ছোট পর্দার তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা ফারুক আহমেদ। তিনি তার অভিনয়ের মাধ্যম খব অল্প সময়ে দর্শকের মাঝে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হন। তিনি প্রয়াত কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম সেরা আবিষ্কার। ফারুক আহমেদ আজ সে মাপের অভিনেতা তাকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের গুরুত্ব অপরিসীম। হুমায়ূন আহমেদের অনেক নাটকে দক্ষতার সাথে অভিনয় করেছেন ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় অভিনেতা ফারুক আহমেদ।
এখনও তিনি অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফারুক আহমেদ বলেন, তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে ভয়, লজ্জা আর অপমানে!
বুধবার সকালে নিজের ফে/সবুক পেজে ছবিসহ এক পোস্টে এ কথা বলেন অভিনেতা। তিনি আরও লিখেছেন যে তিনি কখনও ভাবেননি যে তিনি একজন অভিনেতা হবেন। তিনি নিজেও জানেন না কীভাবে তিনি অভিনয়ে আসক্ত হয়েছিলেন।
ফারুক আহমেদের কথায়, “জীবনে আমি অভিনেতা হব এমনটা কখনো ভাবিনি। ছোটবেলায় আমি খুব লাজুক ছিলাম। আমার খালারা যখন আমাদের বাড়িতে আসতেন, আমি দৌড়ে গিয়ে বিছানার নিচে বা ঘরের মধ্যে লুকিয়ে থাকতাম। খালারা মাকে জিজ্ঞেস করতো, ফারুক কোথায়? মা তখন উত্তর দিলো, আবার কোথায়? দরজার টোকা দিতেই খাটের নিচে লুকিয়ে পড়েছে।
আমার কাজিনরা তখনই অভিযানে চলে যেত। জায়গায় জায়গায় খোঁজার সময় তারা আমাকে দরজা থেকে বা খাটের নীচ থেকে টেরে বের করতো। আমি আমার খালাদের সামনে হাঁটতাম এবং দাঁড়িয়ে থাকতাম যেন আমি বড় অপরাধী। কি অজানা লজ্জা তখন আমি মরতে চেয়েছিলাম।
খালারা আমাকে দেখা মাত্রই সব ধরনের বিব্রতকর প্রশ্ন করতে শুরু করবে। তোমার এই অবস্থা কেন? তুমি আগের চেয়ে কালো। খাওয়া-দাওয়া করবেন না? তুমি দেখতে খবিশের মতো। আমি কিছু বললাম না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতাম। সমস্ত অপমানজনক প্রশ্ন শেষ হলে, তারা আমাকে তাদের উপস্থিতি ছেড়ে যেতে বলত। আমি ধীরে ধীরে তাদের কাছ থেকে দূরে সরে যেতাম। সমবয়সী কাজিনরা আমাকে সান্ত্বনা দেবে, কিছুই হবে না। বড়রা আপনার ভালোর জন্যই বলে। মাঠে গিয়ে বল খেলি। তাদের সাথে মাঠে খেলতে যেতাম।
এভাবেই আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে নানা ভয়, লজ্জা, অপমান নিয়ে। লজ্জা আর ভয় কাটিয়ে কখন সাহসী হয়েছি মনে নেই। কেন অভিনয়ে আসক্ত হয়েছি তা বলতে পারব না। জানিনা আমার পথের শেষ কোথায়? আমি শুধু জানি আমি এখন একজন অভিনেতা। মানুষ আমাকে অভিনেতা হিসেবেই জানে।
মানিকগঞ্জের ছেলে ফারুক আহমেদ ১৯৮৩ সালে অভিনয় জীবন শুরু করেন। সে সময় তিনি ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেখানে তিনি হুমায়ুন ফরীদি, আফজাল হোসেন, সুবর্ণা মুস্তাফা, শিমুল ইউসুফ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, আহমেদ রুবেল ও লিটু আনামের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি ২৪ বছর ধরে থিয়েটারের সাথে যুক্ত ছিলেন।
ইমদাদুল হক মিলনের টিভি নাটক ‘বার রোকমের মানুষ’-এ রসিকলাল চরিত্রে অভিনয় করে প্রথম নজর কেড়েছিলেন ফারুক আহমেদ। এর কিছুদিন পরই তিনি হুমায়ূন আহমেদের নজরে আসেন। তার পরিচালিত ‘অচিন বৃক্ষ’ নাটকে অভিনয় করেন। সেই শুরু থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদের অধিকাংশ নাটকের প্রিয় মুখ ছিলেন ফারুক আহমেদ।
নাটকের পাশাপাশি ১৫টি ছবিতেও সুনামের সঙ্গে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। তিনিও লেখেন। অভিনেতা ‘কাল সপার দংশান’, ‘উচ্চ বংশ পাত্র চাই’, ‘ডিগবাজি’, ‘দুই ভাষা’ এবং ‘পানি পড়া’ সহ বেশ কয়েকটি নাটকের চিত্রনাট্য লিখেছেন। এছাড়া ‘বদরাগী বদরুল’ ও ‘হাউ মউ খাও’ নামে দুটি নাটকও পরিচালনা করেছেন তিনি।
অভিনয় জীবনে দীর্ঘ দিন পার হলেও লজ্জা তার পিছু ছাড়েনি। এখনো তিনি অনেক লাজুক ধরনের মানুষ। তবে বয়েসের পাশাপাশি এখন কিছুটা পরিবর্তন হলেও সম্পূর্ণ নিরাময় হয়নি বলেও জানান তিনি।