Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Exclusive / বড় শক্তিগুলোর কূটনৈতিক লড়াইয়ের ক্ষেত্র এখন বাংলাদেশ, ভিন্ন তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের

বড় শক্তিগুলোর কূটনৈতিক লড়াইয়ের ক্ষেত্র এখন বাংলাদেশ, ভিন্ন তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের

বাংলাদেশ এখন একটি বা দুটি নয়, তিনটি পরাশক্তির কূটনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে একটি পরাশক্তির সুবিধা নিতে গিয়ে অন্য পরাশক্তির সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এটি বাংলাদেশের জন্য শূন্যের জন্য লড়াই নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা নিয়ে আলোচনায় ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছেন।

শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে কুগেলম্যান ছাড়াও প্রায় ২০ জন বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞ ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা উপস্থাপন করেন। সেমিনারে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা বলেন, ঢাকা ইন্দো-প্যাসিফিককে সামরিকীকরণ করতে চায় না।

বিআইআইএসএস এবং বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল স্টাডিজ (বিএফআরএস) যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক যোগাযোগের কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।

আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ড. শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা মনে করি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কোনো সামরিক উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ কিছু করবে না।

সেমিনারে প্রধান বক্তা পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশ সবাইকে নিয়ে কাজ করার সুযোগ দিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক (সংক্ষেপে আইপিও) ঘোষণা করেছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে, বাংলাদেশ সমস্ত ইন্দো-প্যাসিফিক পরিকল্পনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশের আইপিও শুধু সমুদ্রকেন্দ্রিক নয়, এখানে ভূমিও গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পন্থা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বিভাজন সৃষ্টিকারী বা কাউকে বাদ দেওয়ার নীতি অনুসরণ করতে পারে না।

সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই যে নিরাপত্তা বা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা মানে নতুন সামরিক জোট বা বলয়ে প্রবেশ করা নয়। তিনি বলেন, সংযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন নয়াদিল্লি সফরে জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় কানেক্টিভিটি বিশেষ গুরুত্ব পাবে।

উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার কূটনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এর বাইরে প্রতিবেশী ভারতের স্বার্থ তো আছেই। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র, ভারত-চীন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

কুগেলম্যান বলেন, এই অঞ্চলের কোনো দেশ চীনের ওপর নির্ভরশীল হোক তা যুক্তরাষ্ট্র চায় না। যুক্তরাষ্ট্র নেপালকে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশনে (এমসিসি) অন্তর্ভুক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এমসিসি ইন্দো-পলিসি নীতির অংশ। এর মাধ্যমে আসলে নেপালকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিযোগিতার মধ্যে টেনে আনা হয়েছে।

মাইকেল কুগেলম্যান বড় শক্তিগুলোর প্রতিযোগিতার পাশাপাশি মিয়ানমারের কাছে ভারতের অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে চীনকে ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।

পাকিস্তানের ইমরান খানের উদাহরণ দিয়ে বিশ্লেষক কুগেলম্যান বলেন, ইমরান খানের মস্কো সফর যুক্তরাষ্ট্র পছন্দ করেনি। এরপর টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছিল।

গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা জাহাজ বাংলাদেশ ও ভারত থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন কুগেলম্যান। তিনি বলেন, চীন নিয়ে জোরালো অবস্থান নিতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

সেমিনারে ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) সালমান পারিসি ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আইওআরএ ও বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গির সাদৃশ্য তুলে ধরে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

টোকিও ইউনিভার্সিটি অব ফরেন স্টাডিজের অধ্যাপক হিডেকি শিনোডা বলেন, জাপান বাংলাদেশকে উদীয়মান বৈশ্বিক শক্তি মনে করে। জাপান ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির আওতায় বাংলাদেশের সঙ্গে তার বৈশ্বিক এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করতে চায়।

ব্যাংককের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক সুরাত হরাচাইকুল বলেন, বাংলাদেশের মতো থাইল্যান্ডও কারো সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক চায় না। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও ভাবনার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। এই পার্থক্য দূর করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

কলম্বোর লক্ষ্মণ কাদিরগামার ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক রবিনাথ পি আরিয়াসিনহা বলেন, বিশ্বরাজনীতিতে প্রতিযোগী শক্তিগুলোর চাপের মধ্যেও বাংলাদেশ নিরপেক্ষ থাকতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বৈশ্বিক রাজনীতির ছাপ আছে। চরম প্রতিযোগিতা শুধু অঞ্চলে নয়, বৈশ্বিক অঙ্গনেও আছে।

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও চ্যালেঞ্জের কেন্দ্র হয়ে উঠছে এবং উঠবে। এখানে একে অপরের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। ন্যাশনাল ম্যারিটাইম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডমিরাল (অব.) করমবির সিং বলেন, ‘সমুদ্র আমাদের বিচ্ছিন্ন করে না, সংযুক্ত করে। তাই আমাদের মধ্যে সহযোগিতা, সমন্বয়, সংযুক্তি থাকা প্রয়োজন।’

ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক ইকবাল সিং সেভেয়া বলেন, বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি এ দেশের অবস্থান বদল নয়, বরং নীতির ধারাবাহিকতা।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যখন নিরপেক্ষ অবস্থান নিচ্ছি তখন ভূ-রাজনীতি বদলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন সমৃদ্ধির দেশ। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ, পশ্চিমাদের প্রত্যাশার শিকার আমরা।’

ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের প্রাক্তন হাইকমিশনার এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মাহমুদ হোসেন বলেছেন যে, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল আসলে চীনকে থামানোর জন্য মার্কিন উদ্যোগ। বাংলাদেশ যাতে বেলজিয়ামের মতো না হয় তার জন্য শক্তিশালী সামরিক বাহিনী দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, “এখন পর্যন্ত যে দেশগুলো ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বা রূপকল্প ঘোষণা করেছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সবাইকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে। আমরা প্রথাগত ও অপ্রথাগত নিরাপত্তাঝুঁকির মধ্যে কোনো রেখা টানতে পারি না। এ জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’

লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র বা চীন বাংলাদেশ চায়নি। এখন দুই দেশই বাংলাদেশকে কাছে টানছে। এর মানে আমরা ১৯৭০-এর দশকের পরিস্থিতিতে নেই। অন্যান্য দেশের প্রয়োজন বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন বঙ্গোপসাগরের কেন্দ্রস্থল। বাংলাদেশে কোনো সমস্যা হলে তা সমগ্র অঞ্চলের জন্যই সমস্যা। সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর, সাবেক উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পঙ্কজ শরণ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর বে অব বেঙ্গল স্টাডিজের পরিচালক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ডেভিড ব্রুস্টার, ভারতীয় সাংবাদিক ড. এবং পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক রাজা মোহন, বিআইআইএসএসের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এএফএম গাওসুল আজম সরকার, মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল স্টাডিজের চেয়ারম্যান এএসএম শামসুল আরেফিন প্রমুখ।

 

 

About bisso Jit

Check Also

চুলের মুঠি ধরে নারী চিকিৎসককে রোগীর মারধর (ভিডিও সহ)

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসককে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *