ছেলে মেয়ের জন্য বাবা-মা হচ্ছে বট গাছের মত। শত দুঃখ কষ্ট বেদনা বাবা-মায়ের বুকে জড়িয়ে ভুলে থাকতে পারে সন্তানেরা। তবে সেই বাবা-মা যদি সন্তানের সুখের জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়? তাহলে সন্তানের পরিনতি হবে রজনী আক্তারের মত।
সাম্প্রতিক একটি ঘটনার জেরে নওগাঁয় হলফনামা দিয়ে বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন রজনী আক্তার (২১) নামে এক কলেজছাত্রী। সে বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার চাতানি মাতোপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম ও মৃত জুলেখা বানুর মেয়ে। রজনী সান্তাহার সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
রোববার নওগাঁ জজ আদালতের আইনজীবী হারুন অর রশিদ ও নোটারি পাবলিক মো. সোলায়মান আলী চৌধুরী স্বাক্ষরিত হলফনামায় ৩০০ টাকায় তার বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
হলফনামা অনুযায়ী, রজনী আক্তারের মা জুলেখা বানু ২০০৭ সালে মারা যান। তারা ৩ ভাই-বোন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। মায়ের মৃ/ ত্যুর পর ছোট বোন জান্নাতুনকে তার মামা লালন-পালন করছেন। ছোট ভাই বিজয় মুরগির খাবারের দোকানে থাকেন। আর বাবা জাহাঙ্গীর আলম আবার বিয়ে করে সংসার শুরু করছেন।
রজনী আক্তার যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ত তখন তার লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ বন্ধ করে দেন তার বাবা। প্রতিবেশীদের সাথে পড়াশোনা করে এসএসটি-তে জিপিএ-৫ পান। টিউশন দ্বারা আপনার নিজের খরচ পরিশোধ করুন. সে তার বাবাকেও সাহায্য করে। কিন্তু বাবার কাছে টাকার দাবি বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসী ছেলেদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার জন্য চাপ দেন। এতে রাজি না হওয়ায় তাকে শারীরিক ও মানসিক নি/ র্যাতন করা হয়।
এমতাবস্থায় ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর নওগাঁ সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা সৈকত আলী (৫৫) এর সঙ্গে রজনীকে দুই দিন একটি কক্ষে আটকে রাখে তার বাবা। এরপর গত ২৭ অক্টোবর দুই কিস্তিতে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে বৃদ্ধাকে জোর করে রজনী সাথে বিয়ে দেয় । বিয়ের পর বাবা জাহাঙ্গীর আলম তার জামাইয়ের কাছে কয়েকবার টাকা দাবি করেন। তার স্বামী তাকে গালিগালাজ ও মারধর করত। ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষাও দেননি।
রজনীর স্বামী সৈকত আলীর একাধিক বিয়ে রয়েছে। তার ছেলে মেয়ে আছে।
অন্যদিকে টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় রজনীর বাবা বেশ কয়েকজন ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় মেয়ের সংসার ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন। এমনকি গোপনে মেয়েটির ন/ গ্ন ছবি সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেইল করতে চায় লোভী বাবা।
এসবের মাঝে গত বছরের ৯ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় যান স্বামী সৈকত আলী। এরপর থেকে রজনী আক্তার তার মামার বাড়িতে থাকে। প্রায় একমাস হলো সৈকত আলী বাসায় এসেছে এবং রজনী আক্তারকে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু সে আর তার বৃদ্ধ স্বামীর সাথে থাকতে চায় না। একই সঙ্গে বাবার অত্যাচারে বিরক্ত হয়ে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
এ বিষয়ে রজনী আক্তারের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি আমার মেয়েকে কোনোভাবে নির্যাতন করিনি। টাকা দিয়েও প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে হয়নি। মেয়েটি নিজ থেকেই বিয়ে করেছে। গত চার মাস ধরে আমার মেয়ের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। এখন সে যদি হলফনামা করে আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাহলে আর কি করার।
রজনী আক্তারের স্বামী সৈকত আলী বলেন, ঘটককে আমার মেয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। বিয়ের জন্য এক লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া হয়েছিল। আমি বিদেশ যাওয়ার পর স্ত্রী রজনী চিকিৎসার নামে আক্তারের বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। দেশে এসেছি প্রায় এক মাস হয়ে গেল। স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ নেই। এখন স্ত্রী চাইলে তাকে মেনে নিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমি জানি মেয়েটির বাবা একজন প্রতারক।
এ ঘটনায় এখনো পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করা হয়নি। বাবার সাথে সম্পর্ক ছেদ করে এখন সে কিভাবে জীবন যাপন করছে সে বিষয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এ ঘটনায় ওই প্রতারক বাবার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অনেক নেটিজেন।