাগান্বিত হয়ে সিটিসেলের মোবাইল মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দেন। শাবনূরের দেওয়া ফোনও ভেঙে ফেলেন তিনি।
পরদিন সালমান শাহের বাড়ির হেলপার মানোয়ারা ভাঙা মোবাইলটি ময়লা আবর্জনায় ফেলে যান। এরপর সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বাসায় আসেন সালমানের বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। এ সময় সামিরা তার শ্বশুরকে চা-নাস্তা দেন।

ওই সচিত্র প্রতিবেদনের আরো দেখানো হয়, ঘটনার দিন সকালে সালমান শাহ ঘুম থেকে উঠে কিচেন রুমে কাজে সাহায্যকারী মনোয়ারার কাছে পানি চান। মনোয়ারা এক মগ পানি দেন। সালমান শাহ পানি পান করে আরও এক মগ পানি চেয়ে পান করেন। পরে মালি জাকির কলিংবেল বাজায়। সালমান নিজেই দরজা খুলে দেন। এসময় জাকির সালমান শাহের কাছে তিন মাসের বকেয়া বেতন চান। কিন্তু কোনো কথা না বলে ভেতরে চলে যান।

পরে সালমান শাহ দারোয়ান দেলোয়ারকে ইন্টারকমে ফোন করে বলেন, তার বাসায় যেন কাউকে আসতে দেওয়া না হয়। এরপর বেডরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে স্ত্রী সামিরার দিকে একদৃষ্টিতে কিছু সময় তাকিয়ে ছিলেন। সামিরা তখন বিছানায় শোয়া অবস্থান টিভি দেখছিলেন। সামিরা তখন সালমানকে জিজ্ঞাসা করে, কী দেখছো? সালমান শাহ কোনো কিছু না বলে বাথরুমে চলে যান।

সেখান থেকে বের হয়ে তিনি ড্রেসিং রুমে চলে যান এবং ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। এ সময় কাজের সাহায্যকারী ডলি তার ছেলে ওমরকে বাথরুম থেকে গোসল করিয়ে বের হয়। ওমরের কাপড়-চোপড় ড্রেসিং রুমের ভেতরে থাকায় ওমর ও তার মা ডলি দরজা নক করেন। দরজা না খোলায় ওমর বাইর থেকে বার বার ডাকতে থাকে। ওমর ও ডলি ডাকার পরেও দরজা না খোলায় বিষয়টি সামিরাকে জানালে সামিরা ড্রেসিং রুমের চাবি এনে দরজা খোলে। তখন ওমর, ডলি, মনোয়ারা ও আবুল দরজার সামনে উপস্থিত ছিলো।

ড্রেসিংরুমের দরজা খুলতেই সালমান শাহকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখা যায়। এ সময় সামিরা চিৎকার করে সালমান শাহকে নিচ থেকে চেপে ধরে। তাকে সহযোগিতা করেন আবুল ও মানোয়ারা। ডলি রান্নাঘর থেকে বটি এনে অ্যালুমিনিয়ামের মই দিয়ে উঠে ফাঁস কেটে দেয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সালমান শাহকে ধরে পাশের বেডরুমে শুইয়ে দেওয়া হয়। সামিরা মাথায় পানি ঢালে, ডলি ও মনোয়ারা তেল গরম করে সালমানের বুকে, হাত-পা মালিশ করে। খবর পেয়ে সালমান শাহের ফ্ল্যাটে ছুটে আসেন দারোয়ান দেলোয়ার।

এরপর ছুটে আসেন সালমানের বাবা, মা-ভাইসহ আত্মীয়-স্বজনরা। তাকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হলি ফ্যামিলি থেকে সালমান শাহকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটন রোডের বাসা থেকে অভিনেতা চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহের নিথর দেহ উদ্ধার করে।

এ সময় তার বাবা কামরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী বাদী হয়ে অপমৃ”ত্যু মামলা করেন। পরে, ২৪ জুলাই, ১৯৯৭ সালে তিনি তার ছেলেকে হ”ত্যার অভিযোগ করে মামলাটিকে হ”ত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করেন।

১৮ বছর আগে ঘটে যাওয়া এই মৃ”ত্যু হ”ত্যা নাকি আত্মহনন তা নির্ধারণে গত বছরের জানুয়ারিতে আবারও আদালতে মামলা ওঠে। এরপর আদালত পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন।

About bisso Jit

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *