মৌসুমী, আলমগীর, শাবনূর, পূর্ণিমা, রুবেল, শাকিব খান, আরিফিন শুভ, সিয়াম, মিথিলা, চঞ্চল চৌধুরী, মেহের আফরোজ শাওন, ফজলুর রহমান বাবু এই সকল তারকারা বাংলাদেশের সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় চেনা মুখ। তারা মূলত অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত। তবে তারা সকলেই অভিনয়ের পাশাপশি গানের জগতেও বেশ সক্রীয়। এবং অভিনয়ের পাশাপাশি গানেও অর্জন করেছেন বেশ সফলতা। অনেকে অভিনয়ে এসে গানে কণ্ঠ দেন। দর্শকপ্রিয় অভিনয়শিল্পীর পাশাপাশি হয়ে যান জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী।
মৌসুমী
ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি দুর্বলতা ছিল মৌসুমীর। গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও হয়ে গেলেন নায়িকা। তারপরও গানের মায়া ছাড়েননি তিনি। নব্বইয়ের দশকে প্রখ্যাত নির্মাতা মনতাজুর রহমান আকবরের ‘মগের মুল্লুক’ ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করলেন নায়িকা মৌসুমী। এরপর ‘ছায়া-ছবি’সহ অনেক ছবিতে গেয়েছেন মৌসুমী।
আলমগীর
অভিনয়ে আসার আগে থেকেই গানের প্রতি আগ্রহ ছিল আলমগীরের। কিন্তু ঘটনাচক্রে হয়ে গেলেন নায়ক। নায়ক হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক ভাবে প্লেব্যাক শুরু করেন। ‘আগুনের আলো’ ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন আলমগীর। এরপর ‘কার পাপে’, ‘ঝুমকা’, ‘নিষ্পাপ’ ছবিতেও গেয়েছেন আলমগীর।
শাবনূর
ছোটবেলা থেকেই গুনগুন করে গলায় সুর তুলতেন শাবনূর। প্রখ্যাত তরুণ চিত্রনির্মাতা যাঁর ‘দুই নয়নের আলো’ ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পেলেন শাবনূর সেই নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘এত প্রেম এত মায়া’ ছবির টাইটেল গানে কণ্ঠ দিয়েছেন শাবনূর।
পূর্ণিমা
ইনস্টাগ্রামে লতা মঙ্গেশকরের ‘মে তেরে ইশক’ গানটি গেয়ে পোস্ট করেন চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা। তাঁর কণ্ঠে গান শুনে সুবর্ণা মুস্তাফা, নোবেল, আঁখি আলমগীরের মতো তারকাদের প্রশংসা কুড়ান তিনি। এরপর চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানের ১২তম আসরে সংগীতশিল্পী ইমরানের জনপ্রিয় গান ‘বলতে বলতে চলতে চলতে’ নতুন করে গাইলেন এই তারকা। এখনো সময়-সুযোগ পেলেই গিটার বাজান তিনি।
রুবেল
অভিনয়ে আসার আগে থেকেই গাইতেন রুবেল। বড় ভাই মাসুদ পারভেজ পরিচালিত ‘জীবননৌকা’ ছবিতে ‘মেঘ যদি সরে যায় দেখতে চাঁদমুখ ভালো লাগে’ গানটি গেয়েছিলেন তিনি। পর্দায় এই গানে ঠোঁট মিলিয়েছিলেন সোহেল রানা। আরও অনেক ছবিতেই পরে প্লেব্যাক করেন রুবেল। ‘মায়ের জন্য যুদ্ধ’, ‘অন্ধকারে চিতা’, ‘বাঘে বাঘে লড়াই’, ‘খুনের পরিণাম’, ‘তান্ডঢ়ব’ ছবিতেও প্লেব্যাক করেছেন রুবেল।
শাকিব খান
হার্টবিট প্রোডাকশনের কিং খান, মালেক আফসারীর ‘মনের জ্বালা’ ছবিতে প্লেব্যাক করেন শাকিব খান। ‘আমি চোখ তুলে তাকালেই’ গানটি গেয়েছেন তিনি। পরে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী-২’ ছবিতেও প্লেব্যাক করেন এই শীর্ষ অভিনেতা।
আরিফিন শুভ
ছোটবেলা থেকেই গাওয়া শুভর পছন্দ। ভালো গাইতেও পারেন। প্লেব্যাক করলেন ইফতেখার চৌধুরীর ‘অগ্নি’ ছবিতে। ‘ডুবে যাই তোমার ভাবনায়’ শিরোনামের গানটিতে আরিফিন শুভর সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছিলেন কণা। এরপর অনন্য মামুনের ‘অস্তিত্ব’ ছবির জন্যও একটি গান করেন। ‘আমি বাংলার হিরো’ শিরোনামের গানটির সংগীত পরিচালনায় ছিলেন প্রীতম হাসান।
