অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বে দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে এবং আগামি দু -একদিনের মধ্যে দলটি স্বকীয়তা নিয়ে আসছে। গণফোরাম হতে বেরিয়ে আসার পর ড. রেজা কিবরিয়ার সাথে থেকে এই নতুন গঠিত হতে যাওয়া রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিতে সঙ্গে থাকছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর, রাশেদ এবং সেই সাথে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বেশ কিছু সংখ্যক নেতা। হলের বুকিংয়ের উপর নির্ভর করে নতুন এই দলটির যাত্রা আগামীকাল বা আগামি পরশু শুরু হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে গতকাল দেশের একটি জনপ্রিয় গনমাধ্যম ড. রেজা কিবরিয়ার সাথে কথা বলতে চাইলে, তিনি বলেন, দেশকে কিছু দেওয়ার জন্য বিদেশের একটি লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দিয়ে এসেছি। আমি সেখানে ভালো ছিলাম। কিন্তু আমি যদি দেশের জন্য কিছু করতে পারি, তাহলে সেটা হবে আমার জন্য অনেক বেশি দামী। আমি জনগনের দোয়া চাই ও তাদেরকে পাশে চাই। আমরা হলের প্রাপ্যতা সাপেক্ষে আগামি ২০ অক্টোবর (বুধবার) আমাদের রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের পরিকল্পনা গ্রহন করেছি।
আমরা জাতির সামনে আমাদের ঘোষণাপত্র তুলে ধরতে চাই। ডান-বাম সবাইকে নিয়েই হবে নতুন দল। আলাপচারিতায় নবীণ রাজনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া বলেন, আমাদের দল হবে নির্বাচনমুখী। তবে কোনো প্র’তা/’রণামূলক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা আমাদের নেই। আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ ১৫ বছর আগে গ্রহণযোগ্য দল ছিল। এখন তারা জনগণের গ্রহণযোগ্য দল নয়। কারণ, আওয়ামী লীগ এখন গণরায় বা জনগণকে ভ’/য় পায়। তারা জনগণের রাজনীতি করে না। এখানে তারা বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি করেছে। আমরা সেই শূন্যতাই পূরণ করতে চাই। আমরা একটি মধ্যমপন্থা গণতান্ত্রিক দল হিসেবে মাঠে নামতে চাই। ডান-বাম সব পক্ষকেই সমন্বয় করে নতুন নেতৃত্বে চলবে আমাদের দল। ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, নতুন দলের ঘোষণার একটু বিলম্বের কারণ হলো- এ নিয়ে নূর, রাশেদসহ সংশ্লিষ্ট সবাই তৃণমূল পর্যায়ে অনেকের সঙ্গেই কথা বলছেন।
সবার সঙ্গে কথা বলেই নতুন দল গঠন করা হচ্ছে। আমরা কী করতে চাই, তা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। এ সরকারের অ’ন্যা/য়, জু’/লু’/ম-নি’/র্যা’/তন, মানবাধিকার ল’ঙ্ঘ’/ন, গু’ম, খু’/নের বিরু’দ্ধে আমরা অবস্থান নেব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারবি/রো’ধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ না থাকলে এই অপশক্তিকে হ’টানো যাবে না। আমাদের দল আত্মপ্রকাশ ঘটলে প্রয়োজনে আমরা বিএনপির সঙ্গেও আলোচনায় বসব। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা হয়। আমরা চাই, ডান-বাম সবার ঐক্য। সবাই একত্রে কাজ না করলে এই সরকারকে সরাতে পারব না। তাদের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক না থাকলেও কিছু অপশক্তির সঙ্গে যোগসা’জশ আছে। আমরা মনে করি, জনগণের জয় হবেই। এই মুহুর্তে আওয়ামী লীগের ১৫ শতাংশ জনগণের সমর্থন আছে কি না তা নিয়েও স’ন্দেহ আছে।
এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগের মতো দলে পরিণত হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত হবে ইনশাআল্লাহ। ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ আগে বলত, তারা গণতান্ত্রিক ও মানুষের বাক স্বাধীনতার পক্ষের দল। এটা এখন মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের কাজ হবে, দেশকে গণতান্ত্রিক ধা’রায় ফিরিয়ে আনা। মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া। দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করা। বিগত ৫০ বছরে কোটিপতি শ্রেণি তৈরি হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলার দল খুবই কম। আমরা সাধারণ মানুষের পক্ষেই থাকব। দেশকে অনেক শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করতে চাই।
দেশ পরিচালনায় দক্ষ ও যোগ্য লোকদের দেখতে চাই। দুর্নী’/তিবা’জ, ঘু’ষখোর, চুরি বা তোষামোদীদের নেতৃত্বে দেখতে চাই না। আমরা নতুন একটি দেশ গড়তে চাই। সেই আশা নিয়েই নতুন দলের যাত্রা শুরু হবে। এটা হবে জনগণের গ্রহণযোগ্য নির্বাচনমুখী দল। নতুন দলের ভিশন কী জানতে চাইলে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আমাদের ভিশন অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম। আমাদের ভিশন পাঁচটি। এক নম্বর হলো, বাংলাদেশের জনগণ সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। এটা নিয়ে কোনো বি’ত/র্কের সুযোগ নেই। এটা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। দ্বিতীয়ত, দেশ চলবে বাংলাদেশের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে। অর্থাৎ ‘বাংলাদেশ ফাস্ট’।
দেশের মানুষের সুবিধা অসুবিধাকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। তৃতীয়ত, আমাদের ঘোষণাপত্রে মানুষের বাক স্বাধীনতা ও ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। ভিন্নমতের মানুষকে ‘ব্ল্যাক’ আইনে অ’ত্যা/’চার নি’/র্যা’/তন বন্ধ করা হবে। চতুর্থত, যে মানুষটি দরিদ্রতার ক’শাঘা’তে জন্মগ্রহণ করে সেখান থেকে তুলে আনার ব্যবস্থা করব। এটা সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমরা তাদের মৌলিক অধিকার পূরণ করতে চাই।
আগামির বাংলাদেশের জন্য যারা নতুন প্রজন্ম হিসেবে এই দেশ পরিচালনা করবে তাদের জন্য আমরা কেমন বাংলাদেশ রেখে যাব সেটার একটি মহা পরিকল্পনার রূপরেখা। আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চাই। আমরা আমাদের এই মাতৃভূমিটিকে একটি মর্যাদাপূর্ণ দেশে পরিণত করব এবং সে লক্ষ্যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আমাদের চিন্তাভাবনা অন্যান্য যে রাজনৈতিক দল রয়েছে সেগুলো থেকে আলাদা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ব্যাপারে কেউ কিছু বলে না বা কোন কিছু করে না। বাংলাদেশে যেভাবে সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা অকল্পনীয়। তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের দলের যে রাজনৈতিক ইশতেহার সেটা অচিরেই জাতির সামনে উপস্থাপন করব। ছাত্র, শ্রমিক এবং পেশাজীবী সহ সকল শ্রেণীর এবং পেশার প্রতিনিধিদের আমাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সমস্ত বিভাগীয় শহর থেকে আমরা প্রতিনিধি নিব এবং শহর এলাকায় আমাদের প্রতিনিধির সংখ্যা বেশি থাকবে। তবে প্রতিটি জেলা পর্যায়েও আমাদের প্রতিনিধিরাও নেতৃত্বে থাকবেন।