বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটসহ আরো বেশ কয়েকটি কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফরে আসছেন অতীতের তুলনায় একটু বেশি, এমনটাই দেখা যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার পর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার বিশেষ কারণে বাংলাদেশে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একজন গুরুত্বপূর্ন উপদেষ্টা। তার এই সফরটি সাধারনভাবে দেখছে না সরকার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অন্যতম উপদেষ্টা (বিশেষ সহকারী) এবং হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার ধারাবাহিক রাজনৈতিক সফরের অংশ হিসেবে ঢাকায় এসেছেন। শনিবার বিকেলে তিনি বাংলাদেশে পৌঁছার পর রাতেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একাধিক কূটনৈতিক সূত্র। চার দিনের সফরে রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচারের সঙ্গে একটি উচ্চ-পর্যায়ের মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রতিনিধি দল এসেছে। তাদের সফরে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। যার মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করা এবং র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
সূত্র জানায়, রোববার থেকে মার্কিন প্রতিনিধি দলের আনুষ্ঠানিক সফর শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজারে মিয়ানমার থেকে আগত শরনার্থীদের ক্যাম্প পরিদর্শন করবে। ঢাকায় ফিরে তারা পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি পর্যায়ে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে মার্কিন অ্যাডমিরাল মিজ লাউবাচারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে ওয়াশিংটন সফরে যান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারি অফ স্টেট ওয়েন্ডি শেরম্যানের সাথে সাক্ষাতের পাশাপাশি তিনি রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচারের সাথেও সাক্ষাৎ করেন।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস এ সময় জানায়- পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন অ্যাডমিরালের বৈঠকে স”/ন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ-মার্কিন পারস্পরিক সহযোগিতা, র্যাবের ওপর থেকে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, মিয়ানমার থেকে আগত শরনার্থীদের প্রত্যাবাসন, ইউক্রেন যু”দ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে আলোচনা হয়। আত্মস্বীকৃত খু”/নি রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।
এটি উল্লেখ করা উচিত যে মার্কিন রাষ্ট্রপতির প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা রিয়ার অ্যাডমিরাল মিজ লাউবাচার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিদ্যমান মার্কিন নৌ ঘাঁটি এবং এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিষয়টি দেখভাল করেন। তিনি দিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসে ডিফেন্স অ্যাটাচে হিসেবে কাজ করতেন। দিল্লিতে অবস্থানকালে, তিনি রিয়ার অ্যাডমিরাল পদে উন্নীত হন এবং ভারত সফররত মার্কিন নৌবাহিনীর একজন উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধি তাকে দিল্লিতে র্যাঙ্ক এবং ব্যাজ প্রদান করেন। বাংলাদেশ সফর শেষে ১০ জানুয়ারি মিজ লাউবাচার ও তার দলের শ্রীলঙ্কার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
চলমান মাসে আরও সফর হবে:
এদিকে, রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার (জানুয়ারির মাঝামাঝি) বিদায়ের পরপরই ঢাকায় আসছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। গত ১৪ই ডিসেম্বর রাজধানীর শাহিনবাগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল তাতে ওয়াশিংটন গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে। বিশেষ করে রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে সহকারী মন্ত্রী লু এবং বাইডেনের উপদেষ্টা রিয়ার এডমিরাল লাউবাচার ছাড়াও এই জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনের এক বা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ‘রাজনৈতিক সফর’ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সফরের এই সিরিজগুলিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব বলে মনে করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি উত্থাপন করতে পারেন। এখানে উল্লেখ্য যে, ঢাকায় রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাৎক্ষণিক উদ্বেগ প্রকাশের পরদিনই (ডিসেম্বর) মার্কিন সহকারী সচিব ডোনাল্ড লু ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে স্টেট ডিপার্টমেন্টে ডেকে পাঠান।
প্রসংগত, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানা ধরনের বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কূটনীতিকদের এ ধরনের বাংলাদেশ সফরের বিষয়টিতে নজর রাখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।