জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ দুর্নীতি মামলায় দীর্ঘ দুই বছরেরও অধিক সময় কারাভোগের পর গত বছর থেকে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে মুক্ত রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তবে বর্তমানে ঢাকা রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। তার শারীরিক অবস্থায় ভালো নয়।
খালেদা জিয়ার এখনো থেমে থেমে জ্বর আসছে। খাওয়ায় রুচিও কমে গেছে। কয়েক দিন ধরে তিনি খুব অল্পই খেতে পারছেন। শুক্রবার তার বোন সেলিমা ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
এদিকে, খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় বিএনপির উদ্যোগে গতকাল বাদ জুমা দেশব্যাপী মসজিদে মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি আরও জানান, অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়েও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেলিমা ইসলাম জানান, খালেদা জিয়াকে তিনি দেখতে যাননি, বয়সের কারণে তার হাসপাতালে যাওয়ায় নিষেধ আছে। গত বৃহস্পতিবার তার ভাইয়ের স্ত্রী দেখে এসেছেন। সেলিমা ইসলাম বলেন, যতটুকু জেনেছি, এখনো তার (খালেদা জিয়ার) শরীরে জ্বর আছে। খাওয়ার রুচি একদমই নেই। চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়া তার বাসার বাবুর্চির রান্না করা খাবারই খাচ্ছেন।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে নতুন করে সরকারের কাছে আবেদন করা হবে কিনা জানতে চাইলে সেলিমা ইসলাম বলেন, আমরা তো দুবার আবেদন করেছি। একবার আমার ভাই (শামীম ইস্কান্দার) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অফিসে গিয়ে দেখা করেও এসেছেন। এর পরও তো অনুমতি দেয়নি। মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) বৃহস্পতিবারও বলেছেন, দেশে চিকিৎসা সম্ভব নয়। বিদেশে পাঠানো দরকার। এ জন্য খালেদা জিয়ার জামিন দিতে বলেছেন তিনি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন তো তার (খালেদা জিয়া) সঙ্গে আমার কথা হয়নি। তার কী মতামত, সেটা না নিয়ে তো কিছু করা যাবে না। মতামত নেওয়ার পর এই (আবেদন) বিষয়ে চিন্তা করা যেতে পারে।
জ্বর নিয়ে গত ১২ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। এর পর তার আল্ট্রাসনোগ্রামসহ বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে। আজকালের মধ্যেই রিপোর্ট পাওয়ার কথা। তবে কিছু কিছু রিপোর্ট পর্যালোচনা করে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা সে অনুযায়ী ওষুধ দিয়েছেন। লন্ডন থেকে চিকিৎসা তদারকি করছেন তার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান।
খালেদা জিয়ার এক ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানান, তিনি গত বৃহস্পতিবার তাকে দেখে এসেছেন। ধীরে ধীরে জ্বর কমে এলেও তিনি অন্যান্য অনেক রোগে আক্রান্ত। এজন্য গত দুদিনে তার বেশ কিছু পরীক্ষা করানো হয়েছে। কিছু পরীক্ষার রিপোর্ট হাতেও পেয়েছি। সেই অনুযায়ী ওষুধও দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স এবং শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় নিলে দেশে নয়, এখন তার বিদেশে চিকিৎসা প্রয়োজন। একসঙ্গে অনেক রোগের চিকিৎসার জন্য যে ধরনের আধুনিক মেডিক্যাল সেন্টার দরকার, তা দেশে নেই।
এদিকে এর আগে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করে, তাকে যত দ্রুত সম্ভব উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে হবে বলে দাবি করেছেন বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীরা। আর এ জন্য সরকারের কাছে আবেদনও করেছেন তারা। তবে এ আবেদনে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি।