‘ছেলে হারানোর বেদনা কাউকে বোঝানো যাবে না। ছেলেটি এত ভালো ছিল যে সবাই তাকে নিয়ে ঈর্ষা করত। আমি যখন কিছু কেনার জন্য দোকানে যেতাম, সে সস্তা কিছু কিনতে বলতো। প্রয়োজন ছাড়া সে কোনো কিছু আবদার করতো না। কিন্তু সে যে সময় সবাইকে ছেড়ে চলে যায়, যাওয়ার আগে সে আমার কাছে কোর্ট-প্যান্ট, জুতা চেয়েছিল। বলেছিলে তার ঐ সকল জিনিসগুলো কিনবে, ব্যাঙ্কে যেন টাকা পাঠিয়ে দিই। কিন্তু সেই ভাগ্যে তার আর হয়নি। আমার জীবনে একটা বড় ধরনের আ’ক্ষে’প থেকে গেল, আমি তাকে তার চাওয়া সেই কোর্ট-প্যান্ট এবং জুতা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটা আর দিতে পারিনি। তিনি রোকেয়া খাতুন, একজন মা, যিনি তার ছেলেকে হারিয়েছেন। এই কয়েকদিন কান্নায় তার চোখের জল শুকিয়ে গেছে। কারণ তার মেধাবী ছেলের সেই প্রয়ানের দিনটা যে দরজায় ক’ড়া নাড়ছে! বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হ’/’ত্যার দুই বছর পূর্ণ হলো। এই ম’র্মা/’ন্তিক ঘটনাটি ২০১৯ সালে এই দিনে ঘটেছিল।
ওই দিন বুয়েটের ছাত্রাবাসে তাঁকে পিটিয়ে হ’/’ত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনার প্রায় এক বছর পর ২৫ জনের বিরু’দ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। অথচ সন্তান হ’/’ত্যার বিচার পেতে নিজের চাকরিটাও ছাড়তে হয়েছে বাবা বরকত উল্লাহর। এদিকে মা’/ম’/লাটির বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও এখনো তিন আ’/সা’/মি অধ’রা। তাঁরা হলেন মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। তাঁদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন আবরারের ছোট ভাই ফায়াজ। আদরের সন্তানকে হারিয়ে এখনো শো’কাতু’র আবরারের মা-বাবা।
স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আবরারের মা রোকেয়া খাতুন বলছিলেন, ‘সে খুব নাড়ু পছন্দ করত। সর্বশেষ যেদিন ঢাকায় যায়, সেদিনও তাকে নাড়ু বানিয়ে দিয়েছি। ফাহাদের পছন্দের কোনো খাবার এখন আর তৈরি করতে পারি না। মনে হয়, সে তো আর কোনো দিন আমার হাতের কিছু খাবে না। তখন কিছুই আর সহ্য হয় না।’
আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘মা’/ম’/লার বিচার শুরুর পর এক বছর কোনো কাজ করতে পারিনি। একটি বেসরকারি চাকরি করতাম, সেটাও ছেড়ে দিতে হয়েছে। নিজের জমানো টাকা থেকে এখন সংসার চালাতে হচ্ছে। এখন তো ছেলেকে আর ফিরে পাব না। তবে ছেলে হ’/’ত্যার বিচারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রথমে যে গতিতে মা’/ম’/লার বিচারকাজ শুরু হয়েছিল, বর্তমানে সেটা আর নেই। তাই দ্রুত এ মা’/ম’লার বিচারকাজ শেষ হোক সেই প্রত্যাশা করছি।’
আবরার ফাহাদের একমাত্র ছোট ভাই আবরার ফায়াজ বলেন, ‘ভাই চলার পথে আমার একমাত্র সঙ্গী ছিল। তার সঙ্গে আমার এতটাই সখ্য ছিল যে এখন তাকে ছাড়া কিছু করতে গেলেই সেটা করতে পারি না। যারা আমার ভাইকে নি’র্ম/’মভাবে হ’/’ত্যা করেছে, তাদের সবার ফাঁ’/সি চাই।’
মা’মলার হালচাল : ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় আবরার ফাহাদকে উদ্ধার করা হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃ’/’ত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরদিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থা’/নায় আবরারের বাবা হ’/’ত্যা মা’মলা করেন।
তদ’ন্তের পর ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ডিবি পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান যিনি ঐ মা/ম’লার তদ’ন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন তিনি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ২৫ জনকে আ’/সা’/মি করে ঐ অভিযুক্ত পত্র দাখিল কিরেছিলেন। তারপর গেল বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আদালত বিচারকার্য সম্পাদন করার জন্য আ’/সা’/মির খালাসের আবেদন সেটা খা’রিজ করে দেয় এবং মা’মলার বিচারের আদেশ দেয়। বিচারকার্য চলাকালীন, মা’ম/লার ৬০ জন সা’ক্ষীদের মধ্য হতে ৪৬ জন বিভিন্ন সময়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। যাইহোক, গত ৮ সেপ্টেম্বর, যেদিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়, ঐ দিন আদালত আবার আ’সা/মি যারা তাদের বিরু’দ্ধে অভিযোগ গঠন করে।