বাংলা ছোট ও বড় পর্দার অত্যন্ত খ্যাতিমান জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তবে পর্দায় ‘বাঁধন’ নামেই অধিক পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি। ২০২১ সালে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্যদিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যান বাঁধন। এরপর থেকে ক্যারিয়ারে আর কখনোই পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি টাকে।
তবে অনেকটা বর্ণময় জীবন তাঁর। কখনও গার্হস্থ্য হিংসা, কখনও আবার পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে মুখ খুলেছেন নায়িকা। এক কন্যাসন্তানের মায়ের লড়াইটা সহজ ছিল না।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলেন। পড়ালেখার প্রতি তার অবিরাম আকর্ষণ। নায়িকার দাবি, দাম্পত্য জীবনে তাকে চরম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।
২০১০ সালে হঠাৎ বিয়ে করেন এই নায়িকা। তার সাবেক স্বামীর নাম মাশরুর সিদ্দিকী। সায়রা মাশরুর বাঁধনের একমাত্র মেয়ে। সবার অজান্তেই তারা যেমন বিয়ে করে ফেলেন, তেমনি বিচ্ছেদও হয়ে যায় হঠাৎ করেই। যদিও তারা ২০১৪ সালে আইনিভাবে আলাদা হয়েছিলেন, অভিনেত্রী এটি সবার থেকে গোপন রেখেছিলেন।
বাঁধনের বিরুদ্ধে তার প্রাক্তন স্বামী চরিত্রহীনতা ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেছিলেন। কিন্তু নায়িকার দাবি, তার স্বামী তাকে মারধর করতেন। চরম নির্যাতন করতেন। এমনকি তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্কও করতে চেষ্টা চালাতেন তার প্রাত্তন স্বামী। যার জন্য তিনি এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চান। কারণ, বাঁধন চাননি তার পারিবারিক সমস্যা সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলুক।
এদিকে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবিতে অভিনয়ের পর বদলে যায় বাধনের জীবন। একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তার চলচ্চিত্র মনোনীত হওয়ার পর তার ক্যারিয়ারে মোড় নেয়। ছবিটি সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বাঁধন বলেন, ‘গত বছরে অনেক উৎসবে গিয়েছি। আমি আমার জীবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বছর পার করছি। অবশ্যই কান। সেখান থেকে অনেক উৎসবে গিয়েছি। ভাবতেই অবাক লাগে। এবং বেশিরভাগই নিজের আগ্রহ থেকেই যাওয়া। এটা একটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা। এই যাত্রা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জীবনকে দেখলাম সম্পূর্ণ উল্টাপাল্টা।
বাঁধন জানান, গত জুলাইয়ের এই সফরে একা একা গান গেয়ে চিৎকার করে কেঁদেছেন। অতীতের সব ভুল ও যন্ত্রণার ভারে নিজেকে হালকা করে নিয়েছেন তিনি। বললেন, ‘এখানে আমি একা অচেনা। আমার পরিচিতি শুধুই একটি ছোট্ট প্রায় অচেনা দেশের সিনেমা। কিন্তু তারা (উৎসব কর্তৃপক্ষ) আমাকে অনেক ভালোবেসেছে। সেরা অভিনেত্রীর স্বীকৃতি দিলো। সেটাও ভোলার নয়। আর স্পেন সহ অন্য সব ট্যুরে অসংখ্য বড়লোকদের দেখার পর একটা কথা বারবার মনে পড়ল, বড় মানুষ, নম্র বা নম্র তারাই দিনশেষে বড় হয়।
স্পেন সফরের অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফেরার পর বাঁধন তার একমাত্র মেয়েকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যখন সে ১৮ বছর বয়সী হবে, আমি তাকে এমন একটি সফরে পাঠাব।’ কারণ, সে তার মেয়েকে এমন স্বাধীনতার সুখ দিতে চায়। যেখান থেকে জীবনকে দেখা যায় আতশকাচে।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টারে’ রানার-আপ হওয়ার মধ্যদিয়ে মিডিয়ায় যাত্রা শুরু করেন বাঁধন। এরপর ছোট পর্দায় অভিনয় করে ভক্তদের মাঝে দারুন সাড়া পান তিনি। বর্তমানে বিশাল সংখ্যক এক অনুসারী গড়ে উঠেছে তার।