Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে বেড়ে গেল সংকট, পন্য রপ্তানিতেও নতুন এক সমস্যা

এবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে বেড়ে গেল সংকট, পন্য রপ্তানিতেও নতুন এক সমস্যা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি চাপ সৃষ্টি হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর, যার কারনে বাংলাদেশের অর্থনীতিও দূর্বল হয়ে পড়েছে। সেই সাথে বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণও অনেক কমেছে। বৈদেশিক লেনদেন অনেক কমাতে হচ্ছে সরকারকে যার কারনে ঝুঁকির মাত্রাও বাড়ছে। কমিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক ধরনের পন্য আমদানি। চলমান আমদানি ব্যয়ের সাথে, আগে স্থগিত আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য ব্যাংকগুলিতে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হতে যে পরিমান ডলারের চাহিদা রয়েছে সেই অনুযায়ী ডলার দেওয়া হচ্ছে না।

ফলে অনেক ব্যাংক এখন আগের আমদানির টাকা ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না। আমদানি ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হচ্ছে। সাময়িকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হলেও ভবিষ্যতে চাপ বাড়বে।

সম্প্রতি আইএমএফ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। তারা বলেছেন, মজুদ ক্রমাগত কমছে। এই হ্রাস উদ্বেগের বিষয়।

সূত্র জানায়, বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলারে ওঠানামা করছে। এ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলসহ কয়েকটি ফান্ডে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এটি বাদ দিলে রিজার্ভ হয় ২৬ বিলিয়ন ডলার। যা দিয়ে বর্তমানে নিয়ন্ত্রিত আমদানির মধ্যে সাড়ে চার মাসের ব্যয় মেটানো যাবে। কিন্তু পূর্বে বিলম্বিত আমদানি ঋণ পরিশোধের জন্য এই রিজার্ভ ব্যবহার করতে হবে। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের সুদ ও মূল টাকাও পরিশোধ করতে হবে। এসব খাতে ব্যয় আগের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের পর পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হওয়ায় বিদেশে চিকিৎসা, শিক্ষা ও ভ্রমণের ব্যয়ও বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। বর্তমানে এলসি খোলার পরিমাণ ৫৫০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। গত জুনে আমদানি বিল সর্বোচ্চ ৮.৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। এখন তা নেমে এসেছে ৬৫০ মিলিয়ন ডলারে। এর আগে, বিদেশী ঋণ এবং সুদ প্রদান গড়ে প্রতি মাসে প্রায় $২৫০ মিলিয়ন হত। এখন দিতে হবে ৪৫ মিলিয়ন ডলার। প্রায় $৪০০ মিলিয়ন প্রতি মাসে ভ্রমণ, চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে যায়।

এ হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রপ্তানি আয় গড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার। রেমিটেন্স বাবদ আসছে ১৫০ মিলিয়ন ডলার। ফলে প্রতি মাসে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি হচ্ছে ১ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এই ডলার দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে এক কোটি ডলার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছে। কিন্তু এখন মজুদ কমে যাওয়ায় ডলারের সরবরাহ কমে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলোও ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না।

এর মধ্যে সরকারি একটি ব্যাংক ১১ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। উল্লিখিত ঋণ পরিশোধের জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। আরও দুটি সরকারি ব্যাংক জ্বালানি তেল আমদানির ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। আরও দুটি সরকারি ব্যাংকের গ্যারান্টিতে দুবাইয়ের একটি ব্যাংক থেকে একটি কোম্পানিকে বৈদেশিক মুদ্রা ঋণ দেওয়া হয়েছে। ডলার সংকটের কারণে ওই দুই ব্যাংক তাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না।

ফলে সরকারি ব্যাংকের নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট থেকে ডলার দিয়ে ঋণ সমন্বয় করে ব্যাংক অব দুবাই। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু ঋণ পরিশোধ না করার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে, সরবরাহকারী ও ক্রেতাদের ঋণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খোলা এলসিগুলির পরিশোধের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ বাড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আগামী জানুয়ারি থেকে ডলার সংকট কমবে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম কমেছে। এতে আমদানি ব্যয় কমবে। এ ছাড়া বকেয়া এলসি ঋণ পরিশোধের চাপও কমবে।

গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এরপর থেকে তা কমতে থাকে। এখন তা দাঁড়িয়েছে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে।

রিজার্ভ বাড়াতে রেমিটেন্স বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। হুন্ডি বন্ধ করে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে রপ্তানি আয় বাড়ানো এখন চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। কারণ বাংলাদেশ থেকে যেসব পন্য রপ্তানি করার মাধ্যমে একটি বড় আয় আসে সেই পন্যের বাজারগুলোতে মন্দা দেখা দিয়েছে। ফলে বিদেশ থেকে রপ্তানি আদেশ অনেকাংশে কমেছে। সেই সাথে, যে সমস্ত রপ্তানি শিল্প রয়েছে সেগুলোর পন্যের কাঁচামাল আমদানি করার জন্য ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার পরিমাণও কমেছে, যেটা দাঁড়িয়েছে ২৯ শতাংশ ।

About bisso Jit

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *