Sunday , November 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / শীর্ষ পদ থেকে সরতে হচ্ছে কাদের, নতুন আসছেন কারা

শীর্ষ পদ থেকে সরতে হচ্ছে কাদের, নতুন আসছেন কারা

আগামী বছরের শেষদিকে পূর্ণ হচ্ছে বর্তমান সরকারের মেয়াদ। এর পরেই রদবদল হতে পারে প্রশাসনের শীর্ষ পদে যারা রয়েছেন তাদের পদ বা পদায়ন। তবে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শীর্ষ পদের অনেক কর্মকর্তারা অবসরে যাবেন কিংবা স্বেচ্ছায় অবসর নেবেন। তবে নতুন করে প্রশাসনে অভ্যন্তরীণ ভাবেই পদায়ন হবে তবে মোটকথা শীর্ষ পদে রদবদল ব্যাপকভাবে হবে। কারা কোন পদে যাচ্ছেন কিংবা কারা অবসরে যাচ্ছেন সে বিষয়ে একটি খসড়া হিসাব পাওয়া গেল।

দুই সিনিয়র সচিবসহ ১০ জন সচিব আগামি ডিসেম্বরে চাকরি শেষে অবসরে যাবেন। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবসহ তিন সচিবের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। ফলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন সচিব এবং ১৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবসহ প্রশাসনের শীর্ষ পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও পদায়ন পেতে ইতোমধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে অন্তত দুই থেকে তিনজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, এবার প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোয় নিয়োগ ও পদায়ন হবে চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে। নির্বাচনী প্রশাসনের ব্যবস্থা করা হবে। ১২ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের শেষে বা ২০২৪ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যে কোনো নির্বাচনে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

ক্যাডারের কর্মকর্তা নিয়োগকারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নবম, দশম ও একাদশ বিসিএসের পাঁচ কর্মকর্তার নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে নবম ব্যাচের একজন কর্মকর্তার ভাগ্য খুলতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রশাসনে সিনিয়র সচিব/সচিব পদমর্যাদার ৮৫ জন কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক কর্মরত আছেন। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই সংখ্যা ৭৬। তাঁদের মধ্যে বিসিএস ১৯৮২ নিয়মিত ও স্পেশাল ব্যাচের একজন করে, ১৯৮৪ ব্যাচের পাঁচজন, ১৯৮৫ ব্যাচের দুজন, ১৯৮৬ ব্যাচের ১২ জন, নবম ব্যাচের ১০ জন, দশম ব্যাচের ২৫ জন এবং একাদশ ব্যাচের ২০ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিবসহ ১৩ জন চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। চলতি বছরের ১০ জন সচিব ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ২৬ জন সচিব আগামী বছর (২০২৩) অবসরে যাবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ডিসেম্বরে।

চুক্তিবদ্ধ সচিবদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র ও গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লা খন্দকারের মেয়াদ ২২ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে। নিয়মিত সচিবদের মধ্যে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ সচিব ফজলুল বারী সেপ্টেম্বরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পান। ইয়ামিন চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন অক্টোবরে অবসরে যাচ্ছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম এবং ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান অমিতাভ সরকার নভেম্বরে অবসরে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন আল রশিদ, বিপিএটিসির রেক্টর রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব এম খলিলুর রহমান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এম সাইদুল ইসলাম এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব এম মোকাম্মেল হোসেন অবসরে যাচ্ছেন ৩১শে ডিসেম্বর। ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তারা অতিরিক্ত সচিব হওয়ার দুই বছর পূর্ণ করবেন। ফলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তারা সচিব পদে নিয়োগ পাওয়ার চেষ্টা করবেন। আগে প্রশাসনে এক বছর অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালনের পর ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। এখন তা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত সচিব পদে দুই বছর পার হলে সরাসরি সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।

কার নাম আলোচনায় : মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পদে কে আসছেন তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। মন্ত্রিপরিষদ সচিবদের সাধারণত সিনিয়র হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং তাদের কর্মজীবনে একটি ক্লিন ইমেজ রয়েছে। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের চুক্তির মেয়াদ ১৫ ডিসেম্বর শেষ হবে। বিসিএস ১৯৮২ বিশেষ ব্যাচের এই কর্মকর্তাকে আবার চুক্তিতে নিয়োগ দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারের নামও আলোচনায় রয়েছে। ১৯৮৫ ব্যাচের এই কর্মকর্তার মেয়াদ আগামী বছরের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। অর্থাৎ এই পদে নিয়োগ পেলেও এক মাসের মধ্যে অবসরে যাবেন তিনি। ফলে তার সম্ভাবনা কম বলে ধরা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেনের নামও শোনা যাচ্ছে। বিসিএস ১৯৮৬ ব্যাচের এই কর্মকর্তা এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব ছিলেন। আগামী বছরের ১৩ অক্টোবর অবসরে যাবেন তিনি।

বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শফিউল আলমের মেয়াদ শেষ হচ্ছে অক্টোবরে। সেই পদে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা ড. আহমদ কায়কাউস। আগামী তিন বছরের জন্য চুক্তির দায়িত্বে নভেম্বরে তিনি ওয়াশিংটনে চলে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে মুখ্য সচিব পদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নামই বেশি শোনা যাচ্ছে। আগামী বছরের ৪ জুলাই তার মেয়াদ শেষ হবে। তিনি মুখ্য সচিব হলে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস-১) মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হতে পারেন। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে কে এম আলী আজমের মেয়াদ ২ নভেম্বর শেষ হচ্ছে। সাধারণত এই পদে থাকা সচিবদের মেয়াদ বাড়ানো হয় না। এছাড়া মাঠ প্রশাসনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিগত সময়ে কমপক্ষে দুই বছরের চাকরির মেয়াদ। এই পদের জন্য বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় সরকার সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বিসিএস নবম ব্যাচের কর্মকর্তা। এর আগে তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার এবং রাজশাহীর ডিসি ছিলেন। তার মেয়াদ ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত।

এ ছাড়া এ পদে একাদশ ব্যাচের কর্মকর্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব কামরুল হাসান এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের নাম শোনা যাচ্ছে। কামরুল হাসান ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ও মৌলভীবাজারের ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার কার্যকাল ১৪ এপ্রিল, ২০২৫ পর্যন্ত। আবু হেনা মোর্শেদ জামান, যিনি ১১ তম ব্যাচের মেধা তালিকায় প্রথম এসেছেন, তিনি সংবেদনশীল সরকারি অফিসে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ফরিদপুর ও নরসিংদীর ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার কার্যকাল ২৩ অক্টোবর, ২০২৬ পর্যন্ত। এই পদে ধর্ম সচিব কাজী এনামুল হাসানের নামও শোনা যাচ্ছে। তার অফিসের মেয়াদ ২৪ জুলাই, ২০২৫ পর্যন্ত।

এ দিকে সরকার বদল যদি ঘটে সেক্ষেত্রে এই দৃশ্যপট পুরোটাই পাল্টে যেতে পারে। তবে ধারণা করা হচ্ছে যারা প্রশাসনিকভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন তাদের রদবদল হলে সেক্ষেত্রে পদায়ন অন্য জায়গায় হতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যারা পদস্থ কর্মকর্তা রয়েছেন, তাদের পদায়ন অন্যত্র হতে পারে। সব মিলিয়ে সরকার বদল হলে হিসাব পুরোপুরি পাল্টে যেতে পারে।

About bisso Jit

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *