শোবিজ অঙ্গনের পরিচিত চেনা মুখ অপর্ণা ঘোষ। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনে কাজ করেছেন। তিনি অভিনয় করেছেন বেশ কিছু নাটক এবং বিজ্ঞাপনে। এছাড়াও অভিনয় করেছেন বেশ কিছু সিনেমায়। সম্প্রতি তার বর্তমান কর্মব্যস্ততা প্রসঙ্গে কথা হয়েছে তার সঙ্গে। এতে করে প্রকাশ্যে এসেছে বেশ কিছু অজানা কথা এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী সম্পর্কে। সিনেমা নাটক দুই মাধ্যমেই সমান ব্যস্ত জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ।
সাম্প্রতিক ব্যস্ততা কি নিয়ে?
সম্প্রতি একটি এনজিওর একটা কাজ করে আসলাম বগুড়া থেকে। নারী উন্নয়নমূলক কাজ। নব্বই দশকে নারীরা যে গ্রামে গ্রামে নারী শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করেছেন সেটা নিয়ে। এর বাইরে ধারাবাহিক নাটক ‘বিবাহ হবে’র কাজ করছি। সম্প্রতি ‘মেহমান’ নামের আরেকটি ধারাবাহিকে কাজ করেছি। দুটোই বাংলাভিশনে প্রচারিত হচ্ছে।
‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’ সিনেমায় কাজ করছেন, অভিজ্ঞতা কেমন?
‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’য় কাজ করছি। শুটিং এখনো শেষ হয় নাই। কখন শেষ করতে পারবে বলতে পারছি না। কারণ এই ছবির শুটিংয়ের জন্য নদী লাগে। সব মিলিয়ে আবার শুট শুরু করতে হয়তো নভেম্বর নাগাদ লেগে যাবে। এটা ১৯৭১ সালের একটা হিন্দু পরিবারের গল্পকে ঘিরে। ওই সময়ে ওদের লাইফের ক্রাইসিস ও সিচুয়েশনটা গল্পে তুলে ধরা হয়েছে।
পরপর তিনটি মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় কাজ করেছেন। তো মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় কাজ করতে আমার অনেক ভালো লাগে। আমি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী মানুষ। আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখি নাই। তবে আমার অভিজ্ঞতা এসেছে আমার পরিবার থেকে। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমার নানীর কাছ থেকে গল্প শুনেছি। তো দেখা যাচ্ছে, এই গল্পগুলো শুনতে শুনতেই মাথার ভেতর একটা প্রেক্ষাপট কাজ করে। একটা দৃশ্য আমি দেখতে পাই। আর যখন সিনেমাগুলো করতে যাই তখন ওইগুলা অ্যাপ্লাই করার চেষ্টা করি। যতবার মুক্তিযুদ্ধের গল্প আসবে ততবারই করব। কারণ আমার কাছে মনে হয় যে শুটিংয়ের সময় আমি ওই সময়ের একটা পার্ট হয়ে যাই।
নাটক ও সিনেমায় সমানতালেই কাজ করছেন। কোন মাধ্যমে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
আমি নাটক সিনেমা সব মাধ্যমেই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কারণ আমি অভিনেত্রী। আমার কোনোটাতেই না বলার কথা না। কারণ আমার কাছে গল্প, ডিরেক্টর কে, কো আর্টিস্ট কে— সেটাই প্রধান হওয়ার কথা। আমি কোন মাধ্যমে কাজ করলাম সেটা মুখ্য নয়। সেটা টিভির জন্য হতে পারে, সিনেমার জন্য হতে পারে, ওয়েবের জন্য হতে পারে। একটা নির্দিষ্ট মাধ্যমে কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি সেটা বলা যায় না। আর যারা অভিনয় করে তারা পারফেক্ট মাধ্যম বলতে পারে না— একটা নাটক দেখেও আপনার মনে দাগ কাটতে পারে, একটা সিনেমায় আপনার অভিনয় দেখেও দাগ কাটতে পারে। সেটা গল্পের উপর নির্ভর করছে। একটা নাটকের খুব ভালো গল্প, সেটাতে অভিনয় করলেন সেটা কিন্তু মানুষ বছরের পর বছর মনে রাখবে, সুবর্ণা আপাদের মানুষ মনে রাখছে না! আবার সিনেমার মতো বড় পরিসরে কাজ করলেন কিন্তু কাজটা খারাপ করলেন কোনো গল্প নাই, মনে রাখার মতো কিছু নাই একটু রঙঢঙ করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু মানুষ মনে রাখবে না। আবার ভালো গল্পের একটা সিনেমা করলেই মানুষ বছরের পর বছর আপনাকে মনে রাখবে। অনেকেই আছেন সিনেমায় কাজ করেও কারও মনে জায়গা করতে পারেননি আবার অনেকে নাটকে কাজ করেও মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। ফলে মাধ্যম নয়, ডিপেন্ড করে কাজের মানের উপর।
নারী হিসেবে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেছেন?
আমার কখনোই এই ফিল হয়নি যে প্রতিবন্ধকতার কারণে এই পেশায় না আসলেই ভাল হতো। আর নারী হিসেবেও আমি ওই ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা ফেস করিনি। আমাকে কেউ হেয় করে দেখছে বা ছেলে কলিগরা অন্যভাবে দেখছে— এটা আমার ক্ষেত্রে ঘটেনি।
নিজের পছন্দের কাজ
আমি যখন কাজ দেখতে বসি তখন আমার কোনো কাজই পছন্দ হয় না। কোনো অভিনেতায় সে ভাবে বলতে পারবে না যে আমি ওই কাজ করে তৃপ্ত। আমার এই ক্যারেক্টারটা নিয়ে কিছু করার ছিল না। সেটা আমি বলতে পারব না। আমি আমার প্রতিটি কাজ নিয়েই অতৃপ্ত। তবে আমার কিছু কাজ আছে যেগুলো আমার প্রিয়। দেখতে বসলে আমি বারবার করে দেখি। সেটা হচ্ছে ভূবন মাঝি, মেঘমাল্লার– মানে এই সিনেমা দুটো যতবার দেখতে বসি কখনোই আমি বোর ফিল করি না।
সংসার জীবন কেমন কাটছে?
সংসার জীবন খুবই ভালো কাটছে। ও যদিও দেশে নেই। জাপান থাকে। আমি ঢাকায়— কাজের জন্য এখানেই আছি। মাঝে মাঝে চিটাগাং যাই। শ্বশুর শাশুড়ির সঙ্গে সময় কাটিয়ে আবার চলে আসি। এভাবেই চলছে সংসার জীবন।
উল্লেখ্য, অপর্ণা ঘোষ ২০০৯ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালিত “থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। এরপর তিনি বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তিনি তার নিপুন অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে অর্জন করেছেন ব্যপক সফলতা এবং সম্মাননা। এবং তরা রয়েছে অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী।