অভিনেতা, নাট্যকার ও পরিচালক এনামুল হক গতকাল (সোমবার) অর্থাৎ ১১ অক্টোবর বিকেল ৪ টায় রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত তার নিজের বাসভবনে ই’ন্তেকাল করেছেন। তার পরিবারের সদস্যরা এই খবর নিশ্চিত করেন। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। একুশে পদক বিজয়ী এই কিংবদন্তি অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। শিক্ষক এনামুল হকের আকস্মিক প্রস্থান দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শো’কের ছায়া ফেলেছে।
এনামুল হক ১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী সদরের মাতবীতে জন্ম গ্রহন করেন, তার বাবা ওবায়দুল হক এবং মা রাজিয়া খাতুন দুজনও ছিলেন বিশিষ্ট জন। এনামুল হকের পুরো পরিবার থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার স্ত্রী লাকী আনাম একজন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব। তাদের দুই মেয়ে হল হৃদি হক (লিটু আনামের সাথে বিবাহিত) এবং প্রয়তি হক (সাজু খাদেমের সাথে বিবাহিত)। তিনি ছিলেন একজন একজন সফল মানুষ। নিজেকে তিনি এমনটা মনে করতেন। অবশ্য সেটা হবেই বা না কেন? এই শিক্ষাবিদের কথায়-
‘সব সময়ই আমি নতুন কিছু শিখতে চেয়েছি। অজানাকে জানার প্রবল ইচ্ছাশক্তি ছিল আমার। তা ছাড়া আমি প্রতিষ্ঠিত মানুষের কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে গভীরভাবে জানার চেষ্টা করতাম। তখন মনে হতো নিজের কাজটা সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে করে যেতে পারলে সফল হওয়া যাবে। সেভাবেই সব সময় জীবনযাপন করেছি। আমার কোনো আফসোস নেই’, এই কথাগুলো সদ্য প্রয়াত অভিনেতা ড. ইনামুল হকের। দীর্ঘ জীবনে তিনি নিজেকে সব সময় সফল মানুষদের একজন মনে করতেন।
যৌবনকাল থেকে সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে বেড়ে উঠেছেন এই অভিনেতা। তখন কি আপনার মনে হয়েছিল আজকের এই পর্যায়ে আসবেন?
এমন প্রশ্নে ইনামুল জানিয়েছিলেন, ‘জীবনে কতটা সফল হব, সেটা জানতাম না। তবে ছোট থেকেই জ্ঞানী মানুষদের আত্মজীবনী পড়ে তাঁদের কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতাম। তখন মনে হতো তাঁরা এত পরিচিত হয়েছেন কীভাবে, নিশ্চই এর পেছনে তাঁদের কর্ম রয়েছে। আমি ঠিক করলাম বড় বিজ্ঞানী, ভালো লেখকসহ অনেকের জীবন নিয়ে খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করব। শুরু করলাম পড়াশোনা। আমার বোধোদয় হলো, আমি যদি তাঁদের মতো নিরলসভাবে কোনো কাজ করে যেতে পারি, তাহলে আমিও পরিচিত হতে পারি। এই জন্য পরিশ্রম করে যেতে হয়েছে।’
ইনামুল হক সব সময় ভাবতেন, যা পেয়েছি এর চেয়ে বেশি কিছু পাওয়ার থাকতে পারে না। তাঁর যাপিত জীবন থেকেও তিনি শিক্ষা নিতে বলেছেন তরুণদের। তিনি সেই সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি কাজের মাধ্যমেই এগিয়ে গিয়েছি। আমি অকর্মা মানুষ নই। অকর্মা মানুষ থাকতেও চাই না। সব সময় কিছু না কিছু করে গেছি। সেটা যেমন দেশ বা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য, তেমনি আমার পরিবারের জন্য।’
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তাঁকে অনেকবার শুনতে হয়েছে, শিক্ষকতা এবং নাটকের সঙ্গে কোনো বৈরিতা আছে কি না? এমন প্রশ্নে সব সময় ইনামুল হক বলতেন, ‘দুটোর মধ্যে কোনো বৈরিতা নেই। কারণ, সেখানেও একটা শিক্ষা। নাটকেও একটা শিক্ষা।’ এই শিক্ষা জীবনব্যাপী চালিয়ে গিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তী তত্ববিদ এবং নাট্যকার, এনামুল হক ১৯৬৮ সালে মোস্তফা মনোয়ারের টেলিফিকশন “মুখোরা রমনি বশিকরন” -এ অভিনয়ের মাধ্যমে দেশের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যাত্রা শুরু করেন। একই বছরে, তিনি একজন নাট্যকার হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং এ পর্যন্ত তিনি “অনেকদিনের একদিন, সেইসব দিনগুলো, নির্জন সৈকতে, কে বা আপন কে বা পর” সহ প্রায় ৬০ টির মতো টেলিভিশন নাটক লিখেছেন।
১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান সরকারের বিরু’দ্ধে বেশ কিছু পথ নাটকে মঞ্চস্থ করেন এবং সেই নাটকে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ড. এনামুল হকের স্ত্রী লাকী ইনাম, একজন স্বনামধন্য থিস্পিয়ান এবং দুই কন্যা (অভিনেতা হৃদি হক এবং প্রোতি হক) রেখে গেছেন।