পাকিস্তান-বাংলাদেশ প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্র। এবং দেশ দুটি দক্ষিন এশিয়ার অর্ন্তভূক্ত। দেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও পাকিস্তানের সঙ্গে তেমন সুসম্পর্ক গড়ে উঠেনি বাংলাদেশের। তবে পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আপ্রান ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি এই সম্পর্ক জোড়ালো করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ সফরের আমন্ত্রন জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। লিখিত ভাবে এই আমন্ত্রনে সম্মত জানালেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি পাকিস্তানকে লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি পাকিস্তান সফরে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। তবে সফরের জন্য এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার পাকিস্তানের সাথে শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য তার সরকারের আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশে পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকীর সঙ্গে ঢাকায় বৈঠককালে তিনি এ কথা বলেন। পাকিস্তানি পক্ষ বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সফরের জন্য একটি রোড ম্যাপ তৈরি করতে যাতে তা ফলপ্রসূ হয়। অধিকন্তু, ইসলামাবাদ পররাষ্ট্র সচিবদের সংলাপের মতো দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করতে চাইছে, যা প্রায় ১৩ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়নি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই পক্ষ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সম্মত হয়েছে। প্রায় এগারো মাসের মধ্যে শেখ হাসিনা ও সিদ্দিকীর মধ্যে এটি ছিল দ্বিতীয় বৈঠক। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জমাট বেঁধে থাকার পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতার মধ্যে এই বৈঠকটি হয়েছিল। এটি লক্ষণীয় যে, এই বৈঠকটি এমন একটি সময়ে হয়েছিল যখন উভয় দেশই শেখ হাসিনার প্রথম পাকিস্তান সফরের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার পর যখন ‘যুদ্ধাপরাধের’ বিচার পুনরায় শুরু করেছিলেন। এতে পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতি ঘটে। যুদ্ধবন্দীদের প্রত্যাবাসনের জন্য ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান সর্বদাই ১৯৭১ সালের পরাজয়ের ঘটনা একটি বন্ধ অধ্যায় হিসাবে বিবেচনা করে।
তবে গত বছর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হতে শুরু করে। গত বছর ভারত কর্তৃক বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়নের পর দিল্লি-ঢাকা সম্পর্ক অবনতি হওয়ার পটভূমিতে পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটেছে। তাছাড়া ঢাকায় ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাবও পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, পাকিস্তানের হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ইমরান খানের শুভেচ্ছা ও বন্ধুত্বের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিতে ১৯৭৪ সালে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তান সফরের একটি ফটো অ্যালবামও উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহারের জন্য হাইকমিশনারকে ধন্যবাদ জানান এবং ইমরান খানের শুভেচ্ছার উত্তর দেন।
অবশ্যে গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। এবং এই দুই দেশ একে অন্যের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। তবে দুই দেশই উন্নয়নের তাগিদে একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন এবং যৌথ ভাবে কাজ করার ইচ্ছা পোষন করেছে।