Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / opinion / শুনেছিলাম, ওই ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নাকি খালেদা জিয়া বকেছিল: তুহিন

শুনেছিলাম, ওই ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নাকি খালেদা জিয়া বকেছিল: তুহিন

বিএনপির আমলে তৈরি হয় র‌্যাব। র‌্যাব তৈরি হবার আগে বিএনপির সরাসরি সহযোগিতায় বাংলা ভাইর নেতৃত্বে একটি খুনি বাহিনী তৈরি হয়েছিল যার নাম জেএমবি। তারা খুজে খুজে বামপন্থিদের খুন করেছে। খুন করে লাশ গাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখেছে বাংলা ভাইয়ের লোকেরা।
রাজশাহী, পাবনা ছিল তাদের কথিত বিপ্লবের পুন্যভূমি।
হাজার হাজার মানুষকে খোলামাঠে তারা শপথ পড়াতো কমিউনিস্টদের পথ থেকে ফিরে আসার জন্য তওবা পড়াতো। তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তখন প্রকাশ্য মিছিল করত, তাদের সামনে পেছনে থাকত পুলিশ। তখনো র‌্যাব হয়নি।
নিউ ইয়ার্ক টাইম ৫ জানুয়ারি ২০০৫ সালে একটা স্টোরি করেছিল সরেজমিন। হেড লাইন ছিল ’The Next Islamist Revolution ‘। ওখানে যে বর্ননা আছে তা বাস্তবতার খুবই কম।
বাংলা ভাইয়ের ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে র‌্যাব হলো। বাংলা ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজ র‌্যাব হাতে তুলে নিল। প্রতিটি ক্রসফায়ারের পর এলাকায় মিস্টি বিতরণের খবর ছাপত মিডিয়াগুলো। চরমপন্থি উপাধি দিয়ে তখন বামপন্থিদের খুন করা হয়েছে। সেই সংখ্যা ৫০০ উপরে। প্রথম আলোর প্রতিবেদনেমতে বিএনপির আমলে ৭৮৬ জন ক্রসফায়ারে খুন হন, যার ৯০ শতাংশ বামপন্থি কর্মী ও নেতা। এর মধ্যে একজন হলেন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল) সাধারণ সম্পাদ মোফাখখার চৌধুরী। অকৃতদার এই বিপ্লবীকে ঢাকা থেকে তুলে নিয়ে খুব ঠান্ডা মাথায় খুন করে ক্রসফায়ারের গল্প চালানো হলো। শুনেছিলাম, ওই ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নাকি খালেদা জিয়া অনেক বকাঝকা করেছিল। তবে এসব শোনাকথা এবং বিশ্বাসযোগ্য না।
নেসার আহমেদ সেইসব প্রতিটি খুন ধরে গবেষণা করলেন। নিহতদের স্বজনদের ইন্টারভিউ করলেন। নিবিড় কাজটা দারুন। প্রতিটি শব্দ পড়ার সাথে সাথে গায়ে কাটা দেবে।
এরপর এলো তত্ববাধায়ক সরকার। তাদের আমলে ক্রসফায়ার বন্ধ হলো না। তখন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল লাল পতাকা) সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মিজানুর রহমান টুটু ক্রসফায়ারে খুন হন। অথচ মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল তখন উপদেষ্টা। আমি সুলতানা কামালকে প্রশ্ন করলাম, আপনি উপদেষ্টা কিন্তু ক্রসফায়ার থেমে নেই। তাহলে রাষ্ট্র চালায় কেন? আপনার কি ব্যর্থ?
বেচারা আমার প্রশ্নে ব্যাপক বিব্রত। তত্ববাধায়ক সরকার আমলে ক্রসফায়ারে মারা গেছে ২৫৬ জন।
এরপর এলো আওয়ামী লীগ। ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত লীগের আমলে ক্রসফায়ারে মারা গেছে ১৩৫১ জন। এ সময় ৪২৯ জন গুম হয়েছে। যার মধ্যে ৫২ জনের লাশ পাওয়া গেছে। ফিরে আসে ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ২১৪ জন।

রাষ্ট্র শ্রেণি নিপিড়নের যন্ত্র!
রাষ্ট্র নির্মাণ হয়েছে অধিপতি শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার্থে। রাষ্ট্র কোনো পুতপবিত্র ব্যপার না। কিন্তু নানান ধরনের আইন, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত নানান কিছু দিয়ে রাষ্ট্রকে পবিত্র হিসেবে মানুষের সামনে প্রবলভাবে হাজির করা হয়। এর কোনো কিছুকে যদি কেউ ভাঙ্গতে চায় তা রাষ্ট্রদ্রোহের সমান হিসেবে গণ্য করা হয়।
তো, শুধু আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত বা অন্য পার্টি ক্ষমতায় গেলে একটি গণবিরোধী রাষ্ট্রের চরিত্র পাল্টানোর সুযোগ নেই। সে কারণে বিএনপি আমলে ক্রসফায়ার হয়, তত্বাবধায়ক আমলে ক্রসফায়ার হয়, আওয়ামী লীগ আমলেও ক্রসফায়ার হয়। যদি ঢাবির সাবেক ভিপি নুর, গণসংহতি আন্দোলনের সাকি ভাই, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বিএনপি মিলে একটা সরকার গঠন করে সেখানেও ক্রসফায়ার হবে। নিশ্চিত থাকুন সেখানেও বিচারবর্হিভূত হত্যা খুন হবে। এটাই গণবিরোধী রাষ্ট্রের মূল চরিত্র। এর বাইরে যদি অবস্থান নিতে হয় তাহলে রাষ্ট্রের খোলনোচল পল্টে এটাকে একটি গণচরিত্রের সাধারণ মানুষের স্বার্থের অনুকুলে রাষ্ট্র বানাতে হবে। সেটি ভোট বা সংস্কারের বিষয় না। সেটা বিপ্লবের বিষয়। সেই আলাপটি ভিন্ন। সে আলাপ বিস্তর পরিসরে করতে হবে।
এখন বিএনপির আমলে যারা ক্রসফায়ারে মারা গেছে তারা খুনি আর আওয়ামী লীগের আমলে যারা ক্রসফায়ার ও গুম হচ্ছে তারা সবাই ফেরেশতা এই দাবি যারা করে তারা ইবলিশ শয়তান। গুম ও ক্রসফায়ারে খুন হওয়া মানুষের আর কোনো পরিচয় নেই। তাদের একটি পরিচয় তারা বিচারবর্হিভূত হত্যা ও নির্যাতনের শিকার।
বিশেষ নোট: এর মানে এই নয় যতক্ষণ বিপ্লব না হয় ততক্ষণ লীগ ক্ষমতায় থাকবে। মানুষ ভোট দিয়ে যাকে খুশি ক্ষমতায় আনুক। অন্তত পাঁচ বছরে একবার ভোট দেয়ার গণতন্ত্রটাও চালু থাকুক।

About Rasel Khalifa

Check Also

বাঁধন নৌকার লোক বলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হইতো: পিনাকি

ছাত্র আন্দোলনে তারকাদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তিনি আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *