Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এর ভেতরে কী জানি একটা আছে, আমরা অনেককেই আস্থায় আনতে পারছি না : সিইসি

এর ভেতরে কী জানি একটা আছে, আমরা অনেককেই আস্থায় আনতে পারছি না : সিইসি

আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু – নিরপেক্ষ ও সকল দলের অংশগ্রহনের জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করছে নির্বাচন কমিশন। যার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দল থেকে শুরু বিভিন্ন ব্যক্তি বর্গের সাথে আলোচনা করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে তাদের আলোচনা সভায় প্রধান বিরোধী দলসহ বেশ কয়েকটি দল অংশ গ্রহন করেনি। এ আলোচনায় নির্বাচনায় ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলের বেশির ভাগই বিপক্ষে মত দেন। কিন্তু তাদের মতের উপেক্ষা করে ইসি ১৫০ আসনে ইভিএমের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।

নির্বাচন কমিশন-ইসি ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইভিএম দিয়ে কোনো কোনো সংসদীয় আসনে আগে নির্বাচন হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও এর ব্যবহার হয়েছে। সুতরাং পরীক্ষামূলক জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রয়োজন আর আছে বলে মনে করি না। যদি ইভিএম ত্রুটিপূর্ণ ফল দিয়ে থাকে, তাহলে এটি ব্যবহার না করাই উত্তম। যদি এটি শতভাগ না হোক, ৯০ ভাগও সঠিক ফল দিয়ে থাকে; তাহলে ৩০০ আসনে ইভিএম ব্যবহারে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন কেন অর্ধেক সংখ্যক আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করতে চাইছে? তাদের এই হাফ ডিজিটাল চিন্তাভাবনা কেন?

ব্যালট পেপারে ভোটের অনিয়ম নানাভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু ইভিএমের অনিয়ম প্রমাণ করা মেশিন পরিচালনার সঙ্গে জড়িতরা ছাড়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আগের কমিশনের আমলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ অনেক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। সবগুলোতেই কমবেশি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইভিএম কেন্দ্রের কোনোটিই ইসির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দেখা গেছে, ইভিএমে ত্রুটির কারণে কিছু কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করে পরে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ইভিএমে ভোট নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে। যে পদ্ধতিতেই ত্রুটি রয়েছে; সেই পদ্ধতিটি ব্যবহারের দিকে না যাওয়াই হবে নির্বাচন কমিশনের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত।

জাতীয় নির্বাচন কোনো পুতুল খেলা নয়। ফাঁসির দড়ি শক্ত কিনা, তা পরীক্ষার জন্য কোনো সাধারণ মানুষকে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে দেওয়া যায় না। জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে। ১৫১ আসনে জয়ী হলেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সরকার গঠনের সুযোগ পায় রাজনৈতিক দল বা জোট। সুতরাং ১৫০ আসনে বিতর্কিত পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী।

আমি ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে নই। মান্ধাতার আমলের কাগজি ব্যালট থেকে বের হয়ে আসা দরকার। কিন্তু ইভিএম যেহেতু স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারে না, তাই আমি ডিজিটাল পদ্ধতির পক্ষে নই। যদি ইভিএম সঠিক ফলাফল দিতে পারে, তাহলে ৩০০ আসনেই তা ব্যবহার করা হোক। অর্ধেক আসনে এর ব্যবহার নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

চলতি বছরের ৮ মে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রথমবারের মতো ইভিএম নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সারাদেশে ইভিএমে হবে। নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক ও কঠিন।’ এরপর সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ কমিশনের একাধিক সদস্য বলেন, ৩০০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সক্ষমতা ইসির নেই। তাদের কাছে থাকা মেশিন দিয়ে সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ভোট দেওয়া যাবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে ইসি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে বলেও ঘোষণা দেন সিইসি। তবে দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, তাদের কাছে দলগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তবে এর আগে একজন কমিশনার বলেছেন, ইভিএম ভোটে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গোপন কক্ষে ডাকাতরা। আরেক কমিশনার ইভিএম জালিয়াতি প্রমাণের জন্য নগদ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। পরে সিইসি আবার ওই কমিশনারের বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করেন। গত জুলাইয়ে ২২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ইসির সংলাপে অংশ নেয় এবং ইভিএম নিয়ে মত দিয়েছিল। তার মধ্যে ৯টি দলের মত ছিল সরাসরি ইভিএমের বিপক্ষে। পাঁচটি দল ইভিএম নিয়ে সংশয় ও সন্দেহের কথা বলেছে। শুধু আওয়ামী লীগসহ চারটি দল ইভিএমে ভোটের পক্ষে ছিল। বিএনপিসহ যে ৯টি দল ইসির সংলাপ বর্জন করেছিল, তারাও ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান পরিস্কার করেছে। এমনকি ৩১ জুলাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেছিলেন, ‘অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করছে না। এর ভেতরে কী জানি একটা আছে! আমরা অনেককেই আস্থায় আনতে পারছি না। ইভিএম বিষয়ে সংকট থেকে যাবে।

নতুন ইভিএম ক্রয় ও পুরাতন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রকল্পের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রকল্পের আকার এখনো চূড়ান্ত না হলেও দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, নতুন ইভিএম কেনার জন্য চার হাজার কোটি টাকার খসড়া প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। ইভিএম ত্রুটিপূর্ণ হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক টাকাও বরাদ্দ করা উচিত নয়। যদি ইভিএম ত্রুটিপূর্ণই হয়, তাহলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে এক টাকাও বরাদ্দ না দেওয়া। যদি এটি সঠিক ফল দেয়, তাহলে ১৫০ আসনের টাকা মন্ত্রণালয় দিতে পারলে ৩০০ আসনের টাকাও দিতে পারবে।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন ব্যবস্থায় ইভিএম ভালো কিছু আনতে পারবে না বলে অনেকে মন্তব্য করলে কেন যেন নির্বাচন এ থেকে বের হতে পারছে না। রাজনৈতিক দলগুলোসহ সুশীল সমাজও ইভিএমের বিপক্ষে মতা দিচ্ছে।

About Babu

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *