Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Exclusive / জনগণের পয়সায় বেতন-ভাতা, পরিবারের ভরণ-পোষণ, সেই জনগণকে স্যার বলা উচিৎ: প্রতিমন্ত্রী

জনগণের পয়সায় বেতন-ভাতা, পরিবারের ভরণ-পোষণ, সেই জনগণকে স্যার বলা উচিৎ: প্রতিমন্ত্রী

প্রশাসনিক কর্মকর্তারা, বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে যারা সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারী রয়েছেন, তাদের নিকট গিয়ে যদি কোনো সেবা গ্রহীতা ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বলে সম্বোধন না করে তবে তাদের ব্যবহারে কিংবা প্রতিক্রিয়ায় সাধারন মানুষ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। প্রশাসনও প্রায়ই কর্মকর্তাদের এই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখার পর বিব্রত না হয়ে পারেন না কারণ সেবা গ্রহীতাদের অনেকে তাদেরকে ‘স্যার বা ম্যাডাম বলে সম্বোধন না করে আপা বা ভাই বলে সম্বোধন করে থাকে। আবার, সরকার কর্মকর্তাদেরকে বিশেষ কোনো সম্বোধন করে কোনো নির্দেশনা দেওয়ার পক্ষে সরকার নয়। সরকারের মতে, সাধারণ মানুষকে সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বলার কোনো বিধি-ব্যবস্থা নেই। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকল স্তরের জনগণের সেবক।

কিন্তু জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক আমলারা বলছেন ‘স্যার’ বলার সংস্কৃতি উপনিবেশিক। প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা এখনও সেই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। মানসিকতার পরিবর্তন না হলে এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। সরকার কর্মকর্তাদের সেই মানসিকতা থেকে বের করার জন্য এ পর্যন্ত কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি।

মানুষকে তো একটা সম্বোধন করতে হবে। স্যারও বলা যেতে পারে, তাই বলে প্রভু হয়ে যাননি উনি। তিনি জনগণের সেবক। কাউকে ভদ্রোচিতভাবে সম্বোধন করার ক্ষেত্রে ‘স্যার’ বলা যেতে পারে। বাংলায় তো নানা ধরনের ভাষার শব্দের সংমিশ্রণ রয়েছে

সরকারি কর্মচারীরা জনগণের সেবক, প্রভু নয়—চাকরিতে প্রবেশের সময় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে তা কর্মকর্তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়ে এবং প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনলে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক আমলারা। দুপক্ষের জন্য সম্মানজনক একটি সম্বোধন নির্ধারণ কিংবা আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, কর্মকর্তাদের নাম ধরে ডাকার সংস্কৃতি চালু করা যায় বলেও জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘মানুষকে তো একটা সম্বোধন করতে হবে। স্যারও বলা যেতে পারে, তাই বলে প্রভু হয়ে যাননি উনি। তিনি জনগণের সেবক। কাউকে ভদ্রোচিতভাবে সম্বোধন করার ক্ষেত্রে ‘স্যার’ বলা যেতে পারে। বাংলায় তো নানা ধরনের ভাষার শব্দের সংমিশ্রণ রয়েছে।’

আমাদের তো একটা ক্লিয়ার মেসেজ গেছে। আমি বলে দিয়েছি স্যার বা ম্যাডাম বলার কোনো বিধান নেই। কোনো আইনে নেই যে তাকে এটা বলতে হবে। আমাদের জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে হবে। জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে হলে কেউ যদি বলে, রাগ করার তো কিছু নেই। আমার কাজটা হচ্ছে আপনাকে সার্ভিস দেওয়া

সম্বোধন নিয়ে তো মাঝে মাঝেই বিব্র’তকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের তো একটা ক্লিয়ার মেসেজ গেছে। আমি বলে দিয়েছি স্যার বা ম্যাডাম বলার কোনো বিধান নেই। কোনো আইনে নেই যে তাকে এটা বলতে হবে। আমাদের জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে হবে। জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে হলে কেউ যদি বলে, রা’গ করার তো কিছু নেই। আমার কাজটা হচ্ছে আপনাকে সার্ভিস দেওয়া।’

