আর্ন্তজাতিক মানের বিশ্বে বেশ কিছু সংস্থা রয়েছে যারার বিশ্বের বিভভিন্ন দেশের নানা বিষয়ের উপর অনেক ধরনের জরিপ করে থাকে। এবং বিশ্বের সেরা সব বিষয় গুলো তুলে ধরে। সম্প্রতি অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স বিশ্বের মোট ১৩ হাজার ৫৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা বিজ্ঞানীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯ গবেষকের নাম উঠেছে বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায়।
অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স র্যাংকিং-২০২১ এ স্থান পেয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯ গবেষকের নাম। বিশ্বের মোট ১৩ হাজার ৫৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ লাখ ৮ হাজার ৬৭৫ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন এই গবেষকরা। এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স এর তথ্য মতে, মোট ১২টি ক্যাটাগরিতে গবেষকদের ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ক্যাটাগরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন, বিজনেস এন্ড ম্যানেজমেন্ট ক্যাটাগরিতে ১ জন, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ক্যাটাগরিতে ২০ জন, মেডিকেল এন্ড হেলথ সায়েন্স ক্যাটাগরিতে ২৪ জন, সোশ্যাল সায়েন্স ক্যাটাগরিতে ২ জন, ন্যাচারাল সায়েন্স ৩৮ জন ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ৭ জনের নাম স্থান পেয়েছে। অন্যদিকে হিস্ট্রি, ফিলোসফি এন্ড থিওলোজি, ল এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ, আর্টস, ডিজাইন এন্ড আর্কিটেকচার, ইকোনোমিকস এন্ড ইকোনোমেট্রিক্স, এডুকেশন এই ৫টি ক্যাটাগরিতে কোনো গবেষকের নাম পাওয়া যায়নি। এডি ইনডেক্স এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তালিকা প্রকাশ করতে গুগল স্কলারে এইচ-ইনডেক্স এবং আই১০ ইনডেক্স স্কোর এবং সাইটেশনের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীদের মোট এবং শেষ পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন তারা। নিজ নিজ গবেষণার বিষয় অনুযায়ী গবেষকদের বিশ্ববিদ্যালয়, নিজ দেশ ও বিশ্বে গবেষকদের অবস্থান নিয়েও তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির সেরা ৫ গবেষকের তালিকাও দিয়েছে তারা। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক এম আলী আকবর। অধ্যাপক আকবর বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে গণিত বিষয়ে গবেষণায় প্রথম স্থানে আছেন। এশিয়ায় তার অবস্থান ২১৫ এবং বিশ্বে অবস্থান ১ হাজার ৪০৩। তৃতীয় স্থানে আছেন ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন। এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ক্যাটাগরির ফিশারিজ বিভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংক্রান্ত গবেষণায় অবস্থান প্রথম। বাংলাদেশে তার অবস্থান ২য়, এশিয়ায় ৬২তম এবং বিশ্বে ৩৬৯তম অবস্থানে আছেন তিনি। তালিকার চতুর্থ স্থানে আছেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান। বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বিষয়ে গবেষণায় রাবিতে ১ম, বাংলাদেশে ৩য় এবং এশিয়ায় ৪৮৪ তম অবস্থানে আছেন তিনি। বিশ্বে এ বিষয়ের গবেষণায় তাঁর অবস্থান ৪ হাজার ২৫তম।
তালিকার পঞ্চম স্থানে আছেন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু রেজা। অধ্যাপক আবু রেজা গবেষণা করছেন মলিকুলার বায়োলজি এন্ড জেনেটিক্স নিয়ে। রাবিতে তার অবস্থান ১ম এবং বাংলাদেশে ৩য়। এছাড়া এশিয়ায় ৪৯৫ তম এবং বিশ্বে এ বিষয়ে গবেষণায় ৩ হাজার ৩৭০তম।
এ বিষয়ে গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. তানজিমা ইয়াসমিন বলেন, ‘গবেষণা করে যখন কোনো কিছু অর্জন করা যায়, সেটা অবশ্যই আনন্দের খবর। আর বিশ্বসেরা তালিকায় থাকা আরও বেশি প্রাপ্তির। তবে গবেষকদের আমরা সেভাবে ল্যাব ফ্যাসিলিটিসসহ অন্যান্য সুবিধাগুলো যথাযথভাবে দিতে পারছি না। গবেষকরা অনেক কষ্ট করে গবেষণার কাজ করছেন। এবারের বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় আমার বিভাগেরই ৯ জন শিক্ষক রয়েছেন। আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি, আমরা গবেষকরা পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পাই না। যদি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গবেষণার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করে, তবে নিশ্চয় আগামীতে আমরা আরও ভালো অবস্থানে থাকবো।’
বর্তমান সময়ে বিশ্বের উন্নত দেশ গুলোর সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষাখাত। দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশের সরকার এই খাতের উন্নয়নের জন্য আপ্রান ভাবে কাজ করছে। ইতিমধ্যে শিক্ষাখাতের উন্নয়েনর লক্ষ্যে বিশ্ব দরবারে অনেক সম্মাননা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি বাংলাদেশের অনেকেই রয়েছে যারা কিনা অর্ন্তজাতিক অঙ্গনেও উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে নিজেদের নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছে। এই সম্মাননাও বাংলাদেশের জন্য গৌরবের এবং সম্মানের।