Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / পদোন্নতি দিয়ে কপাল পুড়েছে ডিএসইর এমডি আমিনের, অবশেষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন তিনি

পদোন্নতি দিয়ে কপাল পুড়েছে ডিএসইর এমডি আমিনের, অবশেষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন তিনি

কথায় আছে ক্ষমতা থাকলেই তার প্রভাব খাটাতে নেই। তাহলে তার দশা হয় করুণ। ক্ষময়ার জোর খাটিয়ে নিজের ইচ্ছায় প্রায় ১২৭ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে এবার বিপাকে  তারিক আমিন। ক্ষমতা আর পদ কোনটাই ধরে রাখতে পালেন না তিনি। একটি ভুলের কারণ মাত্র ১৩ মাসের মাথায় নিজের স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করে কাঙ্ক্ষিত ১২৭ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে কপাল পুড়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভূঁইয়া। ‘ফাইভ পি’ মন্ত্রে পুঁজিবাজারকে ডিজিটাল করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করার মাত্র 13 মাস পরে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

সোমবার (২২ আগস্ট) পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এমডি তার ইচ্ছানুযায়ী ১২৭ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেন। এর মধ্যে তিনি আইনের বাইরে ছয় (৩ জন জিএম ও ৩ এজিএম) কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছেন। আর তার ওপর ক্ষুব্ধ পরিচালক সমিতি। বোর্ডের চাপে পদত্যাগ করেন তিনি।

ডি-মিউচুয়ালাইজেশন (স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণ) আইন অনুযায়ী, জনবল কাঠামোতে স্টক এক্সচেঞ্জে কোনো সিনিয়র পদ নেই। নতুন পদ তৈরি করতে হলে প্রথমে বোর্ডের অনুমোদন লাগে। পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এ ধরনের কোনো অনুমোদন নেয়নি।

অন্যদিকে, ডিএসইর নিয়ম অনুসারে, যে কোনও ডিজিএম স্তরের অফিসারকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য এনআরসির সুপারিশ প্রয়োজন। কমিটি যাচাই-বাছাই করে পদোন্নতির সুপারিশ করে। কিন্তু ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারো তোয়াক্কা না করে নিজ ইচ্ছায় এসব সিদ্ধান্ত নেন।

ডিএসইতে একটি ডাটা সেন্টার তৈরির কাজও করছিলেন এমডি। ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ এবং শেয়ারহোল্ডারদের একটি গ্রুপ এই কেন্দ্রটি তৈরি করতে ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তারিক আমিন ভূঁইয়া মাত্র ৪০ কোটি টাকায় প্রকল্প শেষ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সে অনুযায়ী কাজ করছিলেন। ফলে বোর্ড ও শেয়ারহোল্ডার গ্রুপ তার ওপর চাপ সৃষ্টি করছিল।

এদিকে পদত্যাগের বিষয়ে তারিক আমিন ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী তারিক আমিন ভূঁইয়া গত বছরের ২৫ জুলাই ডিএসইর এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১৩ মাস পর তিনি পদত্যাগ করেন। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তিন বছরের জন্য ডিএসইর এমডি পদে নিয়োগ পেয়েছেন প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞ।

মাত্র ১১ মাস দায়িত্ব পালনের পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে এমডির পদ থেকে পদত্যাগ করেন কাজী ছানাউল হক। এর আগে কেএএম মাজেদুর রহমান ডি-মিউচুয়ালাইজেশনের পর ডিএসইর দ্বিতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ডি-মিউচুয়ালাইজেশনের পর প্রথম এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএসইসির সাবেক কমিশনার অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা।

এদিকে তারিক আমিন ভূঁইয়ার পদত্যাগ করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান এক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তারিক আমিন ভূঁইয়া তিন বছরের জন্য ডিএসইর এমডি হিসেবে যোগদান করেন। মঙ্গলবার তিনি আমাকে ই-মেইলে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

তিনি দেড় পৃষ্ঠার পদত্যাগপত্র লিখেছিলেন যে তিনি তার ১৩ মাসের মেয়াদে বিভিন্ন সমস্যার কারণে পরিকল্পনা মতো কাজ করতে পারেননি। আগামী অক্টোবরের শেষে পদ থেকে পদত্যাগ করছি।

ইউনুসুর রহমান বলেন, চিঠিতে তিনি যা লিখেছেন তার সারমর্ম হলো তিনি যেভাবে কাজ করতে চেয়েছিলেন সেভাবে কাজ করতে পারছেন না। তাই এ অবস্থায় তিনি আর কোম্পানির এমডি হতে চান না।

ইউনূস বলেন, ডিএসই রেগুলেশন ২০১৩ অর্থাৎ ডি-মিউচুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী, এমডি একক ক্ষমতা হিসেবে কোম্পানির এজিএম থেকে জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) হিসেবে কাউকে পদোন্নতি দিতে পারেন না। তাকে পদোন্নতির জন্য পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে।

ইউনূস বলেন, এমডি তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে ৩ জন এজিএমকে জিএম পদে পদোন্নতি দিয়েছেন। একইভাবে তিন জিএমকে সিনিয়র জিএম করা হয়েছে। এই ছয়জনের পদোন্নতি বাতিলের জন্য আমরা এমডিকে নির্দেশ দিয়েছি।

এ আদেশ দেওয়ার পর মঙ্গলবার এমডি তিন সিনিয়র জিএমের পদোন্নতি বাতিল করে চিঠি পাঠান। কিন্তু এজিএম থেকে জিএম পদে পদোন্নতি পাওয়া তিনজনকে তিনি বরখাস্তের চিঠি দেননি।

পুঁজিবাজারকে ডিজিটাল করার লক্ষ নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন ডিএসইর এমডি আমিন। তবে নিজের কিছু গাফেলাতির জন্য কোন কিছুই সম্ভব হয়নি। অবশেষে তার প্ররিনতি হলো চাকরিচ্যুত্য হয়ে। সুধে সেই বিপাকে পড়েনি পদ ত্যাগ করায় তার সহযোগী অনেকেই বিপাকে পড়েছেন।

About Nasimul Islam

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *