Sunday , November 24 2024
Breaking News
Home / Entertainment / ৬৫০ সিনেমার অভিনেতা লাঠি ভর দিয়ে এফডিসিতে এসে জানালেন আফসোসের কথা

৬৫০ সিনেমার অভিনেতা লাঠি ভর দিয়ে এফডিসিতে এসে জানালেন আফসোসের কথা

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে চলামন রয়েছে নির্বাচনের তোড়জোড় যার উত্তাপ ছড়াচ্ছে সিনেমা পাড়ায়। সেখানে একজন বয়ষ্ক লোককে দেখা যাচ্ছে লাঠি হাতে ধীরে ধীরে চলতে। এই লোকটি সিনেমা পাড়ায় সকলের নিকট অনেক পরিচিত। তিনি আর কেউ নন বলা হচ্ছে এক সময়কার জনপ্রিয় অভিনেতা জামিলুর রহমান শাখা। তিনি এখন অনেকটা অসহায় জীবন যাপন করছেন।

তিনি কাছে যেতেই বললেন যে তার বয়স ৮০ বছর এবং বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এখনও অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে সিনেমায় নয় নাটকে। তাও কম। কারণ তিনি দোহার নবাবগঞ্জ এলাকার একটি গ্রামে থাকেন। দীর্ঘ যাত্রায় গাড়িতে করে শুটিংয়ে যাওয়া খুবই কষ্ট হয়।

এফডিসিতে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ অভিনেতা জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ সিনেমায় অভিনয় করলেও এখন ১১ হাজার টাকায় সংসার চালাতে হচ্ছে।

বাবা, বিচারক, কুলি, চাকর, শিক্ষক থেকে শুরু করে পর্দায় এমন কোনো ‘চরিত্র’ নেই যা তিনি করেননি! এই প্রবীন অভিনেতা তার ৪২ বছরের অভিনয় জীবনে ৬০০ এরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছে। তবে, আফসোসের বিষয় তাকে তার অভিনয় ক্যারিয়ারে একটি আফসোস তাড়া করে বেড়ায়। ‘কেন্দ্রীয় চরিত্রে’ অভিনয় করার সুযোগ পাননি এই প্রবীণ অভিনেতা।

এই অভিনেতা জানান, তিনি দোহার নবাবগঞ্জ এলাকার একটি গ্রামে থাকেন। সেখান থেকে চেক নিতে ঢাকায় এসেছিলেন। সেই সঙ্গে এফডিসিতেও ভোটের মেজাজ চলছে, তা জেনে তিনি বেড়াতে আসেন। বলছিলেন জ্যাম ঠেলে এফডিসিতে আসতে বেগ পোহাতে হয়ে তাকে।

ঢাকায় কেন থাকেন না জানতে চাইলে জামিলুর রহমান শাখা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, আমরা যখন ক্যারিয়ার শুরু করেছি তখন থেকে অনেক পরিচালক আর বেঁচে নেই। অনেক শিল্পীও চির দিনের জন্য চলে গেছেন। যারা আছে তারা সেভাবে কাজ করে না। তবে বেশিরভাগই ভালো আছেন। আমি গত ১৭ বছর ধরে গ্রামে বাস করছি। পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকার সামর্থ্য নেই। এমন বাড়ি ভাড়া দিয়ে সংসার করা সম্ভব নয়। আমার দুই ছেলে মেয়ে আছে। মেয়ে ঢাকায় পড়াশোনা করে। ছেলে বাইরে চাকরি করে। সপ্তাহে একবার বাড়ি আসে।

এই বয়সে আমার ঢাকায় থাকাটা আমার জন্য জরুরী নয়। সিনেমায় এখন তেমন কাজ নেই। কিছু নাটকে কাজ করছি। শুটিংয়ের দিন আসি। জীবনে ৬৫০টি সিনেমায় অভিনয় করলেও কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করতে পারিনি। আমি এটাকে আমার অক্ষমতা মনে করি। কিন্তু আমি হিরো হওয়ার চেষ্টা করিনি। কিন্তু বলা হয়েছিল শাবানার স্টার কাস্ট লাগবে। সেটিতে শেষ পর্যন্ত আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটাকে আমি আমার নিজের ব্যর্থতাই বলব। আমি যোগ্য হলে অন্তত একবার সুযোগ পেতাম।

২০১৯ সাল নাগাদ জামিলুর রহমান শাখা চরম আর্থিক সংকটে ভুগছিল। অভিনেতা জানান, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপর থেকে ওই টাকার ওপর নির্ভরশীল তার পরিবার।

জামিলুর রহমান শাখা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছি। সেখান থেকে মাসে আট হাজার টাকা পাই। আমার মেয়ে মাসে ৩০০০ টাকা দেয়। এই এগারো হাজার টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। এভাবেই সংসার চলে। অভিনয় সেভাবে করা হয় না। গাড়িতে চড়ে দূর যাত্রায় শুটিংয়ে যেতে সবচেয়ে কষ্ট হয়। তাই দূরে শুটিং হলে করি না।

তবে, আঞ্জুমান, মাঝির ছেলে ব্যারিস্টার, হৃদয় কথা, খায়রুন সুন্দরী, সত্যের মৃত্যু নেই, প্রেম পিয়াসী, আমার প্রাণের স্বামীর মতো জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে ছোট চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত জৈষ্ঠ্য এই অভিনেতা বলেছেন যে, তিনি তার জীবনে আর কিছু চান না। তিনি বলেন, আমাকে সব ধরনের চরিত্র দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় চরিত্র ও নায়ক ছাড়া আর কোনো চরিত্র আছে কিনা জানা নেই যেটা আমি করিনি।

এই বৃদ্ধ অভিনেতা জানালেন জীবনের সবচেয়ে বেশি যে সিনেমাটির কথা মনে পড়ে সেটি হল ”রাজধানী” নামক সিনেমা। আমি বেশ কিছু ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছি। একদিন জসিম ভাই আমাকে তার বুকে সত্যি সত্যি ঘুষি মা”রতে বলেন। তখন আমি তার বুকে সত্যি সত্যি ঘুষি দিয়েছিলাম। এই ঘটনাটি এখনো আমার মনে অমলিন হয়ে রয়েছে। বেশিরভাগ সময় তার সেই ঘটনাটি আমার খুব মনে পড়ে।

About bisso Jit

Check Also

আপত্তিকর সেই ভিডিও নিয়ে মুখ খুললেন তিশা (ভিডিও)

সম্প্রতি ঢাকার দোহার উপজেলার এক জমিদার বাড়িতে নাটকের শুটিং চলাকালীন ঘটে বিব্রতকর একটি ঘটনা। ‘প্রেমিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *