Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / শেষ পর্যন্ত ভেঙে গেল ২০ দলীয় জোট

শেষ পর্যন্ত ভেঙে গেল ২০ দলীয় জোট

বিএনপি এবং আরো বেশ কয়েকটি শরিক দল মিলে গঠন করা হয় ২০ দলীয় জোট। কিন্তু এই ২০ দলীয় জোট দীর্ঘদিন ধরে অনেকটা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। জোটের মধ্যে কার্যত কোনো ধরনের কর্মসূচি কিংবা বৈঠকও হয় না। তবে মাঝে মধ্যে বৈঠক করা হলেও অন্য কোন কার্যকর কর্মসূচি দেয় না জোটের পক্ষ থেকে। এই জোটে দেখা যায় শুধুমাত্র একে অপরের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। আগে ঐক্যবদ্ধভাবে একসাথে সমাবেশের কর্মসূচি পালন করতপ জোট, কিন্তু বর্তমান সময়ে জোটের প্রধান দল বিএনপি সবকিছু এভাবে করছে। ১০টি বিভাগে বৃহৎ জনসভাগুলোতেও জোটের শীর্ষ নেতাদের দেখা যায়নি।

জোটের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের মধ্যেও কাদা ছোড়াছুড়ি লক্ষ্য করা গেছে। একাধিক দল বের হয়ে গেছে। বেরিয়ে যাওয়া দলগুলোর একটি অংশ দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে জোটের সংখ্যা বহাল রাখা হয়।

জোটের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে বেশ কয়েকটি দলের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির প্রধান শরিক জামায়াতের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক আগের মতো নেই। টানাপোড়েন লক্ষ্য করা গেছে। এ অবস্থায় ২০ দলীয় জোটের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে কার্যত ভেঙে দেওয়া হয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। গত ৯ ডিসেম্বর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জোটের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে শরিকদের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। তবে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে না বিএনপি।

এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা না বলার জন্য শরিকদের অনুরোধও করেছে দলটি। ওই বৈঠকে শরিকদের ‘জোট’ বা ‘একক’- যে কোনো পরিস্থিতিতে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরই প্রেক্ষিতে জোটের ১১টি রাজনৈতিক দল নতুন ‘ফ্রন্ট’ গঠন করছে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘‘জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোট’’ নামে এই ফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এছাড়া ৬টি দলও আলাদা জোট গঠনের চেষ্টা করছে। তবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি এককভাবে কর্মসূচি পালন করবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান দেশের একটি গনমাধ্যমকে বলেন, ‘জোট হিসেবে ২০ দলের কোনো অস্তিত্ব নেই। এরই মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। জোটের শরিকরা একযোগে আন্দোলনে থাকবে বলে আশা করছি।

২০ দলীয় জোটের অন্তত ১৪টি শরিক দলের শীর্ষ নেতারাও জোট ভাঙার কথা গনমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন। তারা বলেন, গত ৯ ডিসেম্বরের বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেছেন, ‘২০ দল জোট হিসাবে নেই। বিএনপি ইতোমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আশা করছি জোটে থাকা শরিকরা যুগপৎ আন্দোলনে থাকবেন।’

জোটের শরিকদের উদ্দেশে বিএনপি নেতারা আরও বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ভাঙার ঘোষণা দেব না। কিন্তু আমরা যুগপৎ করছি। আপনারা প্রতিটি অবস্থান থেকে একযোগে আন্দোলন করবেন। আপনি যদি মনে করেন যে আপনাদের নিজেদের মধ্যে একটি সম্পর্ক বা বোঝাপড়া আছে, তাহলে তারা মিলে কিছু করবেন সেটাও করতে পারবেন। যে যেভাবে পারেন বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি সমর্থন করে যুগপৎ আন্দোলনে থাকবেন।’

প্রসঙ্গত, চারদলীয় জোট সম্প্রসারণ করে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল বিএনপির নেতৃত্বে ১৮টি দল ও পরে আরও কয়েকটি দল নিয়ে ২০ দলীয় জোট গঠিত হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে এই জোট গঠিত হয়েছিল ডানপন্থী ও কেন্দ্র-ডান দলগুলোর সমন্বয়ে।

সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোটের ১১টি রাজনৈতিক দল এখন ফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে দলগুলোর শীর্ষ নেতারা একাধিক বৈঠক করেছেন। প্রাথমিকভাবে ‘‘জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোট’ ও ‘সমমনা ১১ দল’-এ দুটি নাম ঠিক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী জোটের নাম আসার সম্ভাবনাই বেশি। জোট হবে যৌথ নেতৃত্বে এবং একজন সমন্বয়ক থাকবেন। ১১টি দল হলো- মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাফর), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় দল, এম আবু তাহেরের নেতৃত্বে এনডিপি, শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এলডিপি, অ্যাডভোকেট জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামের নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মাওলানা আবদুর রকীবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট, কমরেড নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল ও অ্যাডভোকেট আবুল কাসেমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি।

এ বিষয়ে সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম যিনি বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন তিনি দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা সকলেই চলমান যুগপৎ আন্দোলন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। যাতে করে আন্দোলন সুসংহতভাবে এবং কার্যকরভাবে সফল হয়। আমাদের আসল লক্ষ্য হলো ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং সেই সাথে সরকারের পতন ঘটানো।

 

 

About bisso Jit

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *