মা বিদিশা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ছেলে এরিক এরশাদের নানা অভিযোগের একটি অডিও ক্লিপ সম্প্রতি কয়েকদিন আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ব্যাপক আলোচনা শুরু হতে দেখা যায়। তবে পরবর্তীতে মায়ের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন এরিক। দাবি করেন, হুমকি দিয়ে তাকে এ সব কথা বলেন হয়েছে।
কিন্তু এরই মধ্যে জীবন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরিক এখন প্রেসিডেন্ট পার্কে তার মা বিদিশার কাছে বন্দি রয়েছেন বলে জানা গেছে। ট্রাস্ট ডিরেক্টররা এরিকের সাথে দেখা করতে বা কথা বলতে পারছে না৷ কিছুদিন আগে এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদকে ফোন করে মা বিদিশার কাছ থেকে বাঁচার জন্য আকুতি করেন এরিক। সেই কথোপকথনের অডিও রয়েছে। এরিক বলতে শোনা যায়, ‘আমাকে বাঁচাও।’ তাকে (বিদিশা) এখান থেকে সরিয়ে না দিলে আমি আ;;ত্মহ”ত্যা’র পথ বেছে নেব।” ফলে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এরিকের নিরাপত্তা চান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আজ মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ এরিকের নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। আবেদনে বলা হয়, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশায় তার ছেলে এরিকের ২০১৯ সালে ভরণ-পোষণসহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে তার নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করেন। এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পরে ওই বছরের ১৪ জুলাই তার মৃত্যুর পর ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় সকল সদস্যের সিদ্ধান্তে মেজর (অব.) খালেদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০২০ সালের ১২ জুলাই তিনিও মারা গেলে ট্রাস্টি বোর্ডের সকল সদস্যের সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজী মো. মামুনুর রশীদ। তিনি ট্রাস্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত বোর্ডের সকল সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে ট্রাস্ট পরিচালনা করে আসছেন। সুবিধাভোগী এরিক শিক্ষা, চিকিৎসা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ এরশাদের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করছেন। এরিকের সার্বিক দিক বিবেচনায় ট্রাস্ট গঠনের সময় ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের নিবন্ধিত দলিলপত্রে উল্লেখ করেন, সুবিধাভোগী শাহাতা জারব এরশাদ এরিকের মা বিদিশা সিদ্দিক কোনো প্রকার ভোগ, দখল বা ভোগ করতে পারবেন না। ট্রাস্টের তফসিলে উল্লিখিত সুবিধার। এই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তাকে শুধুমাত্র মানবিক কারণে রাষ্ট্রপতি পার্কে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা ট্রাস্টের সকল সদস্যদের জানা।
মৌখিক অনুমতি পাওয়ার পর তিনি (বিদিশা সিদ্দিক) মাঝেমধ্যে প্রেসিডেন্ট পার্কে রাত কাটাতেন। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা জানতে পারলে বিদিশা সিদ্দিকীকে ট্রাস্ট ডিডে উল্লেখিত নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে অবহিত করা হয় এবং রাষ্ট্রপতি পার্কে রাত্রিযাপন অবৈধ বলা হলেও তিনি তা আমলে নেননি। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, বিদিশা তার দলের সাথে রাষ্ট্রপতি পার্কে স্বঘোষিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং ট্রাস্ট আইনের বিরুদ্ধে, পিটিশনে বলা হয়েছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, এরিক এরশাদের (সুবিধাভোগীর) মৌখিক ও লিখিত নিরাপত্তাহীনতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ ট্রাস্টি বোর্ডের সকল সদস্যসহ প্রেসিডেন্ট পার্কে গেলে বিদিশা সিদ্দিক তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। যা সকল সদস্যদের বিস্মিত করেছে। তিনি সুবিধাভোগীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তার নেতা-কর্মীরা চেয়ারম্যানসহ বোর্ড সদস্যদের হুমকি-ধমকি দেন। তাই তারা (ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা) প্রেসিডেন্ট পার্ক এবং এরিকের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। এরিকের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ফোনটিও কেড়ে নেন মা বিদিশা সিদ্দিক। বর্তমানে তিনি প্রেসিডেন্ট পার্কে দলীয় লোক নিয়োগ করে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন।
এ প্রেক্ষাপটে সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শাহাতা জারাব এরশাদ এরিককে বন্দিদশা থেকে উদ্ধারে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। একই সঙ্গে এরিককে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে সত্য উদঘাটন ও দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয় আবেদনে।
আবেদনের অনুলিপি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), মেট্রোপলিটন পুলিশের মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, গুলশান জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার বরাবর পাঠানো হয়েছে।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমি এরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। কারণ, বিদিশা যেভাবে তার ছেলেকে মানসিকভাবে নির্যাতন করছে, তাতে এরিকের জীবন বিপন্ন হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পার্কে থাকার অধিকার বিদিশার নেই। তিনি এরশাদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী। এরশাদ লিখিতভাবে জানিয়েছেন, বিদিশা তার বাড়ি ও ট্রাস্টের কোনো সম্পত্তি হস্তক্ষেপ বা দখল করতে পারবেন না।
এ ঘটনায় রীতিমতো বেশ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। যেহেতু ইতিমধ্যেই এরিক এরশাদ দাবি করেছেন যে, তিনি তার মায়ের কাছেই ভালোই আছেন, জীবনের ভয়ে তিনি এ সব কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন।