Sunday , November 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আন্দোলন রুখতে আ.লীগের পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আনলো বিএনপি, হাইকমান্ডের কঠোর সিদ্ধান্ত

আন্দোলন রুখতে আ.লীগের পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আনলো বিএনপি, হাইকমান্ডের কঠোর সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক ও বিরোধী দল বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে অনেকটা অনড় প্রতিজ্ঞ হয়ে রাজপথে নামছে। বিএনপি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে গদি থেকে সরিয়ে দিতে রাজপথ বেছে নিয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আমাদের এই ন্যায় সঙ্গত দাবী যদি পূরণ করা না হয়, তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনভাবে অংশ নেয়া হবে না এবং সেইসাথে তারা আগামী নির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়। এই দাবির ভিত্তিতে বিএনপি এখন নানাভাবে নিজেদের ভিত্তি মজবুত করার চেষ্টা করছে। এছাড়া আগামী মাসে একযোগে আন্দোলনে যাচ্ছে সরকারবিরোধী দলগুলো।

২০০৬ সাল থেকে বিএনপি অনেক চেষ্টা করেও ঘুরে দাঁড়াতে হিমশিম খাচ্ছে। রজনীতে সক্রিয় হতে পারছেন না দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দণ্ড মাথায় নিয়ে লন্ডনে। এ অবস্থায় ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের কোনো পথ দেখছেন না বিএনপি নেতারা। নেতারা বলছেন, আন্দোলন ছাড়া কোনো উপায় নেই। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হলেও সরকারের বিরুদ্ধে মাঠের আন্দোলনে বেশ সতর্ক বিএনপি। এবার একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে লক্ষ্যে পৌঁছানোর পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচি দমন করতে আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে হামলা-মামলার পথে হাঁটছে, মাঠ পর্যায়ে শক্ত অবস্থান নিতে কোনো ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হবে বলেও মনে করে বিএনপির হাইকমান্ড। সে কথা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনকালীন সময়ের দাবি না মানলে রাজপথে সরকার পরিবর্তন করা হবে। তিনি বলেন, এখন রাস্তাই একমাত্র সমাধান। সরকার উদ্যোগ না নিলে, এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যেসব দাবি জানিয়েছি, তা যদি মানা না হয়- তাহলে একমাত্র সমাধান রাজপথ। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে কোণঠাসা করতে নানা কৌশলে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তিনি বিকল্প জোট গড়ার কৌশল নিয়েছেন, বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক, বিএনপিতে ফাটল সৃষ্টি, ১৪ দলের শরিকদের টানছেন। এর বাইরে সরকার ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা বিএনপিকে বিভিন্নভাবে আর্থিকভাবে সহায়তাকারী নেতাদের ওপর হা”মলা ও হয়”রানি করতে দ্বিধা করবে না, প্রয়োজনে তাদের শারীরিকভাবে আঘা”ত করতেও দ্বিধা করবে না। মূলত এই মুহূর্তে কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করে বিএনপিকে দুর্বল অবস্থানে রাখতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এসব কারণে মাঠে আন্দোলনে বিএনপি সতর্ক, ঐক্য অটুট রেখে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একযোগে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য পাশে থাকার চেষ্টা চলছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে রাজনীতি ও জাতীয় নির্বাচনে সমঝোতার লক্ষণ দেখছে না বিএনপি। তাই দাবি আদায়ে আন্দোলনের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। রাজপথে আন্দোলনে দাবি আদায় হবে। নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আন্দোলন সফল করতে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলন ও নির্বাচন-পরবর্তী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র-পরিবর্তন কর্মসূচির রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের প্রেক্ষাপটে এই কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর আগামী মাসের মাঝামাঝি এ রূপরেখা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবে বিএনপি। একযোগে আন্দোলনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ডান-বাম-ইসলামী দলগুলোর ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি।

সূত্র জানায়, প্রথম দফায় সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শর্তের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ সরকারকে পতন করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন গুরুত্বপূর্ণ। আন্দোলনের প্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে, এটি যুগপত বা স্ব-গতি হবে। সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে সংলাপে নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া বেশিরভাগ প্রস্তাবই বিএনপির রূপরেখায় স্থান পেয়েছে। বিএনপির মতো একই মনের সেই সব দলের পরিকল্পনা প্রায় একই হওয়ায় রূপরেখা নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকবে না। রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর সংবিধানের সার্বিক পর্যালোচনার জন্য সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন গঠন, প্রশাসনিক সংস্কারের লক্ষ্যে প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন। সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, মিডিয়া কমিশন সৎ সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। এটি করার জন্য অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশনের প্রতিশ্রুতি খুব স্পষ্টভাবে বলা হবে।

গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে একটি স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য, নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখা। সরকারের, রাষ্ট্রের তিনটি শাখার মধ্যে ক্ষমতা ও দায়িত্ব ও কর্তব্যের ভারসাম্য বজায় রাখা, নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের স্বাধীন ও শক্তিশালী সংশোধন, সদস্যদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ৭০ ধারার সংশোধন। কিছু সংবেদনশীল এলাকা ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ে সংসদ, রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে, সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা। এবং যোগ্য বিচারক নিয়োগের লক্ষ্যে, ৯৫(সি) ধারা অনুযায়ী বিচারক নিয়োগ আইন চালু করা হবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যিনি বিএনপির মহাসচিব এবং সিনিয়র নেতা তিনি আন্দোলনের বিষয়ে বলেছেন, স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যুক্তভাবে আন্দোলন করার রূপরেখা বাস্তবায়ন করার সকল ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করার পর সেটা সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে এবং সেটা খুব কম সময়ের মধ্যেই করা হবে। তবে আমাদের সামনে একটাই পথ রয়েছে আর সেটা হল পরিকল্পিত আন্দোলন।

About bisso Jit

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *