২০১২ সালে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির বিপরীতে ‘ভালোবাসা রং’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় প্রথমবারের মতো পা রেখেই দর্শকের মনে দাগ কাটতে সক্ষম হন ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম ব্যস্ত অভিনেতা বাপ্পী চৌধুরী। আর এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও বেশ জনপ্রিয়তার সাথেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
কর্মজীবনে প্রায় ৩৬টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। এর মধ্যে অনেক ছবিই আলোচনায় এসেছে। গতকাল ছিল সেই পর্দায় অভিষেকের দিন, ৫ অক্টোবর। নানা বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন এই অভিনেতা।
চলচ্চিত্রের ১০টি বছর কেটে গেল। প্রথম দিনটির কথা মনে পড়ে?
আমার জীবনের এটি সেরা দিন। দিনটিতে নতুন জীবনে পা দিয়েছিলাম। শুনেছি, মানুষের এক জীবনে কয়েকবার জন্ম হয়। ৫ অক্টোবর হিরো বাপ্পীর জন্ম হয়েছিল। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া আমাকে খুঁজে বের করে এনে হিরো বানিয়েছিল। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব চিরকাল।
সিনেমাটি মুক্তির প্রথম দিন কেমন লেগেছিল?
দারুণ এক অনুভূতি। অনেকের ক্ষেত্রেই শুনি, প্রথম ছবির মুক্তিতে ভয় পান, শঙ্কায় থাকেন। কিন্তু সেদিন আমার ভয় লাগেনি। বেশ খুশি ছিলাম, আনন্দে ছিলাম। তবে এখন মনে পড়লে ভয় লাগে। প্রথম ছবিই যদি দর্শক গ্রহণ না করতেন, তাহলে আমি বাপ্পী চৌধুরী আজ হারিয়ে যেতেও পারতাম।
‘ভালোবাসার রং’ দিয়ে ঢাকার চলচ্চিত্র ৩৫ মিলিমিটার থেকে ডিজিটালে যাত্রা শুরু করে। এই ছবির নায়ক হিসেবে বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?
প্রথম প্রথম বিষয়টি বুঝতাম না। এখন যখন বুঝি, আমি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের নতুন ধারার প্রথম ছবির নায়ক, তখন নিজের মধ্যে অন্য রকমের অনুভূতি কাজ করে। আমি খুবই ভাগ্যবান, যে ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে, সেই ছবির আমি নায়ক। এটি আমার জন্য বিরাট পাওয়া। আমি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকব।
কিন্তু অনেকেই তো আবার বলেন, ডিজিটাল যুগ বাংলা সিনেমাকে পিছিয়ে দিয়েছে।
দূর থেকে অনেকে অনেক কিছুই মনে করেন। সারা পৃথিবীর সিনেমার পরিবর্তন হয়েছে। এখনো বাংলাদেশ ওই ৩৫ মিলিমিটারে পড়ে থাকবে? এখন হাতের মুঠোয় প্রযুক্তি। যুগের সঙ্গে চলতে হলে ডিজিটালের বিকল্প নেই। তবে এটি ঠিক, ডিজিটালে আসার পর কিছু কিছু সিনেমার মান হারিয়েছে, নিম্নমানের সিনেমা তৈরি হয়েছে। কম বাজেট দিয়ে কেউ কেউ সিনেমার নামে নাটক বানিয়ে ফেলেছেন।
তিন দিন শুটিং করার পর ‘জার্নি উইথ ইউ’ ছবির নাম পরিবর্তন করে ‘তালাশ’ রাখা হয়েছে। ছবিতে নায়ক হিসেবে আপনার পরিবর্তে আদর অভিনয় করেছেন। ঘটনা কী?
‘জার্নি উইথ ইউ’–এর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে, আমি জানতামই না। কয়েক দিন আগে প্রথম আলোর খবরে জানতে পেরেছি। বিষয়টি পরিচালক সৈকত নাসির আমাকে জানাননি। প্রজেক্টের যেকোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে শিল্পীদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করা একজন দায়িত্বশীল পরিচালকের কর্তব্য। এই পরিচালককে যতটুকু চিনি–জানি, তাঁকে সব সময়ই দায়িত্বশীল মনে হয়েছে। কিন্তু ছবির নাম পরিবর্তন করা হলো, নায়ক পরিবর্তন করা হলো—কিছুই জানতে পারলাম না। আমি বিস্মিত! সৈকত ভাই এই ধরনের দায়িত্বহীন কাজ করবেন, মনেই হয় না। এখন পর্যন্ত জানি, ‘জার্নি উইথ ইউ’ ছবির হিরো আমি।
আপনার অভিনীত ‘পাগলামি’, ‘আসমানি’, ‘দাগ হৃদয়ে’, ‘ডনগিরি’, ‘প্রিয় কমলা’ ছবিগুলো দর্শক আলোচনায় আসেনি। বাপ্পী কি তাহলে কিছুটা পিছিয়ে গেছেন?
বেশ কয়েক বছর ধরে পুরো ইন্ডাস্ট্রিই তো পিছিয়ে গিয়েছিল। শুধু আমার ছবির নয়, অন্যদের ছবিও তো তেমন সফলতা পায়নি। বড় বাজেটের ছবি আলোচিত হয়েছে কিন্তু ছবিগুলো থেকে যে পরিমাণ আয় আসার কথা, তা কি এসেছে? ছবির বিনিয়োগই কি ফেরত এসেছে? আমার কাছে মনে হয়েছে, হয়তো কোনোটিই পুরোপুরি সফল হয়নি। তবে আমার বিশ্বাস, পাইপলাইনে যেসব ছবি আছে, এসব ছবি প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফিরিয়ে আনবে।
আপনার অভিনীত নির্মাণাধীন ‘ঢাকা ২০৪০’, ‘সিক্রেট এজেন্ট’, ‘প্রেমের বাঁধন’, ‘কোভিড–১৯ ইন বাংলাদেশ’সহ বেশ কয়েকটি ছবির শুটিং দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে। এমনও শোনা যায়, এর মধ্যে দু-একটি ছবি আর না–ও হতে পারে, সত্যি কি?
এটি ঠিক, ছবিগুলোর শুটিং দীর্ঘদিন আটকে আছে। এর মধ্যে কোনো কোনো ছবির শুটিং প্রায় শেষ। অল্প কিছু কাজ বাকি। তবে পুরোপুরি শুটিং কবে শেষ হবে, আমার জানা নেই। ছবির প্রযোজক ও পরিচালকের কাছে থেকে জেনে বলতে হবে আমাকে।
এদিকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনাভাইরাসের এই সংক্রমনের ফলে দীর্ঘদিন গৃহবন্দী থাকার পর, সম্প্রতি পরিস্থিতি কিছু স্বাভাবিক হতেই আবারো কাজে নিয়মিত হয়েছেন তিনি। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্য রয়েছে- ‘অন্যরকম ভালবাসা’, ‘রোমিও’, ‘তবুও ভালবাসি’, ‘অনেক সাধের ময়না’, ‘লাভ স্টেশন’, ইত্যাদি।