কাজী কেরামত আলী যিনি রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি হিসেবে রয়েছেন তিনি তার ছোট ভাই কাজী ইরাদত আলীকে এক স্বাক্ষরের মাধ্যমে তার দলীয় পদ লিখে দিয়েছেন। কেরামত আলী নামের ঐ এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। তিনি তার সেই পদটি তার ভাইকে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে লিখে দিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে খবর, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের আগে এই ধরনের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। ইরাদাত আলী সংসদ সদস্য পদে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার জন্য হু’/ম’কি দেওয়ার মাধ্যমে ভাইয়ের ওপর চা’প সৃষ্টি করেন। তিনি সেই সময় জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেশ সরব ভূমিকা নিয়েছিলেন। কেরামত আলী তার পদটি লিখে দেওয়ার পেছনেও রয়েছে কারন, তার ছোট ভাই দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে যাতে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেটাই ছিল উদ্দেশ্য। তিনি এই আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য।
জানতে চাইলে সাংসদ কাজী কেরামত আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি দেশের একটি গনমাধ্যমকে বলেন, ‘ছোট ভাই আবদার করে বসেন, তাই আমি রাজি হয়ে গেলাম। সে (ইরাদাত) নিজে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সবকিছু লিখে আনে। আমি তাতে স্বাক্ষর করেছি। ‘দলের সংবিধান বিষয়টি অনুমোদন করেছে কি না জানতে চাইলে এমপি বলেন,’ আমি আমার ছোট ভাইয়ের ইচ্ছাকে সন্তুষ্ট করতে করেছি এটা। ‘
ছোট ভাইকে পদ হস্তান্তর করে দেওয়ার পর পাল্টে যায় রাজবাড়ীর রাজনীতি। সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেন ইরাদত আলী। দলে সংসদ সদস্য হয়ে পড়েন অপাঙক্তেয়। তবে বড় ভাইকে একেবারে নিরাশ করেননি ইরাদত। তাঁকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি করেন তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাইয়ের কাছ থেকে পদ পাওয়ার পর ইরাদত আলী নিয়মিত দলীয় সভা করেছেন। দলীয় কর্মসূচিতেও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গঠনতন্ত্রবি’রো/ধী এসব কাজের আমরা বি’রো/ধিতা করেছি। তাঁরা রাজবাড়ী আওয়ামী লীগকে পারিবারিক সম্পদে পরিণত করেছেন।’
কেরামত আলী বলেন, ‘আমি সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে প্রায় সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তার (ছোট ভাই) সঙ্গে আলোচনা করতাম। কিন্তু তাকে সম্পাদক বানানোর পর পুরোপুরি বদলে যায়। আলোচনা তো করেই না, উল্টো আমাকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠা’সা করে ক্ষ’/তির চেষ্টা করে।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রার্থী হন কাজী কেরামত আলী। তখন তিনি টানা ১৬ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে। তাঁরা বলেন, দলীয় পদ এমন কোনো পণ্য নয় যে চাইলেই অন্য কারও হাতে তুলে দেওয়া যায়। যা ঘটেছে তা অবিশ্বাস্য।
রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মুক্তিযো’দ্ধা আকবর আলী মর্জি বলেন, আওয়ামী লীগের পদ কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয় যে ইচ্ছা হলেই স্ট্যাম্পে লিখে দেওয়া যায়। এভাবে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে পদ-পদবি হস্তান্তরের ঘটনা হাস্যকর। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিকে একাধিকবার লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, কেন্দ্র বিষয়টি জানেও। কিন্তু দু’র্ভাগ্যজনকভাবে কোনো প্রতিকার মেলেনি।
আকবর আলী মর্জির বয়স এখন ৭২ বছর। গতকাল তিনি বলেন, ‘এই বয়সে এসে অ’প/মান-অ’পদ/স্ত হতে হয়, এর চেয়ে বড় ন্যক্কারজনক আর কি হতে পারে। জেলা সভাপতি জিল্লুল হাকিম এবং ইরাদত আলী সিন্ডিকেটের কাছে বহু নেতাকর্মী নি’/র্যা’তি/ত।
স্থানীয় নির্বাচনের আগে দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, ষেই সময় তারা তার বিরু’দ্ধে প্রার্থী দেয়। তাদের রাজনীতির কৌশল হলো নৌকা প্রতীকের যে প্রার্থী থাকবে তাকে পরাজিত করা। এসব স্বেচ্ছাচারিতার সমাপ্তি টানা এখন অনেকটা জরুরি প্রয়োজন। ‘
জিল্লুল হাকিম যিনি রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং রাজবাড়ী-২ আসনের ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ। এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানার জন্য বেশ কয়েকবার ফোন করা সত্ত্বেও ফোন রিসিভ করেননি জিল্লুল হাকিম। এরপর তাকে মোবাইল ফোনে মেসেজ দেওয়া হয় কিন্তু কোনো রকম সাড়া মেলেনি। একইভাবে কাজী ইরাদাত আলীর সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তার কোনো সা’ড়া পাওয়া যায়নি।