বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী কনকচাঁপা। ক্যারিয়ারে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়ে ভক্তদের মনের মাঝে স্থান করে নিয়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে বেশকিছু তারকার সঙ্গে ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে তার। এই তালিকায় রয়েছে চিত্রনায়িকা শাবনূর। আর এরই জের ধরে সম্প্রতি এবার গুণী এই কন্ঠশিল্পী বলেন, ‘শাবনূর আর আমি। দুজনকে বলা যায় দুই দেহ এক উপস্থাপন। আমি শাবনূরের অথবা শাবনূর আমার। প্লেব্যাক-এর পুরোটা উজ্জ্বল সময় আমি প্রধানত শাবনূরের জন্য গেয়েছি। আমি গাইলে নাকি ডিরেক্টরদের মনে হতো তিনিই গাইছেন। তাই তার ছবির গানে কনকচাঁপার কণ্ঠ অবশ্যম্ভাবী।’
‘অনেকেই এই ঠোঁট মিলে যাওয়া বা আবেগ মিলে যাওয়া অথবা বলা যায় একাত্ম হয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব আমাকে দিতে চান। আমি তা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করি, কারণ আরও নায়িকার লিপে আমি গেয়েছি কিন্তু এমন একাত্ম হওয়া যায়নি হয়তো। সেক্ষেত্রে আমি শাবনূরের অত্যাশ্চর্য অভিনয়কেই বেশি মূল্যায়ন করি। তিনি অনেক উঁচুদরের অভিনয় শিল্পী। এসব কথা বা ব্যাখ্যা অথবা বাস্তব ঘটনা যারা ছবি দেখতেন, বা ছবির ভক্ত ছিলেন তারা সবাই হয়তো জানেন।’
কিন্তু একটি কথা সবার একদম অজানা, যেমন পুরো পেশাদার জীবনে শাবনূর আর আমার খুব কম দেখা হয়েছে! প্লেব্যাক-এর প্রথম দিকে দুজন মিলে একটা টিভি চ্যানেলের জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। এরপর হঠাৎ হঠাৎ হয়তো চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কোনো অনুষ্ঠানে মিতবাক শাবনূরের সাথে আমার খুবই কম সময়ের জন্য দেখা হয়েছে। দুয়েকটা বাক্য বিনিময় ছাড়া আর কিছু হয়নি আমাদের মাঝে।’
‘তো মাশুকের (কনকচাঁপার ছেলে) বিয়ের সময় দাওয়াত দিতে গেলাম তার বাসায়। বাসায় যাওয়ার পরে আবেগে, উচ্ছ্বাসে একদম উল্লসিত হয়ে গেলেন। আমার বাসা ওনার বাসার কাছাকাছি শুনে বললেন, ‘ও আল্লাহ! তাইলে তো আপনার নিঃশ্বাসও আমি পাই। অথচ মনে মনে আমি আপনাকে কতো খুঁজি!’
‘বিয়ের কার্ড বিলি করতে বাসা থেকে খেয়েদেয়েই বের হয়েছিলাম। শাবনূরের বাসায় যেতে দুপুর বেলা গড়িয়ে গেলেও তিনি কিছুতেই না খেয়ে আসতে দিলেন না। সেই দুপুরে আমার দুইবার খেতে হলো!’
‘জোর করে নিজ হাতে বেড়ে বেড়ে নিজের করা রান্না খাবার আমাদের খাওয়ালেন। আমার ড্রাইভার রনিকেও বেড়ে খাওয়ালেন। রনিকে খাওয়া শেষে শাবনূর যখন শুধালেন, ‘টক দই না মিষ্টি দই দেবো?’ রনি পরিষ্কার একটা বেষম খেয়ে খেই হারিয়ে বললো, ‘টকই দেন।’
‘আমি বারবার নিরাভরণ মেকআপহীন শাবনূরের চোখের দিকে তাকাচ্ছিলাম! এবং ভিষণ চমকে যাচ্ছিলাম। তার চোখ এতো সুন্দর, এতো গভীর, এতো চঞ্চল এবং এতো কান্না সে চোখে যে, বেশিক্ষণ সে নয়ন পানে তাকানো যায় না।’
‘কিন্তু সে চলাবলায় এতো ভোলাভালা যে, আমি বারবার আনমনা হয়ে ভাবছিলাম, এই মানুষ এতো নিখুঁত অভিনয় কীভাবে করেন! কীভাবে পারেন! আমাকে জোর করে সারাবাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখালেন।
‘যাহোক, যথারীতি তিনি আমার ছেলের বিয়েতে এলেন। মজা করে খাবার খেলেন, ভক্তদের সবার সাথে দীর্ঘ সময় ধরে হেসে হেসে, ধৈর্য ধরে এতো ছবি তুললেন যে আমরা সবাই বিস্মিত হয়ে গেলাম। সত্যিই আমরা গর্বিত হতে পারি যে, আমাদের একজন শাবনূর আছেন, যার নামের আগে পিছে কোনো বিশেষণ লাগে না।
উল্লেখ্য, সংসার সামলানোর পাশাপাশি দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে সংগীতাঙ্গনে কাজ করে যাচ্ছেন কনকচাঁপা। বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পীদের তালিকায় তিনি একজন। তবে কন্ঠশিল্পী পরিচয়ের পাশাপাশি একজন খ্যাতিমান লেখক হিসেবেও বেশ পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।