Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ইরাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি মুসলিম

ইরাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি মুসলিম

নবাবগঞ্জের দারিকান্দা গ্রামের মুসলিম মোল্লা (৩০) দারিদ্রতা কাটিয়ে ও তার ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ২০১৬ সালের দিকে ইরাকে চলে যান। কিন্তু ইরাকে থাকাকালীন কিছু বাংলাদেশি মুসলিমকে অপহরণ করে।

এরপর অপহরণকারীরা নির্মম নির্যাতনের ভিডিও আইএমও অ্যাপের মাধ্যমে মুসলিমের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে ওই মুসলিমদের হ/ত্যা করা হবে বলেও পরিবারকে হুমকি দেয় দলটি।

এমন করুণ অবস্থা ও নির্যাতনের ভিডিও দেখে ছেলের মুক্তির জন্য অপহরণকারীদের কাছে ১২টি বিকাশ নম্বরে ৬ লাখ টাকা পাঠান কাতার মুসলিমের মা খাতেজা বেগম। এ ঘটনায় মুসলিম মোল্লার মা খাতেজা বেগম বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে মামলার তদন্তভার নেয় পিবিআই ঢাকা জেলা।

তদন্তের একপর্যায়ে বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাগুরা ও খুলনায় অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এরা সবাই ইরাকের মুসলিম মোল্লাদের নির্যাতন ও মুক্তিপণের সাথে জড়িত।

সোমবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংগঠনটির ইউনিট ইনচার্জ ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ কুদরত-ই-খুদা।

তিনি বলেন, মোসলেম মোল্লা ২০১৬ সালে জীবিকার তাগিদে কাজের উদ্দেশ্যে ইরাক যান। ইরাকে অবস্থানকালে সেলিম মিয়া ও শামীমসহ আরও কয়েকজন অজ্ঞাতনামা আসামিরা মোসলেম মোল্লাকে কাজের কথা বলে ইরাকে তার বর্তমান কর্মস্থল থেকে অন্যত্র অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ইমো অ্যাপের মাধ্যমে কল দিয়ে সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা। মুক্তিপণ না দিলে তার ছেলেকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয় চক্রটি।

অপহৃতের মা খতেজা বেগম তার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য নবাবগঞ্জ থানাধীন পাড়াগ্রাম বাজার থেকে ১২টি বিকাশ নম্বরে ছয় লাখ টাকা দেন। পরবর্তীতে আসামিরা ভুক্তভোগী যুবককে মুক্তি না দিয়ে আবারও তার মায়ের কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করে।

পরে ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর, ৬ অক্টোবর, ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এবং ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট ও ২৩ আগস্ট বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাগুরা এবং খুলনায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন আলী হোসেন (৪৯), মো. শামীম (২৫), শিরিন সুলতানা (৩৫), মোহাম্মদ ঘরামী (৫১), রবিউল ঘরামী (২৪), শাহিদা বেগম (৫২), সাহনাজ আক্তার লিপি (৩৮) ও মো. আকবর সরদার (৫৫)।

পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, ইরাকে অবস্থানকালে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি সেলিম মিয়া নামের একজনের সঙ্গে ভুক্তভোগী যুবকের পরিচয় হয়। সেলিম ভুক্তভোগী যুবককে ভালো বেতনের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে আসামি আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর ও সাব্বিরের হাতে তুলে দেন। আসামিরা ভুক্তভোগী যুবক মোসলেমকে নিয়ে একটি আবদ্ধ রুমে আটক করে তার সঙ্গে থাকা দুই হাজার ইউএস ডলার ও দেড় লাখ টাকা মূল্যের আইফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে নির্যাতন করতে থাকে।

তিনি বলেন, নির্মম, বর্বরোচিত নির্যাতনের তিন দিন পর নির্যাতিতার মা খাতেজা বেগমকে ইমো অ্যাপের মাধ্যমে লাইভ ভিডিও কল দেখিয়ে সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।

ভুক্তভোগীর মা খাতেজা বেগম তার ছেলের নির্যাতন সইতে না পেরে আসামিদের পাঠানো ১২টি বিকাশ নম্বরে ২৬টি লেনদেনের মাধ্যমে মোট ছয় লাখ টাকা পাঠান। অভিযুক্ত আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর ও সাব্বির ইরাকে অবস্থান করলেও তাদের পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশে বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টের দোকান ও তাদের ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বর থেকে মুক্তিপণের টাকা তুলে নিয়ে যায়।

শাহনেওয়াজ অপহরণ চক্রের মূল হোতা। গ্রেফতারকৃত আট আসামীকে আদালতে হাজির করা হয় এবং তাদের মধ্যে ছয়জন ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে আলী হোসেন (৪৯), মোহাম্মদ ঘরামী (৫১) ও রবিউল ঘরামী (২৪) এর বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর ও মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা রয়েছে। অভিযুক্তও। আকবর সরদারের (৫৫) বিরুদ্ধে মাগুরার মোহাম্মদপুর থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা রয়েছে।

About Babu

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *