তারেক ও কোকোর দুর্নীতির তথ্যগুলো স্মরন করিয়ে ফখরুলকে ধুয়ে দিলেন ড. সেলিম মাহমুদ

বিএনপি নেতা ফখরুল সাহেবের নিকট আমার কয়েকটি প্রশ্ন, আপনাদের পেছনে নানা ধরনের শর্ত ছিল সেগুলো কী ভুলে গেছেন? আপনারা দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন, তারপরও বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেয়েছেন এটা নিয়ে নানান ধরনের সমালোচনা করে কথা বলছেন। অথচ, তারেক রহমানকে যুক্তরাষ্ট্র একজন সন্ত্রা”সী ব্যক্তি হিসেবে আখ্যা দিয়ে দেশটিতে ভিসা আবেদন বাতিল করে দিয়েছিল, সেটা কি তিনি ভুলে গেছেন? তারেক রহমানকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া এটা ছোট কোনো বিষয় ছিল না।

আপনি ভুলে গেছেন যে, আপনার দল বিএনপিকে বেশ কয়েকটি মামলায় কানাডার সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ ফেডারেল আদালত সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা করেছে। ফখরুল সাহেব, আপনি ভুলে গেছেন কি শর্ত নিয়ে তারেক জিয়া বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল! ২০০৮ সালে, তারেক মুচলেকা দিয়েছিল যে, তিনি আর কখনো রাজনীতিতে আসবেন না। সেই শর্তে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করেন তারেক।

অন্য শর্তের কথা কি ফখরুল সাহেব ভুলে গেছেন? ২০০১ সালের ষড়য’ন্ত্রমূলক নির্বাচনের আগে মুচলেকায় কী কী শর্ত ছিল, সেটি ভুলে গেছেন? ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদ বিদেশে রপ্তানি করবেন, এই শর্ত মেনে নিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে ষড়য’ন্ত্র করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও একই অনুরোধ করা হয়েছে। সেই অনুরোধ জানাতে ২০০০ সালের ২০ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন নিজে বাংলাদেশে এসেছিলেন। শেখ হাসিনা উল্টো শর্ত দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ৫০ বছরের গ্যাসের চাহিদা নির্ধারণ করে গ্যাস মজুদ থাকলে রপ্তানি করা যাবে। ক্ষমতায় আসার জন্য খালেদা জিয়া সে সময় দেশের গ্যাস সম্পদ রপ্তানির গ্যারান্টি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার বিরোধিতার কারণে খালেদা জিয়া গ্যাস রপ্তানি করতে পারেননি। বিএনপি জামায়াত সেটা করতে পারলে বাংলাদেশ অনেক আগেই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তো। শেখ হাসিনাই আপনাদের হাত থেকে দেশকে বাঁচিয়েছেন।

ফখরুল সাহেব, আপনি ভুলে গেছেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর মামলা ও তদন্ত আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। আর আরাফাত রহমান কোকো চোরাচালানের টাকা ফেরত দেন এবং অর্থ পাচারবিরোধী কাজে ব্যয় করেন। আপনি ভুলে গেছেন, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকো মানি লন্ডারিং মামলায় সা’জাপ্রাপ্ত এবং কোকো বহুজাতিক কোম্পানি সিমেন্স ও কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে টাকা নিয়েছিল।

ফখরুল সাহেব, আপনি নিশ্চয়ই এদেশের অবস্থার আদি ইতিহাস ভুলে গেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সরকারের একজন সেনা কর্মকর্তা হয়েও জেনারেল জিয়া ও তার পরিবার জাতির জনককে হ”/ত্যার ষড়য’ন্ত্র করেছিল কোন পরিস্থিতিতে? সেই শর্তগুলো ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা, জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিপ্লবী অগ্রযাত্রা বন্ধ করা, বাংলাদেশকে পাকিস্তানের আদর্শে নিয়ে যাওয়া, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতার নাম মুছে ফেলা। বঙ্গবন্ধু, যু”দ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার না করা ইত্যাদি। ফখরুল সাহেব, আপনার নেতা জিয়া এবং বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খু”/নিদের মধ্যে কী শর্ত বিনিময় হয়েছিল, আপনি কি ভুলে গেছেন? সেসব শর্তের কারণে জিয়া বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে স্বঘোষিত খু”নিদের নিয়োগ দেন এবং পঞ্চম সংশোধনী ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ অনুমোদন করেন। সেই বিনিময়ের ধারাবাহিকতার কারণেই জিয়ার বিধবা স্ত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ভোটবিহীন নির্বাচনে স্বঘোষিত খু”/নি রশিদকে বিরোধীদলীয় নেতা বানিয়ে জাতীয় পরিষদকে কলঙ্কিত করেছিলেন।

ফখরুল সাহেব, আপনি শর্তের রাজনীতি করছেন। বাংলাদেশকে পিছিয়ে ঠেলে দিতে হবে, পঙ্গু করতে হবে, জাতির পিতাকে হ”/ত্যা করে তার নাম মুছে ফেলতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ মুছে ফেলতে হবে—এসব শর্ত মেনে আপনি এদেশে ক্ষমতায় এসেছেন। ষড়য”ন্ত্রমূলক শর্তই আপনার রাজনীতির মূল ভিত্তি।

ফখরুল সাহেব, আপনি হয়তো ভুলে গেছেন কিভাবে এবং কেন বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল বিএনপিকে কানাডার আদালতে সন্ত্রা”সী দল ঘোষণা করা হয়েছিল। কানাডার ফেডারেল কোর্ট, অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন মামলায় বাংলাদেশ থেকে কানাডায় গমনকারী কিছু ব্যক্তির রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে কারণ আবেদনকারীরা নিজেদের বিএনপির সদস্য বলে দাবি করেছেন। কানাডার আদালত বলেছে, কানাডার আইনে বিএনপি একটি সন্ত্রা”/সী দল। তাই কোনো স”ন্ত্রা/সী গোষ্ঠীর সদস্যকে কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া যাবে না। কানাডার ফেডারেল আদালত বলেছে, বিএনপি বাংলাদেশে স”ন্ত্রা/স, পেট্রোল বো”মা, খু’/ন, গ্রে”/নেড হামলা এবং বিভিন্ন না”শকতামূলক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন বো”মা হামলা ও অগ্নিসং”যোগ করে আসছে এমন তথ্য তাদের কাছে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

আপনারা আ.লীগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করছেন, কিন্তু আপনারা ভুলে গেছেন যে, আপনাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিল। কারণ তারেক এবং কোকোর দুর্নীতি ছিল আকাশছোঁয়া। তখন প্রযুক্তির অতটা নাগালে ছিল না, তাই মানুষের নিকট তাদের খবর পৌঁছানোর উপায় খুব কম ছিল। কিন্তু তারা দেশকে অনেকটা পঙ্গু করে দিয়েছিল। তা না হলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে স”ন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত না করত না। তাছাড়া কোকো পাচার করা বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে ফেরত আনা হয়েছিল, সেটা কোন কলঙ্ক বহন করে সেটা কী ভুলে গেছেন।