সিয়াম
ছোট পর্দার জনপ্রিয় নায়ক সিয়াম বড় পর্দায় ‘পোড়ামন-টু’ ছবিতে অভিনয় করেও ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেন। তিনি যে ভালো গাইতে পারেন এটি তাঁর কাছের মানুষরাই ভালো জানতেন। তবে কথাটি গোপন রাখতে পারেননি তিনি জাজ মাল্টিমিডিয়ার কাছ থেকে। জাজের ছবি ‘দহন’-এ সিয়ামকে দিয়ে প্লেব্যাক করানো হয়।
মিথিলা
মূলত মডেলিং ও অভিনয়ই হচ্ছে তাঁর মূল ট্র্যাক। তবে কণ্ঠে সুর থাকার কারণে গানের ভুবনেও জায়গা করে নিতে পেরেছেন মিথিলা। গানের হাতেখড়ি হয়েছিল ‘হিন্দোল’ একাডেমিতে। মিথিলার গাওয়া ‘রোদেলা দুপুরে’, ‘পাগলা ঘুড়ি’ ও ‘ঘুমখোয়ারে’ গানগুলো বেশ প্রশংসিত হয়েছে। মিথিলার প্রথম একক অ্যালবাম ‘অপারগতা’। গান গাওয়ার পাশাপাশি কিছু গান রচনাও করেছেন তিনি। বেশ কিছু টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি।
চঞ্চল চৌধুরী
চঞ্চল চৌধুরী। বড় পর্দা আর ছোট পর্দা- উভয় জগতেই রয়েছে তাঁর পদচারণা। ‘রূপকথার গল্প’, ‘মনপুরা’, ‘মনের মানুষ’, ‘টেলিভিশন’ ও ‘আয়নাবাজি’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। এ ছাড়াও অসংখ্য টিভি নাটকও করেছেন তিনি। সম্প্রতি তাঁর অভিনীত তাকদীর ওয়েব সিরিজ প্রশংসিত হয়। করছেন বেশ কিছু ওয়েব সিরিজ। তিনি বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজাতেও দক্ষ। কণ্ঠেও রয়েছে সুর। ‘মাঝি বাইয়া যাও রে’-এর মতো জনপ্রিয় পল্লীগীতিও ধারণ করেছেন নিজের কণ্ঠে। চঞ্চল চৌধুরীর মিশ্র ও একক গানের অ্যালবাম মিলিয়ে মোট অ্যালবামের সংখ্যা পাঁচটি। ‘পিতা’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন শাওনের সঙ্গে। অভিনেত্রী শাওনের সঙ্গে ‘সর্বত মঙ্গল রাধে’ ও ‘নেশা লাগিল রে’ গানটি দ্বৈত কণ্ঠে গেয়ে বেশ জনপ্রিয়তা পান।
মেহের আফরোজ শাওন
অভিনয় জীবন বেশ দীর্ঘ মেহের আফরোজ শাওনের। নাটক ও চলচ্চিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে- ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’ ও ‘আমার আছে জল’। কিছু নাটক ও একটি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেছেন শাওন। এবার আসা যাক তাঁর গানের কথায়। ‘জনম জনম তব তরে কাঁদিব’, ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো’ ও ‘আমার আছে জল’, ‘যে থাকে আঁখি পল্লবে’, ‘আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা জোছনা’, ‘আজি ঝরঝর মুখর বাদরও দিনে’- এ জনপ্রিয় গানগুলো মেহের আফরোজ শাওনের গাওয়া।
ফজলুর রহমান বাবু
জনপ্রিয় অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু ২০০৫ সালে ‘মনপুরা’ ছবিতে ‘নিথুয়া পাথারে’ গানটি গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। এরপর আরও বেশ কটি ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন এবং এখনো করছেন। তাছাড়া তাঁর ‘ইন্দুবালা’সহ একাধিক গানের অ্যালবামও রয়েছে।
অবশ্যে বাংলাদেশে অনেক নামি-দামি জনপ্রিয় তারকারা থাকা স্বত্তেও বর্তমান সময়ে এক সংকটময় পরিস্তিতির মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে দেশের বিনোদন মাধ্যম। মূলত গুনগত ভাল মানের কাজের অভাবে এমন পরিস্তিতি বিরাজ করছে। এই সংকট থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য বিনদোন জগতের সকল ধরনের ব্যক্তিরা আপ্রান ভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশ সরকারও চলমান সংকট থেকে উত্তরনের জন্য প্রদান করছে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা।