অল্প বয়সী মেয়েকে বিয়ে করে এবার বিপাকে পড়ে গেলেন যশোরের এক যুবক । এ ঘটনায় শুধু ওই যুবককে নয় তার সাথে বিপাকে পড়েছেন আরো অনেকে। বিয়ের পাঁচ দিন না যেতেই আইনের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলেন বর। ওই যুবকের দাবি ভুক্তাভেগি ও মেয়েকে সে বিয়ে করেছে তবে কন্যের পরিবার জানায় বিয়ে ছাড়াই এমন ঘটনা ঘটেছে। মেয়ের বাবার মুখে এমন কথা শুনে হতবাক হয়েছেন অনেকেই।
ঘটনা সুত্রে জানা যায় , যশোরের অভয়নগরে সাদা কাগজে স্বাক্ষরের পর এক স্কুলছাত্রীকে পাঁচ দিন ধরে ধ/ র্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। মামলার পর অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান ও তার সহযোগী রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হলে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পা বোস তাদের কারাগারে পাঠান।
গ্রেফতারকৃত হাফিজুর রহমান অভয়নগর উপজেলার বুইকারা জগবাবুর মোড়ের শাহ আলমের ছেলে এবং রুহুল আমিন একই এলাকার খোরশেদ আহমদের ছেলে। তিনি আল হেলাল ইসলামী একাডেমির শিক্ষক।
ভুক্তভেগির বাবা জানান, তার মেয়ে আল হেলাল ইসলামী একাডেমিতে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলে চাকরি করেন। হাফিজুর রহমানেরও স্ত্রী ও ৯ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। এরপর বেশ কিছুদিন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেন হাফিজুর। মেয়েটির বাবা রাজি হননি। এ কারণে হাফিজুর মাঝেমধ্যে মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করতো।
তিনি বলেন, গত ১৩ জুলাই হাফিজুরের খালা আমার বাসায় আসেন। তিনি হাফিজুরের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাবও দেন। যথারীতি আমি অনিচ্ছুক ছিলাম। রোকেয়া বলেন, এই মুহূর্তে হাফিজুরের সঙ্গে বিরোধের কোনো প্রয়োজন নেই। বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য তিনি আমাদের বাবা ও মেয়েকে হাফিজুরের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান।
এ সময় হাফিজুরের বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন বালিকা বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক রুহুল আমিন। তিনি মেয়ে এবং তার মাকে স্কুলের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করান। এরপর তিনি বলেন, হাফিজুরের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এখন থেকে মেয়েটি হাফিজুরের স্ত্রী। এ সময় মেয়েটির মা প্রতিবাদ করলে হাফিজুর ও তার সহযোগীরা তাকে হত্যার হুমকি দেয়। তারপর মেয়েকে রেখে মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
পাঁচ দিন পর ১৬ জুলাই রাত ১১টার দিকে অসুস্থ মেয়েটিকে বাড়ির সামনে রেখে যায় অভিযুক্তরা। এরপর মেয়েটিকে চিকিৎসা দিয়ে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়। নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে পুলিশ মঙ্গলবার সকালে হাফিজুর রহমান ও শিক্ষক রুহুল আমিনকে আটক করে। এদিন তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া মেয়েটি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
বিয়ের কথা স্বীকার করে হাফিজুর রহমান বলেন, উভয় পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছে। জোর করে বিয়ে করা হয়নি। পঞ্চম শ্রেণির মেয়ের বাল্যবিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলেননি।
আল হেলাল ইসলামিক একাডেমির ধর্মীয় শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, হাফিজুরসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। জীবন বাঁচাতে বাধ্য হলাম। তবে বিয়ে নিবন্ধন করা হয়নি।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম শামীম হাসান জানান, সোমবার মধ্যরাতে মামলার পর দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। পরে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বাল্যবিবাহ একটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধে শুধু বর বা কোনে দায়ি নয়। এই অপরাধের দায়ে উভয় পরিবারের সদস্যরাও। এর আগেও অনেক তরুণী বাল্যবিবাহের কারণে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রয়াত হয়েছেন। বাল্যবিবাহ সরকার কঠোর আইন তৈরি করলেও অনেকে গোপনে এমন ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ।