সাম্প্রতিক প্রবাসী ব্যবসায়ী কে আটক করায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে অনেক প্রবাসী ভাইয়েরা। তাদের দাবি পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই ব্যবসায়ীদের আটক করা হয়েছে। যে ঘটনা খুবই নিন্দনীয় বলে দাবি করছে তারা। এছাড়া অনেক প্রবাসী ওই সাত প্রবাসী মুক্তির দাবি জানায়। এই ঘটনা সম্পর্কে সংবাদ মাধ্যম দ্বারা জানা যায়, সাত প্রবাসী ব্যবসায়ীকে আটকের ঘটনায় লন্ডন ও সিলেট-সুনামগঞ্জে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’-এর বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশ নিতে লন্ডন থেকে ঢাকায় এসেছেন কোম্পানির সাত পরিচালক। কিন্তু গ্রাহকের পলিসির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাদের মতিঝিলে কোম্পানির প্রধান কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপককে একই মামলায় আসামি করেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। অভিযোগ, এই সাত প্রবাসী ব্যবসায়ী দেশে ফিরে ক্ষুব্ধ হয়ে গোপনে পুলিশকে খবর দিয়ে তাদের সোপর্দ করেন। গ্রেফতারকৃতরা সবাই যুক্তরাজ্যের নাগরিক এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা।
গ্রেফতারকৃত সাত ব্যবসায়ী হলেন, সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার বাসিন্দা জামাল মিয়া ও তার ভাই কামাল মিয়া, বিশ্বনাথের আব্দুল আহাদ ও তার ভাই আব্দুল হাই, ছাতকের জামাল উদ্দিন ও শাহজালাল উপশহরের আব্দুর রাজ্জাক। তাদের মধ্যে জামাল মিয়া কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান এবং বাকিরা সবাই পরিচালক। আবদুর রবের আরেক পরিচালকের পরিচয় জানা যায়নি।
জানা গেছে, কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা ২১ সেপ্টেম্বর হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে ডাকা হয়। লন্ডন থেকে সাত ব্যবসায়ী ঢাকায় এসে বৈঠকে অংশ নেন।
এ সময় মতিঝিল থানা পুলিশ ওই কার্যালয়ে অভিযান চালায়। তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে গ্রেফতার করা হয়।মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাত খান জানান, গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের একটি মামলায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তবে দেশের বাইরে থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। দেশে ফেরার খবর পেয়ে তাদের গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
বীমা গ্রাহকদের পলিসির টাকা আত্মসাৎ করে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে মাগুরা জেলার শালিখা থানার আড়পাড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়েছে। আদালত মামলাগুলো আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ওয়ারেন্টের কপি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে ওয়ারেন্ট তামিলের জন্য মতিঝিল থানায় পাঠানো হয়। আদালতের নির্দেশে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
এদিকে, কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান ও ছয় পরিচালকের বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হলেও রহস্যজনক কারণে চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়নি। এ নিয়ে রহস্য রয়েছে।
গত বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত বীমা কোম্পানির প্রধান কার্যালয় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানা গেছে। দেশে বিদেশে তাদের নামে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জামাল মাকদুস তার নিজ গ্রামে ছাতক থানার জামাল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের কাছে ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কের উদ্যোক্তা পরিচালকদের একজন। হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, ঘটনাটি একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা।
এদিকে, কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অর্থ অপব্যবহার এবং দীর্ঘদিন ধরে বীমা দাবি নিষ্পত্তি না করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ব্যবস্থাপনায় রয়েছে নানা অনিয়ম। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। প্রবাসী পরিচালকরা দেশের পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা কমিটিকে বারবার তাগিদ দিলেও তারা কোনো উদ্যোগ নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে দেশে ফিরে গোপনে পুলিশকে খবর দিয়ে তাদের সোপর্দ করে। এমনকি এ মামলায় দেশের পরিচালক বা ব্যবস্থাপনা কমিটির কাউকে আসামি করা হয়নি। আবারও পাল্টা অভিযোগ রয়েছে, প্রবাসী পরিচালকরা দেশে যারা আছেন তাদের কোণঠাসা করতেন এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় একতরফা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শ্রমিকদের বাধ্য করতেন। এতে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও নিউ ডে-এর সম্পাদক মহিব চৌধুরী ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বলেন, মাতৃভূমির কারণে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিরা এখানে বিনিয়োগ করেছে। তাদের বিনিয়োগ রক্ষার দায়িত্বও সরকারের। এসব প্রবাসীদের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। কারণ সাধারণত কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হলে তার চেয়ারম্যান, এমডি-জিএম-এর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তবে এক্ষেত্রে তেমন কিছু নেই। এতে ঘটনা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে মূল ঘটনা উদঘাটনের দাবি জানান।
ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এক্সপাকে আকৃষ্ট করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় গনমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর অনেক পাঠক তাদের মন্তব্যে জানিয়েছেন, তাদের পরিকল্পিতভাবে আটক করা হয়েছে। উন্নত বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা দেশের ভোক্তা হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে দেশে বিনিয়োগ করেননি। তাদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে তাদের মামলার সাথে জড়িতদের ফাঁদে ফেলা হয়েছে। এতে দেশের বদনাম হবে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে প্রবাসীদের মুক্তি দাবি করছি।