চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট করে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইতিমধ্যে ই-কমার্স সাইট কিউকম’র সিইও রিপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ সোমবার (০৪ অক্টোবর) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে এরই মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের নানা দুর্নীতির তথ্য সবার সামনে তুলে ধরে আজ দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেছেন, গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে দুই থেকে ১৫ দিনের মধ্যে অনেক কম দামে মোটরসাইকেল অফার করতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম। তাদের অফারের মধ্যে ছিল ‘বিজয় আওয়ার’ ‘স্বাধীনতা আওয়ার’ ‘বিগ বিলিয়ন’। তারা ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকার মোটরসাইকেল ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় অফার করতো। এই অফার পেয়ে ক্রেতারা নগদ টাকা পরিশোধের মাধ্যমে মোটরসাইকেল অর্ডার করতেন। কিন্তু সময়মতো কিউকম পণ্য সরবরাহ না করায় ক্রেতারা হতাশ হয়ে কিউকমে যোগাযোগ করেন। কিউকম লাভে টাকা ফেরত নেওয়ার অফার করলে ক্রেতারা লোভে পড়ে লাভের অংশ হতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমে কিউকমের দেওয়া টাকার চেক গ্রহণ করেন। এভাবে কিউকম গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।
তিনি আরো বলেন, করোনাকালে অনলাইনভিত্তিক ই-কমার্স ব্যবসার দ্রুত প্রসার ঘটায় কিউকম তাদের ব্যবসা শুরু করে। অনেক ক্রেতা কিউকমে মালামাল অর্ডার করে পণ্য না পেয়ে প্রতারিত হয়েছে। এক ভুক্তভোগী কিউকমে মালামাল অর্ডার করে পণ্য না পাওয়ায় তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৪ অক্টোবর পল্টন থানায় একটি মামলা করেন। গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ ওই মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুন মাসে Escrow System চালু করায় ক্রেতার টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত Payment Gateway এর মাধ্যমে চলে যায়। কিউকম এর Payment Gateway ছিল Foster। কিউকমে ক্রেতারা পণ্য অর্ডার করলে তাদের পেমেন্ট চলে যায় Foster এর নিকট। কিউকম ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে দিয়ে চালানসহ ডকুমেন্ট Foster এ জমা প্রদান করে। Foster ক্রেতাকে ফোন করে পণ্য বুঝে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর কিউকমকে টাকা প্রদান করে। ক্রেতা পণ্য বুঝে না পেলে Foster কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের Proof of Delivery এর নির্দেশনা মোতাবেক Foster কিউকমের টাকা আটকে দেয়। যার ফলে ক্রেতা পণ্য কিংবা টাকা কোনোটি পায় না।
ডিবি প্রধান আরও বলেন, কিউকম মোটরসাইকেলে ছাড় দেয়ার কারণ তাদের পরিচিতি বাড়ানো (Brand Merketing)। যেহেতু মোটরসাইকেলের চাহিদা অনেক বেশি এবং বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে, তাই এই পণ্যে তারা ছাড় দেয়।
এদিকে এর আগেও একই অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় ইভ্যালির পরিচলাক মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে। চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে হাজার হাজার মানুষকে রাস্তায় বসিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। এই মুহুর্তে আইনের হেজাফতেই রয়েছেন তারা।