আন্তর্জাতিক মহল ঐক্যফ্রন্টকে বিএনপি’র জোট থেকে সরে এসে নিজেদের মতো করে নতুন করে সা’জানোর প্রস্তাব দিয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের দূতাবাস নির্বাচনের পূর্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে নিজেদের দলকে একটি অন্যতম শক্তিশালী করে গঠন করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। কয়েকটি কূ’টনৈতিক সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারত একটি বিকল্প গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক মোর্চা হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে দাঁড় করানোর প্রস্তাব দিয়েছে এবং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচির পর্যায়ে এনে ধাপে ধাপে সংগঠিত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এর প্রথম এবং প্রধানতম কাজ হিসেবে যুক্তফ্রন্ট থেকে বিএনপিকে ছেড়ে আলাদাভাবে নিজেদের সংগঠিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কামাল হোসেনের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের সিনিয়র কমিটির বৈঠকে এমন একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি এবং ভারতের প্রতিনিধিরা কামাল হোসেনকে একটি অর্থবহ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে যুক্তফ্রন্ট গঠনের পরামর্শ দেন।
এ সমস্ত দেশের পরামর্শে যে মূল বিষয়টি এসেছে, তা হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিএনপিকে বাদ দিতে হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বাম দলসহ গণতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, তাদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
প্রায় তিন বছর আগে নাটকীয়ভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের শেষ প্রক্রিয়ায় অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দেওয়া হয়। এই ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল হলো বিএনপি। শুরুতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শর্ত ছিল, জামায়াতের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রাখবে না। কিন্তু বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়।
বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দহরম-মহরম কমছে না। বর্তমানে জামায়াতের কারণে ঐক্যফ্রন্টের বিএনপিতে কোনো মূল্য নেই। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে ২২ জন জামায়াতের প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে, যা ড. কামাল হোসেনকে বি’ব্র/তকর অবস্থার মধ্যে ফেলে। এরপর থেকেই ড. কামাল হোসেন বিএনপি থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন। এবার আন্তর্জাতিক মহল বিএনপি ছাড়ার পরামর্শ দিলো ড. কামাল হোসেনকে।
এক্ষেত্রে তারা যে যুক্তি দেখিয়েছে সেটা হলো, যেহেতু বিএনপি ধ’র্মনিরপেক্ষ রাজনীতির বিষয় থেকে সরে আসতে পারেনি এবং বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক বর্তমান সময়েও খুবই ঘনিষ্ঠ, তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপি ছাড়া ধ’র্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক জোট হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না। তাছাড়া গত দেড় দশক যাবৎ বিদেশি দূতাবাসগুলোর তরফ থেকে বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তিকে সামনে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন কূ’টনৈতিক মহল এটা ভাবছে যে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের মাঝে নতুন করে কিছু নীতিমালা প্রনয়ন এবং নিজেদের নতুন করে সাজানোর মাধ্যমে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।