তিনি আরও বলেন, ‘জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, স্যার বলার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এই বলা দিয়ে কিছু হবে না। আমি যদি কোনো অফিসে যাই, আমাকে যদি তারা না চেনে, আমি যদি স্যার না বলি তারা আমাকে বের করে দেবে। আমি কিন্তু সরকারের একজন সচিব ছিলাম। যেখানে আমরা জনসেবার দায়িত্বে আছি, সেখানে আমরা প্রভুর মতো আচরণ করি। স্যার তো একটা অনুষঙ্গ মাত্র।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন বলেন, ‘পদবি ধরে কর্মকর্তাদের সম্বোধন করা যায়। পদের আগে মাননীয় বা সম্মানিত বলা যেতে পারে। এতে সম্মানজনকভাবে এর সমাধান হতে পারে। এমন একটা পথ বের করতে হবে, যেন জনগণের সম্মান রক্ষা হয় এবং কর্মকর্তারাও যেন সন্তুষ্ট থাকেন। এমন একটা সম্বোধন আমাদের বের করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন অনেক কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। এগুলোর ক্ষেত্রেও কিন্তু চিন্তা-ভাবনায় আমরা পরিবর্তন করতে পারছি। এখন প্রশাসনে অনেক ভালো ভালো শিক্ষার্থী আসছেন। অনেক সময় সরকারকে বিব্র’ত করার জন্যও কিছু কিছু ঘটনা ঘটে।’

এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘বিদেশে সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের নাম ধরে ডাকে (নাগরিকরা)। আমাদের এখানেও এই কালচার শুরু করে সবাইকে নাম ধরে ডাকা উচিত। এটাই ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস। এটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। তবেই এ সমস্যার সমাধান হবে।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, “স্যার বলার কালচার (সংস্কৃতি) শত শত বছর ধরে চলে আসছে। এটা আমাদের ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য। এটার লালন শুধু প্রশাসনেই নয়, সমাজের সবখানে। মেডিকেল কলেজের অধ্যাপককে ‘ভাই’ বলেন, দেখেন তার কী চেহারা হয়।”

বিদেশে সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের নাম ধরে ডাকে (নাগরিকরা)। আমাদের এখানেও এই কালচার শুরু করে সবাইকে নাম ধরে ডাকা উচিত। এটাই ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস। এটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। তবেই এ সমস্যার সমাধান হবে

তিনি বলেন, ১৮ লাখ সরকারি কর্মচারী, তাদের যদি আমাদের কৃষক ভাই স্যার না ডাকেন তারা রাগান্বিত হন। কখনো কখনো ডিসি-ইউএনওকে স্যার না বলায় তারা এমন একটা আচরণ করেন যেটায় খবর (সংবাদ) হয়। আমাদের আসলে যেতে হবে এ বিষয়টার গভীরে, যেটা ঔপনিবেশিক কালচার থেকে এসেছে, যা আমরা খুব চমৎকারভাবে লালন করছি।

‘উল্টো করে বলা যায়, জনগণের পয়সায় যাদের বেতন-ভাতা হয়, সেই বেতন নিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া হয়—সেই জনগণকে স্যার বলা দরকার। এ বিষয়টি আমাদের কালচারের মধ্যে প্রোথিত করতে হবে’—যোগ করেন সাবেক এই সিনিয়র সচিব।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমাদের সংস্কৃতিতে এমন কিছু করিনি বা আমরা এমন কিছু ট্রেনিংয়ে আনিনি যার মাধ্যমে তারা (কর্মকর্তারা) ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। এই সংস্কৃতি থেকে বের করে আনতে হলে সার্কুলার দিয়ে কোনো লাভ হবে না।’

তবে এটা বলা যায় নিজেদের মানসিকতা থেকে তারা স্যার বা ম্যাডাম ডাকের আশাবাদি নিয়ে তারা সরকারী অফিসের চেয়ারে বসেন। বাংলাদেশের অনেক মানুষ যারা প্রবীন তারা তাদের সরল মন দিয়ে এখনও অফিসের কম বয়সী কর্মকর্তা কিংবা মহিলা কর্মকর্তাদের বাবা কিংবা মা বলেও সম্বোধন করার মানসিকতা দেখা যায়। যারা সরকারী পর্যায়ের কোনো স্তরে অসীন তাদের উপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারন, সরকার জনগনের নিকট থেকে টাকা নিয়ে সেটাই কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীদের মাস গেলে বেতন হিসেবে দেওয়া হয়। সেক্ষত্রে তারা যদি মনে করেন, তারা সামান্য এবং সাধারন মানুষ তাহলে তাদের বিচার বিবেচনার দোষ আছে বলা যায়।

About

Check Also

চুলের মুঠি ধরে নারী চিকিৎসককে রোগীর মারধর (ভিডিও সহ)

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসককে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *