Sunday , November 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে প্রতিদিন ২ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যায় সুমাইয়া

এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে প্রতিদিন ২ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যায় সুমাইয়া

প্রতিদিন একপায়ে ভর করে লাফিয়ে লাফিয়ে দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করে ১০ বছর বয়সী একটি ছোট্ট মেয়ে। তার এই দুরবস্থার বিষয়টি জানতে পেরে সুমাইয়া নামের এই মেয়েটির চিকিৎসা করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখতে পেয়ে তিনি মেয়েটির দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। তাকে যাতে সহায়তা দেওয়া যায় সে জন্য যোগাযোগ করতে তিনি সংবাদমাধ্যমটির স্থানীয় প্রতিনিধির সাথে ফোনে কথা বলেন।

তিনি বলেন, মাত্র ১০ বছর বয়সী একটি মেয়ে পড়ালেখার প্রতি কী পরিমাণ আগ্রহ থাকলে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পারে, তা সুমাইয়াকে দেখলেই বোঝা যায়। তার অসুবিধার কথা জানার পর, আমি তাকে একটি স্বনিয়ন্ত্রিত হুইলচেয়ার পাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। ঢাকা থেকে তাকে এই অত্যাধুনিক হুইল চেয়ার দেওয়া হবে, যাতে সে নিজে নিজে এটা চালিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে পারে। একই সঙ্গে তার পায়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেব।

তিনি বলেন, গত ১৩ বছর সংসদ থেকে প্রাপ্ত ভাতার পুরোটাই দরিদ্র ও মেধাবীদের শিক্ষায় ব্যয় করেছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী সম্মানের অর্থে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। আমরা পাঁচ ভাইবোন প্রতি বছর ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে সহায়তা করি। আমাদের লক্ষ্য হল কোন ছাত্র যাতে দারিদ্র্য বা অর্থের অভাবের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা। কে জানে, তাদের মধ্যে হয়তো কেউ কেউ আছেন, যারা ভবিষ্যতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউনিয়নের আলীপাড়ার রিকশাচালক শফিকুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া মাত্র দুই বছর বয়সে রাস্তায় পড়ে যায় এবং তার বাম পা বিকল হয়ে যায়। এই পা এখন ডান পায়ের থেকে ছোট হয়ে গেছে। কোনোভাবে আর দাঁড়িয়ে মাটিতে পড়ে না পা। তাই লাফিয়ে লাফিয়ে সুমাইয়াকে সব কাজ করতে হয়।

বর্তমানে সে উত্তর আলোকডিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। প্রতিদিন, পিঠে একটি ব্যাগ এবং হাতে বই নিয়ে, সে এক কিলোমিটার রাস্তা এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নির্ধারিত সময়ে স্কুলে উপস্থিত হয়। এ জন্য তাকে প্রতিদিন দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। সুমাইয়া বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়। কথা বলতে গেলে সে বলে, প্রতিদিন এভাবে স্কুলে যেতে আমার অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু আমি পড়াশোনা করতে চাই। আমি বড় হয়ে ডাক্তার হব, যাতে আমার মতো কেউ চিকিৎসার অভাবে কষ্ট না পায়।

তার বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, আট বছর ধরে চিকিৎসা করিয়েছি। আমি কোন ফলাফল পাইনি। মেয়েটির পা ঠিক করতে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা লাগবে বলে জানিয়েছেন অর্থোপেডিক চিকিৎসকরা। কিন্তু রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই, এত টাকা কোথায় পাব। আমার মেয়ের এমন খবর শুনে হুইপ ইকবালুর রহিম সাহেব আমার মেয়েকে একটি হুইল চেয়ার দিতে চাইলেন। চিকিৎসায় সাহায্য করতে চেয়েছেন। এজন্য আমি তাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।

সুমাইয়ার মা সুমি আক্তার বলেন, মেয়ের এইভাবে স্কুলে যাওয়া আর সহ্য করতে পারছি না। চোখে পানি চলে আসে।আল্লাহ উনার ভালো করুন। আমি স্বপ্ন দেখি, আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হবে।

মামুনুর রশিদ যিনি উত্তর আলোকডিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি সুমাইয়ার বিষয়ে জানান, সুমাইয়া পড়ালেখায় প্রচন্ড রকমের ভালো এবং তার আগ্রহ অনেক। আমি কখনো তাকে স্কুল ফাঁকি দিতে দেখিনি। সে প্রতিদিন এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে আসে। আমরা তার দুরবস্থা দেখছি, তার পরিবারের সামার্থ্য নেই চিকিৎসা করানোর। আমরা প্রত্যেকে চাই সুমাইয়া যেন একজন মানুষের মতো মানুষ হয়।

About bisso Jit

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *